Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রংপুরে চিকিৎসক স্ত্রীর মামলায় বিচারক স্বামীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩, ০৭:১৪ পিএম
রংপুরে চিকিৎসক স্ত্রীর মামলায় বিচারক স্বামীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা

রংপুরে চিকিৎসক স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় বিচারক স্বামী দেবাংশু কুমার সরকার ও তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এই পরোয়ানা জারি করেন। একইসঙ্গে এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ মে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার হালুয়াঘাট পূর্ব বাজার এলাকার সুধাংশু কুমার সরকার চন্দনের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ন সরকারের মেয়ে হৃদিতা সরকারের বিয়ে হয়।

ওইদিন বিয়ের আসরে বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার কনেপক্ষের কাছে নগদ ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে পঞ্চাশ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহার সামগ্রী) বরপক্ষকে দেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পার না হতেই দেবাংশু কুমার সরকার নেশাগ্রস্ত হয়ে নতুন একটি প্রাইভেটকার ক্রয়ের জন্য তার স্ত্রী হৃদিতা সরকারের ওপর ৩০ লাখ টাকার চাপ সৃষ্টি করেন।

কিন্তু হৃদিতা সরকার তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোণা হয়ে রংপুর জজশীপে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করলেও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরকীয়া ও মাদক সেবনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন দেবাংশু কুমার সরকার।

স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে অভিযুক্ত দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। অবশেষে প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন অভিযুক্ত দেবাংশু কুমার সরকার। বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ত্রিশ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানান। এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৮ মার্চ হৃদিতা সরকার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ত্বরে উপস্থিত হলে তার ওপর অজ্ঞাত কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালায়।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত বছরের ১৭ এপ্রিল থানায় এজাহার করতে গেলে অভিযুক্ত বিচারক হওয়ায় থানা থেকে মামলা নথিভুক্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করলে আদালতের শরনাপন্ন হন ডা. হৃদিতা সরকার। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল বাদীর জবানবন্দি রেকর্ডের পর মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি খন্দকার রফিক হাসনাইন জানান, ৩০ লাখ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে ডা. হৃদিতা সরকার তার স্বামী দেবাংশু সরকারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা করেন। মামলাটি আদালতের আদেশে রংপুর পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী নারাজি দেন। ফলে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে আজ বুধবার সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যখ্যা দিতে বলেন বিচারক।

বিচারক তদন্তের বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেবাংশু কুমার সরকার ও তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে সুধাংশু কুমার সরকারকে রংপুর থেকে বদলি করা হয়েছে।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে