Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কদর বেড়েছে হাতপাখার


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, যশোর প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৩, ১২:৫১ পিএম
কদর বেড়েছে হাতপাখার

যশোরঃ তীব্র তাপপ্রবাহে মধ্যে কদর বেড়েছে হাতপাখার, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও। এ কারণে যশোরের ঝিকরগাছার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের শিওরদাহ দক্ষিণপাড়া গ্রামে হাতপাখার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কথা বলার ফুরসুরত নেই তাদের। কর্মব্যস্ততার মাঝেই কথা হয় ষাটোর্ধ্ব জিন্নাত হোসেনের সঙ্গে। মৌসুমে তিনি পাখা বানান এবং বাজারে বিক্রি করেন। অন্য সময় তিনি অন্য কাজ করেন।

পাখা তৈরির ফাঁকে ফাঁকে তিনি বলেন, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে তাল গাছের পাতা কাটা হয়। একটি তালের পাতা ৭ থেকে ৮ টাকায় কিনতে হয়। একটি তাল গাছ থেকে ৪ থেকে ৭টি পাতা কাটা যায়। একটি তালের পাতায় দুইটা হাতপাখা হয়। প্রথমে পাতাগুলো শুকাতে হয়। এরপর পানি দিয়ে ভিজিয়ে বাইসাইকেলের টায়ারের তার দিয়ে হাতপাখার পাতা গোল করে নিয়ে রোদে দিতে হয়। এরপর পাখা শুকিয়ে রঙিন শলাকা দিয়ে পাখা সাজাতে হয়। প্রতিদিন একজন মানুষ ৫০ থেকে ৬০টি পাখা বানাতে পারেন। একটি পাখা তৈরি করতে আমাদের খরচ হয় ১৩ থেকে ১৪ টাকা। পাইকারি দরে তা বিক্রি করি ১৮ থেকে ২০ টাকা। জিন্নাত আলী এ মৌসুমে প্রায় ৫০০ পাখা বিক্রি করেছেন প্রতি পিস ২০ টাকা দরে।

তিনি আরো বলেন, পাখা তৈরির মৌসুম চলে গেলে অন্যের জমিতে মৌসুম অনুযায়ী শ্রম বিক্রি করে আমি আমার সংসার চালাই। নিজের জমি না থাকায় তিনি সরকারি আবাসস্থানের আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারিভাবে যদি কোনো থাকার জায়গা পাই, তাহলে সেখানেই চলে যাব। তার তিন পুত্র সন্তান রয়েছে, তারা আলাদা হয়ে গেছে।

এদিকে পাখা তৈরির কারিগর রুস্তম আলীর স্ত্রী আঁখি খাতুন বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলেই পাখা তৈরি করি। পাখা তৈরির মৌসুম চলে গেলে আমার স্বামী ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন। তিনি হাতপাখা তৈরির খরচের কথা জানতে চাইলে বলেন, ১০০ পাখা সেলাই করতে খরচ হয় ১০০ টাকা, একটি তল্লা বাঁশের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা, একটি বাঁশে ৩০০ পাখার শলাকা তৈরি হয়। ১০০ পাখার শলাকা জড়াতে ১০ টাকা খরচ হয়। ১০০ গ্রাম লাল রঙ কিনতে খরচ হয় ৪০০ টাকা। ১০০ গ্রাম রঙে ১০০০ পাখা রঙ করা যায়। ১০০ গ্রাম পেটী সুতা ৩০ টাকায় কিনতে হয়। ১০০ গ্রাম সুতায় ৩০০টি পাখা বাঁধা যায়। এরপরে রয়েছে তালপাতার পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু খরচ। আঁখি খাতুন আরো বলেন, পাখা দুই রকম ডাটি (তালপাতার সঙ্গে সংযুক্ত ডাটা) পাখা এবং কান্তি (তালপাতার সঙ্গে আলাদাভাবে সংযুক্ত কঞ্চি) পাখা। আর একখানা তালের পাতা থেকে ১০ খানা তালপাখা হয় এমন ধরনের পাখার নাম ‘গামলা পাখা’। এ পাখা তেমন মজবুত হয় না।

তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে আমরা গরমকালে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারতাম। তাল পাখা সেলাইকারী মনজুয়ারা বলেন, আমি প্রতিদিন ১০০ পাখা সেলাই করে ১০০ টাকা পাই। যশোরের পূর্বগাছা উপজেলার নির্বাসকলা ইউনিয়নের গ্রামের দক্ষিণপাড়া গ্রামের চারটি পরিবার তালপাতার হাতপাখা তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এরা হলেন আফজাল হোসেন, ফারুক হোসেন, রুস্তম আলী এবং জিন্নাত হোসেন। এদের তৈরি হাতপাখা ঝিকরগাছা, বাগআঁচড়া, নাভারন, শার্শা এলাকায় বিক্রি হয়। ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি করা পাখাগুলো বাজারে খুচরা মূল্যে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। পাখা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গরম বেশি পড়লে তাদের বিক্রি বেশি হয়।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, পাখা তৈরিতে সরকারি সহায়তার জন্য উপজেলা বিআরডিবি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে আবেদন করলে আর্থিক সহায়তা পাবেন। তিনি আরো বলেন, ভূমিহীন জিন্নাত আলী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আবেদন করলে আমরা তার বিষয়টা বিবেচনা করব।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে