Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নাম পাল্টে ছদ্মবেশে ২১ বছর পালিয়ে ছিলেন মুফতি শফিক


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২২, ০৩:২২ পিএম
নাম পাল্টে ছদ্মবেশে ২১ বছর পালিয়ে ছিলেন মুফতি শফিক

ঢাকাঃ বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমান নাম পাল্টে ছদ্মবেশ ধারণ করে ২১ বছর পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে নিজের নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র বানান তিনি। নরসিংদীর একটি নিভৃত চড়ে আব্দুল করিম নাম ধারণ করে মাদরাসায় শিক্ষকতা, কখনও মসজিদে ইমামতি করেছেন। তিনি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। শুধু ছেলের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হতো।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে তাকে বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ‌

খন্দকার আল মঈন জানান, ‘গ্রেফতার শফিকুর রহমান নরসিংদী থাকাকালীন পরিচয় গোপন করে আব্দুল করিম নামে পরিচয় দিতো। আব্দুল করিম নাম ব্যবহার করে ওই এলাকার চরে অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নেয়। ইমামতির আড়ালে সে মানুষকে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা প্রচার করতো। অত্যন্ত কৌশলে মাঝে মাঝে ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতো। বিগত ২১ বছর এভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল সে।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘২০০১ সালের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় সে সম্পৃক্ত ছিল। রমনা বটমূলে হামলার পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সে গোপনে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। অতঃপর ২০০৮ হতে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়।’

গ্রেফতার শফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার মাদ্রাসা হতে হেদায়ায় পড়াশোনা করে। হেদায়া পাস করার পর ১৯৮৩ সালে পাশের দেশ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। ১৯৮৬ সালে সেখান থেকে সাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে দেশে ফিরে আসে।

১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ যিন নূরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করে। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন আফগানিস্তানে চলে যায় এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে।

১৯৮৯ সালের শেষের দিকে আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে সে। বাংলাদেশে আসার পর সে ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি মাদ্রাসায় পার্টটাইম শিক্ষকতা শুরু করে। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউনে পড়াশোনার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে যায়। 

পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করে। ১৯৯০ সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করে।

১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ এর প্রচার সম্পাদক ছিল। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদের আমীর ছিল। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সে হরকাতুল জিহাদ এর সূরা সদস্য ছিল।

২০০১ সালের পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত বোমা হামলায় ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যা মামলাসহ অপর একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। হত্যা মামলাটির বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এই মামলায় মুফতি শফিকুর রহমানের মৃতুদণ্ড হয়।

অপরদিকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়। সেই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তিন শতাধিক গুরুতর আহত হন। সেই ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে যান। এ ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যা চেষ্টার সহযোগিতাসহ দুটি পৃথক মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইবুন্যাল ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মুফতি শফিকুর রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

গ্রেফতার শফিকুর রহমান সেই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অপরদিকে একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অপর একটি মামলা হয়। মুফতি শফিকুর রহমান বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায়ও পলাতক আসামি। এছাড়াও ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত এবং শতাধিক লোক আহত হন। গ্রেফতারকৃত শফিকুর রহমান কিবরিয়া হত্যা মামলায়ও চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় সর্বমোট ছয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

এমএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে