Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‘ট্রাকে উঠে নৌকার তলা ফুটার চেষ্টা করলে পরিণাম হবে ভয়াবহ’


আগামী নিউজ | পাবনা জেলা, প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৭:৪২ এএম
‘ট্রাকে উঠে নৌকার তলা ফুটার চেষ্টা করলে পরিণাম হবে ভয়াবহ’

পাবনাঃ ‘বিএনপির ভাইরা, আপনারা আপনাদের নেতার কথা মানেন, ভোটবর্জন করেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের আহবান জানিয়েছেন। আপনারা ভোট দিতে আসেন, আমরা সাদর আমন্ত্রণ জানাবো, সাধুবাদ জানাবো। তবে ট্রাকে উঠে যদি নৌকার তলা ফুটা করার চেষ্টা করেন, তাহলে এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হবে।’


এভাবেই বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের হুমকি ও উষ্কানীমুলক বক্তব্য দিয়েছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম।

গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামে নৌকা প্রতীকের পক্ষে এক নির্বাচনী পথসভায় এ বক্তব্য রাখেন তিনি। তার এই বক্তব্য নিজের ফেসবুক ওয়ালে লাইভ করেছেন নজরুল ইসলাম। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ওই পথসভায় নৌকার প্রার্থী মোঃ মকবুল হোসেন, চাটমোহর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক সহ উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মি ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।  

পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তিনবারের সাংসদ মকবুল হোসেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল হামিদ মাস্টার।

জনপ্রিয়তার কারণে বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের একটি বড় অংশের ভোট পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ট্রাক প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টারের বাক্সে। আর এ নিয়ে উদ্বিগ্ন আওয়ামীলীগ নেতারা। এমন আভাসই মিলেছে ওই আসনের ভোটারদের কাছ থেকে।

তাই গত ২৯ ডিসেম্বর দোলং গ্রামে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী পথসভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের নেতা তাকের রহমান ভোটবর্জনের ডাক দিয়েছেন। এ অঞ্চলের বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম নিজেও এলাকায় ভোটবর্জনের হ্যান্ডবিল বিলি করেছেন। বিএনপির ভাই ভাইস্তেদের উদ্দেশ্যে বলি, যদি আপনারা আপনাদের নেতার কথা মানেন তাহলে ভোট কেন্দ্রে না গেলেই ভালো। যদি কেন্দ্রে যান তাহলে রামনগরের বুথ আর দোলং এর বুথ আলাদা করে দেবো। এই ভোট গুনে নেবো, বুঝে নেবো। আমার বাম পাশে ট্রাকের (স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিক) অফিস ছিল। আপনারা দোলংবাসী ট্রাকওয়ালাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অফিস আর এখানে নাই। আর কোনো সমস্যা আছে? নাই। তাইলে এখন সমস্যা হলো আমাদের বিএনপির ভাইরা।’

উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম বিএনপি নেতাকর্মীদের হুশিয়ারি করে বলেন, ‘বিএনপির ভাইরা আপনারা আপনাদের নেতার কথা মানেন, ভোটবর্জন করেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের আহবান জানিয়েছেন। আপনারা ভোট দিতে আসেন, আমরা সাদর আমন্ত্রণ জানাবো, সাধুবাদ জানাবো। তবে ট্রাকে উঠে যদি নৌকার তলা ফুটা করার চেষ্টা করেন, তাহলে এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হবে। আপনারা আসলে নৌকায় ভোট দিবেন, না আসলে আরো ভাল। কারণ আপনারা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক নেতা হবেন না, আপনারা এমপি বা চেয়ারম্যান হবেন না। আপনারা মন্ত্রী হবেন  না, প্রধানমন্ত্রী হবেন না। আপনি গ্রামের মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, আমি আপনি ভাই ভাই, মিলেমিশে থাকতে চাই।’

স্থানীয় ভোটারদের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘১৫ বছর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়। আপনারা পুলিশের তাড়া খাচ্ছেন না। আগুন সন্ত্রাস করার পরও বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন। সবাই আমরা মিলেমিলে একাকার হয়ে থাকি। শেখ হাসিনা উন্নয়ন করছেন। ৫ বছর পর পর প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাছে একটি ভোট চান। এটা দিতে কি আমাদের আপত্তি আছে? নাই।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। যারা ট্রাক ট্রাক (স্বতন্ত্র প্রার্থী) করছেন, তারা ৭ তারিখে ট্রাকে ভোট দিলে কি প্রধানমন্ত্রী বদল হবে? বদল হবে না। তাই ট্রাক সহ এলাকার মানুষদের আমি বলি, যে সমস্ত বিএনপির ভাইস্তে, ভাই, কাকারা আছেন তাদের বলি, বাংলার প্রধানমন্ত্রী কিন্তু শেখ হাসিনাই থাকবেন। তাই আমার চেয়ে আপনারা কম বোঝেন না। দেখে শুনে বুঝে যেটা ভাল মনে করেন সেটা করবেন। যদি খারাপ কিছু করেন, তাহলে ধৈর্য্য সহ্যের একটা সীমা আছে। আমাদের সেই সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে তাহলে আপনাদের পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হবে।’

তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা এখানে মজমা দেন শুনি, চাটমোহরে চা স্টলে মজমা দেন শুনি। কথা তো সব বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। এই রাস্তা দিয়ে আমি দিনরাত ৪ থেকে ৬ বার যাতায়াত করি। কে কি করেন, না করেন, কে কোথায় পা ফেলেন, এগুলো আমি জানি। আমার সাথে আপনার ব্যক্তিগত হিংসা, শত্রæতা, রাগারাগি থাকতে পারে, কিন্তু নৌকার সাথে তো আর রাগারাগি নাই। আসুন আমরা নৌকার প্রশ্নে এক হই। যে যতই প্রলোভন দিক, সেই ফাঁদে পা দেবো না।’

ভোটারদের আহবান জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একবার প্রলোভনে পড়ে, ধোকা খেয়ে নৌকা ছেড়ে ঘোড়াকে ভোট দিয়ে তাকে (স্বতন্ত্র প্রার্থী) উপজেলা চেয়ারম্যান করেছিলাম। কিছু কি পেয়েছিলাম? আমরা কিছুই পাইনি। আবার যদি সেই ধোকায় পড়ে কিছু করি, তাহলে এবার পরিণাম খুব একটা ভাল হবে না। তাই যে যেখানে আছেন, নৌকায় ভোট দেন, নৌকার ভোট চান। নৌকাকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিবেন।’

 

এসআর/এমআইসি 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে