Dr. Neem on Daraz
Victory Day

যাত্রীবেশে দেড় বছরে মহাসড়কে ১৫ বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২, ০২:২৫ পিএম
যাত্রীবেশে দেড় বছরে মহাসড়কে ১৫ বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ

ঢাকাঃ সাভারের আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনের বাসে ডাকাতিসহ বিভিন্ন সময়ে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শনিবার (১১ জুন) রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, এই ডাকাত চক্রটি গত দেড় বছরে যাত্রীবেশে মহাসড়কে ১৫টির বেশি ডাকাতি করেছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কারাগারে গিয়ে তারা জামিন নিয়ে এসে আবারও ডাকাতির কাজে লিপ্ত হন। এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটান তারা।

ডাকাত সর্দার মো. হীরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখের অন্য সহযোগীরা হচ্ছেন— মো. হাসান মোল্লা ওরফে ইশারত মোল্লা (৩৯), আরিফ প্রামানিক ওরফে আরিফ হোসেন (৩৩), মো. নুর ইসলাম (৫৩), মো. রাজু শেখ, মো. রেজাউল সরকার (৪৯), মো. রতন (৩৬), মো. শরিফুল ইসলাম (৩৯), মো. হানিফ (৪২), মো. নজরুল ইসলাম (৩৫)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ৮টি দেশীয় অস্ত্র, ৪টি শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের টিকিট, ৩টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

রোববার (১২ জুন) দুপুরে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। গ্রেপ্তার ডাকাত সর্দার হীরা ও তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করে থাকে। ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীবাহী বাসে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। গত দুই বছরে তারা ১০-১৫টি বাসে ডাকাতি করেছে। আগেও চক্রটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও মামুন ট্রাভেলস, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও একতা ট্রাভেলসে ডাকাতি করেছে বলে জানায়।

র‍্যাবের এই পরিচালক জানান, সম্প্রতি ঢাকার আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনের বাসে ডাকাতিসহ বিভিন্ন সময়ে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত চক্রটি। ইতোপূর্বে গ্রেফতার সবাই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলায় ২-৬ বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছেন। 

গত ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জুন মহব্বত ওরফে রয়েলকে লুণ্ঠিত মালামালসহ রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব গোয়েন্দারা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পান। র‌্যাব জানতে পারে, হীরার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটি গত এক মাসে তিনটি দূরপাল্লার বাসে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে। এই চক্রটি গত ১১ মে চট্টগ্রাম থেকে যশোর বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ২৫ মে ঢাকা-রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহন এবং ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতি করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, এটি একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১২/১৫ জন। গ্রেফতারকৃত সর্দার হীরা ও তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করে থাকেন। ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীবাহী বাসে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। গত দুই বছরে তারা প্রায় ১০-১৫টি বাসে ডাকাতি করেছে। ইতোপূর্বে চক্রটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও মামুন ট্রাভেলস, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও একতা ট্রাভেলসে ডাকাতি করে বলে জানায়। এছাড়া চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা বাস চালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়াও এই চক্রটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফাল্গুনী ট্রাভেলস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও কণক পরিবহন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুরভী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সিলেট-রাজশাহী মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও রইস পরিবহন, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনা এক্সপ্রেস ও সরকার ট্রাভেলস, রাজশাহী-বরিশাল মহাসড়কে সেবা গ্রিন লাইন পরিবহন ও তুহিন পরিবহনে ডাকাতি করে।

র‌্যাব জানায়, তিন বছর আগে ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায় বলে জানায় চক্রের সদস্যরা। সর্বশেষ তারা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতি করে। ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলো টার্গেট করে। এক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন আগে থেকেই কাউন্টার থেকে টিকেট কিনে বাসে ওঠে। অন্য সদস্যরা পরে বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেটকৃত বাসে ওঠে। এছাড়া যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ছাড়া যাত্রী উঠায় তারা ওইসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করে থাকে। সাধারণত তারা মহাসড়কের নির্জন এলাকায় বাস ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। ডাকাতি করার পর তারা পুনরায় আশুলিয়ায় ফিরে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তারা বাড়ি ঘরে ডাকাতি করত বলে জানা যায়। ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত সবাই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলায় ২-৬ বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছে। 

গ্রেফতার হীরা শেখ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ডাকাত চক্রের অন্যতম মূল হোতা। আগে তিনি গার্মেন্টসপণ্য বিক্রি করতেন। পরবর্তী সময়ে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়েন এবং ১০/১২ বছর ধরে ডাকাতি করে আসছেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে ঘটেছে। প্রত্যেকটি পরিবহনে ডাকাতিতে তিনি নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভীতির সঞ্চার করেন। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বাকিরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, মোবাইল এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মোট সাতটি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার হাসান মোল্লা ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং ১০/১২ বছর ধরে ডাকাতি করে আসছেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতির পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভীতির সঞ্চার করেন। পরে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মোট ১০টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার নুর ইসলাম, হানিফ, আরিফ, শরীফ ও রতন এই চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যান চালকসহ অন্যান্য পেশার আড়ালে ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গত দশ বছর ধরে তারা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ডাকাতিতে তারা অংশগ্রহণ করেন। ডাকাতির সময় তারা বাসের ড্রাইভারকে জিম্মি করে নিজেরাই বাসের ড্রাইভিং সিটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন।

গ্রেফতার আরিফ ও শরীফ ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির পেছনের সিটে হাত-পা বেঁধে রেখে তাদের পাহারা দিতেন। গ্রেফতার শরীফ ৮/১০ বছর যাবত বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধে আটটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার আরিফের নমে দস্যুতার মামলা রয়েছে। নুর, হানিফ ও রতন ডাকাতির সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মালামাল লুট করতেন। নুরের নামে ডাকাতি, অস্ত্র, বিস্ফোরক আইনে বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে। হানিফের নামে ডাকাতি ও মাদক আইনে দুটি মামলা রয়েছে। রতনের নামে ডাকাতি ও মাদক আইনে বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে তারা এই মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন।

গ্রেফতার রাজু ও রেজাউল এই চক্রের অন্যতম সদস্য। রাজু ১৬-১৭ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছেন। তার নামে অস্ত্র ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে তিনটি মামলা রয়েছে। তিনি ডাকাতির সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মালামাল লুট করতেন। রেজাউল ডাকাতির সময় গাড়ির গেইটে পাহারা দিতেন। তার নামে মাদক, ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। পরিবহনে ডাকাতির সময় তারা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণালঙ্কার লুটের কাজ করতেন। গ্রেফতার নজরুল সে ডাকাত দলটির লুটকৃত স্বর্ণ কিনে সেগুলো গলিয়ে বিভিন্ন জুয়েলারি শপে বিক্রি করতেন।

গ্রেফতার ডাকাত দলের ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

এমবুইউ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে