Dr. Neem on Daraz
Victory Day

যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটে পদ আছে জনবল নেই


আগামী নিউজ | বিল্লাল হোসেন, যশোর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১, ০৭:২৮ পিএম
যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটে পদ আছে জনবল নেই

আগামী নিউজ

যশোরঃ ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর নিজস্ব জনবল ছাড়াই যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটের উদ্বোধন হয়।  আর কার্যক্রম চালু হয় ২০০৯ সালের ১২ জুলাই। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জনবল দিয়েই শুরু হয় চিকিৎসা কার্যক্রম।

২০২০ সালে ১২ জন চিকিৎসক, ১ জন নার্সিং সুপারভাইজার, ১২ জন সেবিকা ও ২ জন কার্ডিওগ্রাফারের  নতুন পদ সৃষ্টি হয়। মোট ২৭ পদের বিপরীতে মাত্র তিন জন যোগদান করেছেন। এরমধ্যে দুই জন চিকিৎসক ও ১ জন কার্ডিওগ্রাফার রয়েছেন।

বাকি ৩৪ পদে জনবল পাচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও করোনারি কেয়ার ইউনিটের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে আছে। মাত্র ১টি ইকো ও ১টি ইসিজি মেশিন সচল থাকলেও ঠিকমতো সুবিধা পান না রোগীরা। বর্তমানে এখানে নামমাত্র চিকিৎসাসেবা চলছে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত জনবল, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ না পেলে কোনভাবেই পূর্ণাঙ্গভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান অসম্ভব।  

জানা গেছে, ২০০৫ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর ২৫০ শয্যা  জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে করোনারি কেয়ার ইউনিটের তিনতলা ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। পরে ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও বন্ধ ছিলো চিকিৎসা কার্যক্রম। পরে পর্যায়ক্রমে ইকোকার্ডিও গ্রাম, ইটিটি, কার্ডিওয়াক মনিটর, কালার ডপলার, ডিজিটাল ইসিজি মেশিন প্রভৃতি বরাদ্দ মেলে। কিন্তু ছিলোনা কোন জনবল।  ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ২৪ জন চিকিৎসক ৫৬ জন নার্স ও ১৪৩ জন কর্মচারী নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে। কিন্তু কয়েক দফায় ইউনিটটি চালুর সময় পিছিয়ে যায়। শেষমেষ নানা সংকটের মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়। আজও কাটেনি কোন সংকট।

সূত্র জানায়, করোনারি কেয়ার ইউনিটে ২৮টি বেডে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ সে অনুযায়ী প্রত্যেক রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক ও ২ জন সেবিকা থাকার কথা। তবে বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এখনো পর্যন্ত নিজস্ব জনবল নেই বললেই চলে। যশোর মেডিকেল কলেজ ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সেবিকা ও কর্মচারী দিয়ে হয় সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম। ১২ পদের বিপরীতে মাত্র দুই জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। তারা হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফজলুল হক খালিদ ও সহকারি রেজিস্ট্রার ডা. শরিফুল ইসলাম।

এছাড়া এখানে অভিজ্ঞ তিনজন চিকিৎসক নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন সহকারী অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার পোদ্দার, কাজল কান্তি দাঁ ও সিনিয়র কনসালটেন্ট তৌহিদুল ইসলাম। কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাবে তারা রোগীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্রে সুস্থ না হলে রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করে দিচ্ছেন তারা।

একাধিক রোগী ও স্বজনরা জানান, সকালে চিকিৎসকরা রাউন্ডে আসেন। কিন্তু বিকেলের পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলে না। আর জরুরী বিভাগে সহকারী রেজিস্ট্রারের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক। জোড়াতালি দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চিকিৎসাধীন রোগীদের কিছু ওষুধ বিতরণ ও  প্রেসার মেপে দায়িত্ব শেষ করেন সেবিকারা।

কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না করোনারি কেয়ার ইউনিটে। একটি মাত্র  ইসিজি মেশিন সচল থাকায় ঠিকমতো কার্যক্রম চালানো হয় না। বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে লোক ভাড়া করে ইসিজি করতে হয় অধিকাংশ সময়। তবে কোনো রোগী মারা গেলে ইসিজির অপেক্ষায় অপেক্ষার পালা শুরু হয় স্বজনদের। কেন না ইসিজি রিপোর্ট না দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীর মৃত্যু ঘোষণা করেন না।

সূত্র জানায়, এখানে ইকো মেশিন, ইটিটি মেশিন, কার্ডিয়াক মনিটর, কালার ডপলার মেশিন বছরের পর বছর অকেজো অবস্থায় ওয়ার্ড ইনচার্জের স্টোরে পড়ে রয়েছে। কয়েক মাস ধরে ৫টি ইসিজি মেশিনও নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হার্টজনিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীরা ক্লিনিকে ছুটছেন। রোগীর স্বজনেরা বলছেন, সরকারি এ চিকিৎসা কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাতে পেরে দক্ষ প্যাথলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের সেবা থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। আবার যন্ত্রপাতির অভাবে উন্নক চিকিৎসা পাচ্ছেন না হৃদরোগে আক্রান্তরা। এদিকে, করোনারি কেয়ার ইউনিট ২৮ শয্যার হলেও সব সময় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে ৬১ জন নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোগীর স্বজনদের ভাষ্যমতে, করোনারি কেয়ার ইউনিট নামে তালপুকুর বাস্তবে ঘটি ডোবে না। প্রয়োজনের সময় চিকিৎসক ডেকেও পাওয়া যায় না। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাইরে থেকে করতে হচ্ছে। অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। রোগী অবস্থা একটু খারাপ হলেই অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্য দিয়ে। রোগীর স্বজনরা আরো জানান, যশোর অঞ্চলে হৃদরোগে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীকে যশোর করোনারি কেয়ার ইউনিটে আনা হয়  উন্নত চিকিৎসার জন্য। তাদের প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে রোগীর সংকটাপন্ন মুহূর্তে অক্সিজেন, ভেনটিলেশন ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনসহ উন্নত সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি তাদের।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, সর্বশেষ ৭৮ জন জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। এরমধ্যে চিকিৎসকের পদ ছিলো ২০ টি, সেবিকার পদ ছিলো ৩০ টি ও ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ ছিলো ২৮ টি। কিন্তু ২০২০ সালে ২৮ জনের পদের অনুমোদন মেলে। এরমধ্যে ১২ জন চিকিৎসক, ১ জন নার্সিং সুপারভাইজার, ১২ জন সেবিকা ও ২ জন কার্ডিওগ্রাফার।

চিকিৎসকের পদে রয়েছেন কার্ডিওলজি বিভাগের  সিনিয়র কনসালটেন্ট ১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১ জন, আবাসিক চিকিৎসক ১ জন,  সহকারী রেজিস্ট্রার ১ জন, সহকারী সার্জন ও মেডিকেল অফিসার ৬ জন ও ইমাজেন্সি মেডিকেল অফিসার ২ জন। এরমধ্যে ১ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ১ জন সহকারী রেজিস্ট্রার ও ১ জন রেডিওগ্রাফার যোগদান করেছেন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। পদ পূরণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

আরএমও আরো জানান, এখানে মাত্র ১ টি ইকো মেশিন ও ১ টি ইসিজি মেশিন সচল আছে। এছাড়া সকল যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আগামীনিউজ/এএস
 
আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে