Dr. Neem on Daraz
Victory Day
বিমানবন্দরে ৩০০ প্রবাসীর সর্বস্ব লুট

পাসপোর্ট-লাগেজ হাতে ছদ্মবেশে থাকতো অজ্ঞানপার্টি


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২, ০২:৩৫ পিএম
পাসপোর্ট-লাগেজ হাতে ছদ্মবেশে থাকতো অজ্ঞানপার্টি

ঢাকাঃ বিমানবন্দর এলাকার একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরি করতেন আমির হোসেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস। বিদেশফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশে গত ১৫ বছর ধরে অজ্ঞান পার্টির একটি চক্র পরিচালনা করছিলেন আমির। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে ফের একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

র‍্যাব বলছে, ১৫ বছরে প্রায় ৩০০ ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে মূল্যবান মালামাল লুট করেছেন আমির। তার বিরুদ্ধে অজ্ঞান ও মলম পার্টি সংক্রান্ত ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে।

এদিকে অজ্ঞান ও মলম পার্টি চক্রের এই মূলহোতা আমির হোসেনকে তার তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া বাকিরা হলেন- লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) এবং জাকির হোসেন (৪০)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মোবাইল, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাই স্বর্ণ।

র‌্যাব জানায়, এ চক্রের সদস্যরা বিমানবন্দর টার্মিনালে ওঁত পেতে থাকতো এবং প্রবাসীদের টার্গেট করতে টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাসফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করতো।

রোববার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংক পাড়ায় সাধারণ যাত্রীদের, ব্যাংকে আসা গ্রাহকদের টার্গেট করে থাকে।

গত ২ সেপ্টেম্বর এক প্রবাসী কুয়েত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে টার্গেট করেন। ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে ওই প্রবাসীকে অজ্ঞান করে তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় চক্রটি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী বাদী হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১২।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গতকাল রাতে র‍্যাব-১ এর একটি দল আমির ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে গত ১৫ বছর ধরে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করত। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল।

স্বজন আসেনি এমন প্রবাসী তাদের টার্গেট 

বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ কোনো স্বজন বা গাড়ি নেই এমন বিদেশ ফেরতদের চক্রটি টার্গেট করত। তারা কৌশলে বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের নিকট আত্মীয় বলে পরিচয় করিয়ে দিত। পরে একই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রাজি করাত। তারা একসঙ্গে বাসের টিকিট কেটে যাত্রা শুরু করত। ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে ভুক্তভোগীদের অচেতন করতেন।

অজ্ঞান হওয়ার প্রবাসীর সঙ্গে থাকা লাগেজের টোকেনের মাধ্যমে বাস থেকে মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যেতো।

জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ভোরে ভুক্তভোগী কুয়েত ফেরত প্রবাসী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাকে শুরু থেকেই চক্রের একজন সদস্য অনুসরণ করে বাইরে আসেন। বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে প্রাইভেটকারে উঠে আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসের টিকিট কাটতে গেলে প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশে অবস্থান নেন চক্রের মূলহোতা আমির হোসেন।

ভুক্তভোগীকে তিনি জানান, তার কাছে বাসের একটি অতিরিক্ত টিকেট আছে। আগে থেকে সাজিয়ে রাখা একটি লাগেজ ও কিছু কুয়েতি দিনার দেখিয়ে আশ্বস্ত করেন যে, তিনিও একজন প্রবাসী। আমির হোসেনের কাছ থেকে টিকিট কিনে পাশের সিটে বসে বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

কিছুক্ষণ পরই চক্রের মূলহোতা আমির হোসেন চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খেতে দেন। ভিকটিম বিস্কুট খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে যান। তার সব মালামাল ও সম্পদ লুট করে সিরাজগঞ্জ নেমে যায় চক্রটি। পরে বাসের সুপারভাইজার বুঝতে পেরে ভিকটিমকে উদ্ধার করে ও পরিবারকে খবর দেন।

ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে ১৫ বছর ধরে অজ্ঞান পার্টির হোতা আমির

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আমির হোসেন জানান, চক্রে আরো ৬-৭ জন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছেন।

জামিন পেতে লুণ্ঠিতা টাকা লগ্নি

বার বার গ্রেপ্তারের পরও আমির একই অপকর্মে জড়ান? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ১৫ মামলার আসামি আমির র‍্যাব ও পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি বর্তমানে জামিনে ছিলেন। মূলত লুট করা টাকার একটি অংশ তিনি জামিন সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যয় করতেন।

গ্রেফতার লিটনের ভূমিকা

আমিরের সহযোগী গ্রেপ্তার লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মাইক্রোবাস চালাতেন। এর আড়ালে ৩-৪ বছর ধরে আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। লিটনও একাধিকবার একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার হন।

গ্রেফতার পারভেজের ভূমিকা

গ্রেপ্তার আবু বক্কর ওরফে পারভেজ ৮-৯ বছর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে কর্মরত ছিলেন। গত ৬-৭ বছর পূর্বে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে নিজের জুয়েলারির দোকান প্রতিষ্ঠা করে। জুয়েলারি দোকানের আড়ালে তিনি গত ২-৩ বছর ধরে এই চক্রের লুট করা স্বর্ণ গ্রহণ, রূপা পরিবর্তন ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

গ্রেফতার জাকিরের ভূমিকা

গ্রেপ্তার জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৩-৪ বছর আগে আমিরের মাধ্যমে চক্রে যোগ দেন। তিনি লুট করা স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে