Dr. Neem on Daraz
Victory Day
মন গলে না পাচারকারী হোটেল মালিকদের 

নারীদের আকুতি চার দেয়ালে গুমরে কাঁদে


আগামী নিউজ | আরিফুর রহমান প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২০, ১১:৫২ এএম
নারীদের আকুতি চার দেয়ালে গুমরে কাঁদে

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: আরব আমিরাতের দুবাই শহরে চারটি তারকা হোটেলের মালিক। এর মধ্যে তিনটি হোটেল চার তারকা, একটি হোটেল তিন তারকা মানের। এরপরেও তিনি নারী পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন। গত আট বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে সহস্রাধিক নারীকে তিনি পাচার করেছেন দুবাইতে। এমনই এক নারী পাচারকারী চক্রের গডফাদার আজম খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেশটিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এসময় তার দুই সহযোগী আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড এবং আনোয়ার হোসেন ময়নাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

আজম খানের মালিকানাধীন হোটেলগুলো হলো, ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড এবং হোটেল  সিটি টাওয়ার। এই হোটেলগুলোতেই ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের দুবাইয়ে নিয়ে যেত চক্রটি। বাংলাদেশে ৫০ জনের মত দালালের (ট্রাভেল এজেন্সী) সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এই নারী পাচারকারী গডফাদারের সঙ্গে। তিনি এসব দালালদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অল্প বয়সী নারীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাত। তাদের বলা হতো, দুবাইয়ের এই হোটেলগুলোতে রিসিপশনিস্টসহ বিভিন্ন ভালো কাজ দেয়া হবে। আর বেতন হবে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

অন্যরা যেখানে বিদেশ যেতে হলে এজেন্সিগুলোকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়, আর এই প্রতারক চক্র উল্টো এসব নারীদেরকে ২০ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা দিত। পাশাপাশি বিশেষ কিছু বিমানে করে তাদের দুবাই নেয়া হতো।

সেখানে নিয়ে গিয়ে এক পর্যায়ে তাদেরকে তারা ড্যান্স বারে নাচার জন্য বলা হতো। কোন কোন সময়ে তাদের হোটেলে ওই তরুণীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। নারীরা রাজি না হলে তাদেরকে খেতে না দিয়ে মারধর করা, আবার কোন কোন সময়ে তাদেরকে বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হতো। কিন্তু চক্রটি ভিকটিমদের কোনো টাকা পয়সাই দিতো না।   

সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজম খানের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। দুবাইয়ে তার সঙ্গে দুই ভাইও যুক্ত আছেন।এ ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের চক্রও যুক্ত রয়েছে তার সঙ্গে। আজমের বিরুদ্ধে দেশে ছয়টি হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। কিছুদিন আগে দুবাই সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজম খানের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আজম খান দেশে এসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

দুবাইয়ে নারী পাচারকারীরা আটক

এদিকে, আজম খানের টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার কিছু নারীর অডিও ক্লিপ হাতে পেয়েছে আগামীনিউজ। অডিও ক্লিপগুলোতে শুনা যায় তাদের দেশে ফেরার আর্তনাদ।

এক নারী আজম খানকে ভয়েজ মেসেজ দিয়ে বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে আপনাকে এই মেসেজ দিচ্ছি। আপনি সেখানে আমাকে পাঠিয়েছেন, ওয়েটারের কথা বলে। বলেছেন তুমি সেখানে গিয়ে খাবার সার্ভ করবা আর মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন নিবা। কিন্তু সাত মাসেও আপনি আমাকে কোন টাকা দেননি। উল্টো আপনার লোকজন আমাদের খাবার বন্ধ করে দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, হাত কেটে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমি নিরুপায় হয়ে অ্যাম্বাসিতে ফোন দিয়ে দেশে ফিরে আসি। এখন আমার বাবা স্ট্রোক করছে। আপনি আমার আয়ের অংশের কিছু টাকা হলেও দেন। আমি আমার বাবার চিকিৎসা করিয়ে তাকে বাঁচাই।

আরেক তরুণীর দেশে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়িতে আমার মা অনেক অসুস্থ, বুঝছেন! সেদিন ফোন দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করছিল। আমিও কান্নাকাটি করেছি। আমার যদি তিন মাস হয়ে যায়, তাহলে আর ভিসা বাড়ানো লাগবে না। আমাকে বাড়িতে যাইতে হবে জরুরি। আমার মাকে আমি ছাড়া দেখার কেউ নেই। প্লিজ ভাইয়া! আপনার পায়ে ধরি। আমাকে এই উপকারটা করেন। প্লিজ! আমি আর কিছু চাই না। আমার মা ভীষণ অসুস্থ, কথা বলতে পারে না।

আরেক তরুণীকে বলতে শোনা যায়, আমি তো স্বপন ভাইকে বলে আসছিলাম, তিন মাসের জন্য। তাই তিন মাসের জন্য আমাকে পাঠাইছে। আমার ভিসা শেষ হয়ে গেছে। আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেন। কবে পাঠাবেন? দেশে চলে যাব।

এদিকে, সিআইডির মিডিয়া উইংয়ের এএসপি জিসানুল হক আগামীনিউজকে বলেন, সোমবার (১৩ জুলাই) কোর্টে আজম খান ও তার সহযোগী আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এ চক্রের সাথে জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে সিআইডি তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আগামীনিউজ/এআর/এমআর 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে