-20231021173355.jpg) 
                            
                                                ঢাকাঃ 
• হামাসকে উৎখাত করে গাজায় নতুন শাসকগোষ্ঠীর ভাবনা
• জাতিসংঘ সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা
• বিশ্লেষকরা বলছেন, আরবদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাসকে উৎখাতের পর সেখানকার ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘গোপনে’ চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। তারা গাজার পরিস্থিতি ও শাসনকাঠামো কেমন হবে তার সম্ভাব্য কয়েকটি রূপরেখা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ-সমর্থিত সম্ভাব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরব বিশ্বের দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন-ইসরায়েলি এই পরিকল্পনায় আরব দেশগুলোকে পাশে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে যেতে পারে।
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোপন আলোচনার বিষয়ে অবগত সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। নিজেদের পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব সূত্রের মতে, এই আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আর এই পরিকল্পনার অনেক কিছুই এখন নির্ভর করছে গাজায় সামনে কী ঘটতে চলেছে— বিশেষ করে ইসরায়েলি স্থল হামলায় কতটা সাফল্য মিলবে তার ওপর। এছাড়া এই ধরনের যেকোনো সম্ভাবনার জন্য এই অঞ্চলের চারপাশের আরব দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন হবে; যা কোনোভাবেই নিশ্চিত নয়।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, তারা গাজা দখল করতে চান না। তবে তারা এও বলেছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাসের শাসন মেনে নেওয়াটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। কারণ এই গোষ্ঠীর হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ২০০ জনকে জিম্মি করেছে হামাস; যাদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের স্থল হামলার ফলাফল এবং এসব উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, সেই বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্তারিত জানাতে পারেনি। কেবল হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া ইসরায়েল কোনও সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে পরিষ্কারভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলমান সংঘাত ‘আঞ্চলিক যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে বলেও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের ভুল করেছিল, পরিষ্কার উদ্দেশ্য ছাড়া ইসরায়েলও একই ধরনের ভুল করবে। টুইন টাওয়ারে হামলার পর আফগানিস্তান এবং ইরাকে হামলা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়েদাকে দুর্বল করে ফেলাসহ কিছু লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হলেও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদী এক যুদ্ধে আটকা পড়ে যায়; যে যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য হারিয়েছে ওয়াশিংটন।
গত বুধবার ইসরায়েল সফরে গিয়ে জো বাইডেন বলেন, ‘হামাসের বিচার করতেই হবে।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমি সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনি যখন ক্ষোভ অনুভব করবেন, তখন এটাকে একেবারে গ্রাস করে ফেলবেন না। ৯/১১’র পর আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলাম। আমরা বিচার চেয়েছিলাম এবং বিচার পেয়েছি। তবে আমরা ভুলও করেছি।’’
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই মুহূর্তে সবার মনোযোগ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, একই সময়ে সম্ভাব্য স্থল হামলার পর গাজার ভাগ্য আমেরিকান কর্মকর্তাদের জন্য অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধ ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে বাইডেন নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন গাজার মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা উত্তর গাজা থেকে আরও বেশি মানুষকে পালাতে সহায়তা ও হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য কাতারের মধ্যস্থতায় গোপন আলোচনার চেষ্টা করছে। আর এজন্য স্থল হামলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে কালক্ষেপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এর মাঝেই শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের একজন মা ও তার মেয়ে হামাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক উইলিয়াম উশারের মতে, গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করাটা অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হবে। আর আরব বিশ্বের দেশগুলোর সরকারের সম্মতি পাওয়াটা হবে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত গাজায় সামরিক অভিযান শেষে ওই অঞ্চলটি পরিচালনা করার কোনও ইচ্ছে তাদের নেই বলে শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গাজা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন এবং এই অঞ্চলে একটি ‘নতুন নিরাপত্তা বাস্তবতা’ তৈরি করা ইসরায়েলের লক্ষ্য বলে তেল আবিবে ইসরায়েলের সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক কমিটির সাথে বৈঠকে এসব কথা বলেছেন তিনি।
আর ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাসের কাছে হেরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তেল আবিবে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজার ক্ষমতায় ফিরলে সেটিই সবচেয়ে ভালো হবে।’
মধ্যপ্রাচ্যে সিআইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা টেড সিঙ্গার বলছেন, পশ্চিম তীরকে শাসন করা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জর্ডান ও লেবাননের মতো দেশে ফিলিস্তিনি প্রবাসীদের কাজের ব্যবস্থা করবে না। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে গাজা থেকে বিতাড়িত হওয়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা রয়েছে। তারা কেবল পশ্চিম তীর শাসন করছে। আর ফিলিস্তিনি প্রবাসীরা গাজার সাথে তাদের অর্থপূর্ণ সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছে।
তবে জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত গাজার সম্ভাব্য শাসন ব্যবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেননি। বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনি জনগন এমন নেতৃত্ব চায়, যারা তাদের শান্তি ও নিরাপদ পরিবেশে বসবাসের সুযোগ করে দিতে পারবে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ।
-20251013141837.jpg) 
      -20251013095452.jpg) 
       
       
       
      -20250923081410.jpg) 
       
       
       
      -20250815155757.jpg)