Dr. Neem on Daraz
Victory Day

না.গঞ্জে জোড়াখুন: জুয়ার টাকার জন্য কাকুলি ও তার ছেলেকে গলাকেটে হত্যা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২২, ০৪:১৯ পিএম
না.গঞ্জে জোড়াখুন: জুয়ার টাকার জন্য কাকুলি ও তার ছেলেকে গলাকেটে হত্যা

ঢাকাঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ব্রাহ্মনদী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দি এলাকার মা রাজিয়া সুলতানা কাকলি এবং তার শিশু সন্তান তালহা (৮) হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নারায়ণগঞ্জ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাদিকুর সাদি (২৪) নামে এক যুবককে গত ৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার (১১ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই এর মহাপরিচালক বনজ কুমার মজুমদার।

বনজ কুমার জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত সাদিকুর সাদি। সে বেশকিছু টাকা ধার করে আইপিএল ক্রিকেটে জুয়া খেলে নষ্ট করে। পরে পাওনাদারদের চাপে তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তখন সে পাগলের মতো আরও টাকা খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে সে জানতে পারে তার পাশের বাড়ির কাকলি ভাবির কাছে বেশকিছু টাকা আছে এবং ঘরে অনেক সোনাদানা আছে। সে জানতো কাকলি ভাবির একটা শিশুসন্তান ছাড়া ওই ঘরে কেউ থাকে না। কাকলির স্বামী বছর দুইয়েক আগেই মারা যায়। আসামি সাদিকুর কাকলির কাছ থেকে টাকা ধার করার চিন্তা করে।

পিবিআই মহাপরিচালক জানান, ঘটনার দিন (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় কাকলির বাড়ির আশপাশে হাটাহাটি করতে থাকে সাদিকুর। রাতে যখন আশপাশের সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে কাকলিদের বাড়ির গেটে গিয়া ভাবি ভাবি বলে ৩-৪ বার ডেকে গেট খুলতে বলে। কিছু সময় পর কাকলি দরজা খুলে কলাপসিবল কেচি গেট খুললে সে ভাবিকে জানায়, তার মা তাকে তার কাছে ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার ধার নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। তখন আসামি ভিকটিমের ঘরের ভেতরে ঢোকে। আসামি রুমে ঢুকে দেখে ছেলে তালহা (৮) ভাত খেয়ে ঘুমের ভাবে আছে। আসামি তখন ভিকটিম কাকলিকে পাশের রুমে আসার জন্য বলে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কাকলি পাশের রুমে আসার পর আসামি ভিকটিমের হাতে-পায়ে ধরে ১০ হাজার টাকা চায়। ভিকটিম বলে তার কাছে কোনও টাকা নেই। তখন আসামি অনেক জোরাজুরি করার পর কাকলি তাকে আলমারি খুলে বলে, দেখ আলমারিতে শুধু ১০০ টাকা আছে। আর কোনও টাকা নেই। আলমারিটা খুললে সে আলমারির ভিতরে একটি বাক্সে কিছু সোনার জিনিসপত্র দেখতে পায়। তখন সোনা নেওয়ার জন্য তার লোভ লেগে যায়। ভিকটিম কাকলি তখন আলমারির চাবিটা আলমারির ওপরে রাখলে আসামি দেখে ফেলে। কাকলিকে চেয়ারে বসিয়ে বিছানার ওপর থেকে তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়া গলায় ফাঁস দেয় সাদিকুর। কাকলি নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলে বিছানার পাশেই রাখা ইস্ত্রি দিয়া ভিকটিমের মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে ভিকটিম পুরাপুরি অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন আসামি সাদিকুর দ্রুত ভিকটিমের রান্না ঘর হতে সবজি কাটার বঁটি আনে এবং কাকলিকে জবাই করে ফেলে।

তারপর সে দ্রুত আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার (দুটি স্বর্ণের আঙটি, দুটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল) নিয়ে নেয়। আসামি ঘরের ওয়ারড্রবসহ সব জায়গায় খুঁজে নেওয়ার মতো আর কিছু পায়নি। তারপর সে পাশের রুমের খাটের ওপর ঘুমন্ত তালহাকে (ভিকটিম কাকলির ছেলে) ওই বঁটি দিয়েই জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তখন তালহা একটি চিৎকার দিয়েছিল। তারপর সাদিকুর দ্রুত সোনা নিয়া ঘর হতে বের হয়ে যায় এবং ভিকটিমের ঘরের পেছনে অজিদকে ফোন চাপতে দেখে। আসামি তখন অজিদের সঙ্গে কোনও কথা না বলে দ্রুত বাড়ি চলে যায়।

আসামির দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিমের ঘর থেকে খোয়া যাওয়া একটি স্বর্ণের আংটি, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আসামির শোবার ঘরের বিছানার তোশকের নিচ হতে জব্দ করা হয়। পরে আসামির দেওয়া তথ্যমতে একটি স্বর্ণের আংটি এবং একটি স্বর্ণের চেইন আড়াইহাজার থানাধীন ডরগাঁও এলাকার ক্ষুদ্র স্বর্ণের দোকানদার গোপালের কাছ থেকে জব্দ করা হয়। আসামি সাদিকুর এগুলো তার মায়ের স্বর্ণ উল্লেখ করে ১৭ হাজার টাকায় বন্ধক রেখেছিল গোপালের কাছে। এছাড়া আলামত হিসেবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার হাতলযুক্ত বঁটি, একটি ইলেকট্রিক কাপর ইস্ত্রি মেশিন ও একটি রক্তমাখা ওড়না জব্দ করা হয়।

আসামি সাদিকুর সাদি রবিবার (১০ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী অজিদ কাজীও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে