Dr. Neem on Daraz
Victory Day

দীপাবলীর ভূত পূর্ব কথা


আগামী নিউজ | মিথুন মুৎসুদ্দী প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২০, ০৫:০২ পিএম
দীপাবলীর ভূত পূর্ব কথা

সংগৃহীত ছবি

দুর্গাপুজোর পরই লক্ষ্মীপুজো। আর সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আলোর রোশনাইয়ের উৎসব দীপাবলী (দিওয়ালী)। বাংলায় কালীপুজোর রাতে অন্ধকারের গ্রাস সরিয়ে ঘরে ঘরে দীপ জ্বেলে দীপাবলী পালনের রীতি প্রচলিত। আর সেই রাতের আগের দিন পালিত হয় ভূত চতুর্দশী।

দীপাবলি হিন্দু এবং কিছু সংখ্যক শিখ সম্প্রদায় যুগের পর যুগ পালন করে আসছে। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়।

শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ দুনিয়ায় আগমন করেন বলে কল্পিত হয়, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়।

কার্তিকী অমাবস্যায় এই উৎসব উপলক্ষে কালীপূজা, কোন কোন স্থানে লক্ষ্মীপূজাও হয় এবং লক্ষীকে স্বাগতম ও অলক্ষীকে বিদায় করার জন্যও দ্বীপ জ্বালানো হয়।

রামায়ন অনুসারে আজকের দিনে ত্রেতা যুগে শ্রী রাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রী রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্য জুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশিতে শব্দবাজি করে। অনেকে মনে করেন দীপাবলীর আলোকসজ্জা এবং শব্দবাজি ত্রেতাযুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই অন্যসব অঞ্চলে প্রচলিত হয়েছে, পরিচিত হয়েছে, বিস্তৃত হয়েছে।

বুদ্ধ গৃহত্যাগ স্মরণে বৌদ্ধরা এ সময়ে উৎসব করে।

আবার জৈন মহাবীরের নির্বাণ দিবস উপলক্ষে অমাবস্যার আগের দিন চতুর্থী তিথিতে জৈনরা আলোকসজ্জা করে। জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ৫২৭ অব্দে আজকেই এই দিনে মোক্ষ (নির্বাণ) লাভ করেন।

সনাতন ধর্মের ভগবান তথা ঈশ্বর, কৃষ্ণ কর্তৃক নরকাসুর বধের স্মারক হিসেবে একে নরকচতুর্দশী বলা হয়। সে আনন্দে আলোক উৎসব করা হয়।

এই দিনে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দ জী অমৃতসরে ফিরে আসেন; সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বায়ান্ন হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে- তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে শিখগণ পালন করেন; তারা এই দিনকে ‘বন্দী ছোড় দিবস’ও বলেন।

ভূত চতুর্দশী ও ১৪ শাক মূলত, ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাক ও ১৪ টি প্রদীপ প্রতিটি বাঙালি ঘরেই জ্বালানো হয়। আর এর নেপথ্যে রয়েছে বহু আচার বিচার। তবে তার আগে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ১৪ টি শাক ভূত চতুর্দশীতে খাওয়া হয়। যে ১৪ টি শাক খেয়ে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়, সেই ১৪ শাকের নাম হল, ওল , কেঁউ, বেতো , সর্ষে, কালকাসুন্দে, জয়ন্তী , নিম,হেলঞ্চা, শাঞ্চে, পলতা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা, শুলফা, শুষণী শাক। এই শাক খেয়ে সন্ধ্যেবেলায় ১৪ টি প্রদীপ দিয়ে অন্ধকার বিতাড়নের পূর্বরীতি প্রচলিত রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে। মনে করা হয় , ভূত চতুর্দশীর দিনটিকে ১৪ পুরুষের জন্য উৎসর্গ করা হয়। পূর্বপুরুষরা এমন দিনে মর্ত্যে আসেন বলে বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। প্রচলিত ধ্যানধারণা বলছে, এই ১৪ পুরুষ , জল, মাটি, বাতাস, অগ্নির সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে রয়েছেন। আর তার জন্যই মাটির কোলে থাকা ১৪ টি বিশেষ শাক খেয়ে এদিন দিনটি ১৪ পুরুষের জন্য উৎসর্গ করা হয়।

মূলত, পূর্বপুরুষ বা পূর্বের ১৪ পুরুষের জন্য ভূত চতুর্দশীর দিনটিকে উৎসর্গ করা হয়। আর তাঁদের উদ্দেশেই ১৪টি প্রদীপ সারা ঘরে দেওয়া হয়। অনেকেই এই দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীর আবাহন করে দুরাত্মাকে ঘর ছাড়া করার পুজো করেন।

কথিত রয়েছে, যে জল দিয়ে ১৪ শাক ধোয়া হয়, সেই জলকে ঘরের বিভিন্ন দিকে ছিটিয়ে দিলে দুরাত্মা দূর হয়। এর ফলে বহু বাধা বিঘ্ন কেটে ঘরে শান্তি বিরাজ করে। আসে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি।

আগামীনিউজ/মিথুন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে