ফাইল ছবি
ঢাকাঃ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, রাজবাড়ীর সহকারী পরিচালক মোঃ শরীফুল ইসলামের চাঁদাবাজীতে জেলার ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, তিনি অহরহ ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়া নিজেই ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার সেনিটারী ইন্সপেক্টর ও পুলিশ নিয়ে এলাকার শিল্প কারখানায়, দোকানে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মিথ্যা অভিযোগ এনে জেল হাজতের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা জরিমানা করছে।
আরও ভয়াবহ হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি বা তার নিজের অফিসই অভিযোগকারী। এখানে ভোক্তাদের কোন বালাই নাই। সরকার ঘোষিত ভোক্তা অভিযোগকারী পণ্যের বিষয়ে কোন অভিযোগ করলে বা ভোক্তা কোনভাবে প্রতারিত হলে এবং ভোক্তার অভিযোগ সত্য হলে অভিযোগকারী ভোক্তা জরিমানার ২৫% ভাগ অর্থ পাবেন। সরকার ঘোষিত এই ব্যবস্থা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্যই বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। কিন্তু সহকারী পরিচালক শরীফুল নিজেই বা তার অফিস অভিযোগ সাজিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়া মোটা অংকের টাকা জরিমানা করে তার ২৫% নিজেই ভোগ করছেন। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের নামে তার এই অনৈতিক কার্যকলাপ স্থানীয় প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার এই হয়রানীমূলক অভিযানের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারও অবগত নয়। তিনি থানা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে নিজেই ম্যাজিষ্ট্রেট সেজে এসব অভিযান পরিচালনা করেন। এমনই একটা অভিযান তিনি পরিচালনা করেন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার বহরপুরের শান্তি মিশনে।
গত আগষ্ট ১৮, বেলা ২টায় বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পনিরুজ্জামান পনির, বালিয়াকান্দি থানার উপ-সহকারী পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শহিদুল ইসলাম সংগীয় ২ জন পুলিশ ফোর্সসহ মোঃ শরীফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) রাজবাড়ী, শান্তি মিশনের নিম অর্গানিক লিঃ ও পারমাথেরাপি হিলিং সেন্টার লিঃ এর ফ্যাক্টরীতে নিজেকে ভোক্তা- অধিকারের ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ঢুকে পড়েন এবং তড়িঘড়ি করে তৈরী মজুদ মালের গোডাউনে প্রবেশ করে দুই কার্টুন ফেস ওয়াস ও দুই কার্টুন মধু সিজ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে গ্রেফতার করে ২ বছরের জেল হাজতের ভয় দেখায়।
এ প্রসংগে শিল্প কারখানার মালিক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম মন্ডল ওরফে ড. নিম হাকিম জানান- আমি ফ্যাক্টরী থেকে দুইটার কিছুক্ষণ পর ফোন পাই যে, ভোক্তা অধিকারের ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশসহ ভিতরে ঢুকে মালামাল সিজ করছে, বিষয়টি জানার পর আমি তৎক্ষণাৎ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে মোবাইলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি জানান এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এর পর জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করালে তিনিও বিষয়টি অবগত নয় বলে জানান। এর পর ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জনাব মনজুর শাহরিয়ারকে জানালে তিনিও বিষয়টি জানেন না বলে জানান। আমার অনুরোধে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে মোবাইল কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর ফ্যাক্টরী থেকে ৪ কার্টুন মাল সিজ করেছে, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এখনই না দিলে সবাইকে ধরে নিয়ে ২ বছরের জেল ও কারখানা বন্ধ হবে বলে ম্যাজিস্ট্রেট বলছেন, বলে ফ্যাক্টরী থেকে জানান। আমি আবারও জনাব মঞ্জুর শাহরিয়ারকে বিষয়টি জানাই। তিনি বলেন আমি কথা বলেছি, এখন তিনি যা করার করবেন।
আমি মান-ইজ্জতের কথা চিন্তা করে তৎক্ষণাৎ জরিমানা দিয়ে রশিদ রাখতে বলি। জরিমানার ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি রশিদে জরিমানার ধারা উল্লেখ্য করেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০৯ এর ৪৪ এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনের ২০০৯ এর অধীনে অভিযোগ দায়ের এবং অপরাধ ও দন্ডের বিধানের সংশ্লিষ্ট লিফলেট সংযুক্ত করে দেন। ঐ লিফলেটে ধারা ৪৪ এ লেখা আছেঃ মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা, কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা।
প্রশ্ন হলো-কে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়েছে? কোথায় দিয়েছে?? কোন ভোক্তা অভিযোগ করেছে আর প্রতারিত হয়েছে???
এই ধারার অপরাধ প্রমানিত হলে অনুর্ধ ১ (এক) বছর কারাদন্ড অনধিক ২.০০ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড।
কোন ভোক্তা অভিযোগ করেন নাই। কেউ প্রতারিত হওয়ার প্রমাণ নাই, কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় নাই অথচ তিনি ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে জেল হাজতের ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে নিয়ে গেলেন।
আরও বিস্ময়কর হলো-জরিমানা করলেন নিম অর্গানিক লিঃ কে আর মালামাল সিজ করলেন পারমা থেরাপি হিলিং সেন্টারের। তিনি এসব করে চলে যাবার পর তার সাথে থাকা ফোর্সের অফিসার জনাব শরীফুল ইসলামের কাছে তিনি ম্যাজিষ্ট্রেট কিনা জানতে চাইলে জানান, অভিযানের পর তিনি জেনেছেন জরিমানাকারী ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক (নন ক্যাডার) এই শহিদুল ফ্যাক্টরীতে ঢুকেই বলেছিলেন ভোক্তা অধিকারের ম্যাজিষ্ট্রেট এসেছে। শহিদুলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান অভিযানের সময় তিনি জানতেন না যে অভিযোগকারী অফিসার ম্যাজিষ্ট্রেট নয়।
এর পর দেখা গেল তার জরিমানার রশিদে অভিযোগকারীর নাম লেখা আছে ডিএনসিআরপি, যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ইংরেজী নামের সংক্ষেপ। অর্থাৎ তিনিই অভিযোগকারী-তিনিই বিচারক।
তিনি যোগদান থেকে মাত্র কয়েক মাসে ১৮ লাখ টাকা ডিএনসিআরপির অভিযোগের নামে জরিমানা করেছেন যার চার ভাগের এক ভাগ তিনি বা তার অফিস পাবেন যার পরিমাণ সাড়ে চার লাখ টাকা। মূলতঃ কোন ভোক্তার অভিযোগ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে এ ধরণের অভিযান ও জরিমানা চাঁদাবাজিরই নামান্তর ।
আরও উল্লেখ্য যে, নিম অর্গানিক লিঃ ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে ঢাকার সাভারের ভাড়া ফ্যাক্টরী থেকে নিজস্ব জায়গা রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুরের শান্তি মিশনে স্থানান্তরিত হয়। স্থানান্তরের মাত্র দশ দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরুর আগেই গত ১০/০২/২০২০ তারিখে এই শরীফুল পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ফ্যাক্টরীতে একই কায়দায় প্রবেশ করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনের কোন একটি ত্রুটিও না পেয়ে ফিরে আসেন। কারখানাটি ঢাকার সাভার থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর পরিবেশ সনদ, ফায়ার লাইসেন্স, বিএসটিআই সনদ নবায়ন ও স্যানিঢারী সনদ পেতে এক বছরের অধিক সময় ব্যয় হয়েছে। তাছাড়া কারখানার লকডাউনের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৫/০৮/২০২১ তারিখে খুলে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করার সময় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর সহকারী পরিচালক (নন ক্যাডার) নিজেকে ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে নিজেই মিথ্যা অভিযোগ সৃষ্টি করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও একই মালিকের অন্য কোম্পানীর মালামাল জব্দ করে নিম অর্গানিক লিঃ কে জরিমানা আরোপ করেন।
শুধু তাই নয়, তার এসব কার্যকলাপের সহযোগী বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পনিরুজ্জামান পনিরের ফেসবুক থেকে বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদ পত্রে সংবাদ ছড়ায় যে, “মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করার অপরাধে নিম অর্গানিক প্রডাক্টের মালিক ড. নিম হাকিমকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী।”
কোন ভোক্তার অভিযোগ ছাড়া নিজেই অভিযোগকারী ও বিচারক হয়ে এবং নিজেকে ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বেআইনীভাবে জরিমানা এবং মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তা বিভিন্ন পত্রিকায় ও সোস্যাল মিডিয়ায় দেয়ায় কোম্পানী ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নিম হাকিমের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। কোম্পানীর পণ্য সম্পর্কে ভোক্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় কোম্পানীর আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়েছে। তার এহেন কর্মকান্ডের জন্য তাঁর বিরূদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ড. নিম হাকিম ।
তিনি আরও বলেন যে, গত ০৬/০২/২০২০ তারিখে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক জনাব মঞ্জুর শাহরিয়ার একটি মিথ্যা অভিযোগসহ তার সহকর্মী মিসেস ফাহমিদা, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ঢাকার মহাখালীস্থ নিউ ডিওএইচএস-এ ড. নিম হাকিমের বাসায় অভিযান চালান। কিন্তু অভিযানে অভিযোগের বিষয়ে কোন সত্যতা না পেয়ে ফিরে আসেন। অভিযোগের বিষয়ে নিম অর্গানিকের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করে তা নিস্পতির বিষয়ে বার বার ধর্ণা দিলেও দীর্ঘ দেড় বছর জনাব শাহরিয়ার মঞ্জুর অজ্ঞাত কারণে তা মিমাংসা করছেন না।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে একটি মাল্টিন্যাশনাল ও ভারতীয় কোম্পনীর স্থানীয় অংশীদার ও এজেন্ট দেশীয় এই সম্ভাবনাময় শিল্প কারখানাটি ধ্বংসের নানা প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ড. নিম হাকিম সন্দেহ করছেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এহেন বেআইনী কার্যকলাপ ঐ ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, এই ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে সৌদি নাগরিকের শেয়ার রয়েছে এং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়াধীন বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডে নিবন্ধিত।উদ্যোক্তা ড. নিম হাকিম একজন আন্তর্জাতিক ভেষজ গবেষক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত।তিনি এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই ও বাংলাদেশ হারবাল প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশনের সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন মেডিসিনাল প্লান্টস এন্ড হারবাল প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এর নির্বাহী সদস্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএসটিআই এর দুইটি শাখা কমিটির দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ সরকার মনোনীত সদস্য, দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজ ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিও লাইসেন্স প্রাপ্ত বাংলাদেশ নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি এবং দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক।
তার মান মর্যাদার প্রতি এই ধরণের আঘাত এবং মিথ্যা অভিযোগে জরিমানা এবং তা সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি ব্যবসায়ী মহল স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা জানান, এ বিষয়ে শিঘ্রই প্রতিবাদ কর্মসূচী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।