Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভারী বর্ষণে রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতা, মানুষের ভোগান্তি


আগামী নিউজ | নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১, ০১:৩১ পিএম
ভারী বর্ষণে রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতা, মানুষের ভোগান্তি

ছবি : আগামী নিউজ

নারায়নগঞ্জঃ রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌর এলাকা, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন, ভুলতা ইউনিয়নসহ মুড়াপাড়া ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল লঘু চাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে হাট বাজারও। কোনো খেলার মাঠও হাটু পানির নীচে। কারো আবার রান্না ঘরে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে চুলা। রান্না করার উপায় নেই অনেকের। তারা যেন অজানা কোনো এক দ্বীপবাসী। প্রতি বছরই বর্ষায় এ অবস্থা হলেও আজ অবধি প্রশাসনের টনক নড়েনি। পরিকল্পনাহীন বালি ভরাট আর ঘরবাড়ি কলকারখানা তৈরির জন্য এসব এলাকা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিতে যাচ্ছে

কোনো কোনো বসতঘরের মেঝেতে হাঁটু সমান পানি। ঘরের আসবাবপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। কারো কারো আমাশয় ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। মহিলারা দূর থেকে কলসিতে করে পানি সংগ্রহ করছে। এলাকায় জমে থাকা পানির রং কুচকুচে কালো। এ পানিতে হাঁটাচলা করায় অনেকেরই চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এত কষ্টের মাঝেও অনেকে বাড়ির উঠানে জমে থাকা পানিতে ছিপ ফেলে মাছ ধরছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প ব্লক-১ এর পানি নিষ্কাশন খাল আশপাশের কলকারখানাগুলো দখলে নিয়ে ভরাট করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। পাবই গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব রফেজা বেগম বলেন, ৬/৭ বছর ধরে বছরের বেশিরভাগ সময়ই আমরা পানিতে ডুবে থাকি। আমাদের দেখার যেন কেউ নেই। পাবই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইলিয়াছ মিয়া বলেন, এখানকার একটি কারখানায় কেমিক্যালের পরিত্যক্ত বোতল ধোয়া পানি জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিশছে। এ কেমিক্যালযুক্ত দূষিত পানিতে চলাচল করতে গিয়েই অনেকের চর্মরোগ হচ্ছে।

শিল্পকারখানার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের মালিকদের পক্ষে বলেন, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প ব্লক-১ এর পানি নিষ্কাশন খালটি অপরিকল্পিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে খালটি সংস্কার করা হয়নি। এ কারণেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে পানি নিষ্কাশনের জন্য শিল্পকারখানার নিজস্ব অর্থায়নে ৮ ফুট গভীর করে খাল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ফকিরের দরগা এলাকা দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর হচ্ছে না। তবে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুশরাত জাহান বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যার ব্যাপারে কৃষকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্ত করে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

থেমে থেমে মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ধমকা হাওয়াও বইছে। উপজেলার তারাব পৌর এলাকা, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন, ভুলতা ইউনিয়নের ডিএনডি বাধের ভিতরের নিন্মাঞ্চল সহ গোটা উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের ঘরবাড়িসহ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজারে পানি জলাবদ্ধতার সৃষ্ঠি হয়েছে। প্রতিবছরই এসব এলাকার মানুষেরা এসময়টায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়েন। এদেও দুর্ভোগের সীমা নাই। ঘর থেকে বেড় হতে পারছেন না। রান্নাবান্না করতে পারছেন না। ময়লা পানি ঘওে প্রবেশ কওে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু আগঙ্কে আছেন তারা।

তলিয়ে গেছে হাট বাজার। বিশেষ করে নতুন বাজার এলাকায় প্লাবিত হওয়ায় প্রায় তিন শতাধিক দোকানপাটে পানি উঠে পড়েছে। পানির কারণে মালামালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ভেসে গেছে ফসলের মাঠ। কৃষকের মাথায় হাত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেলের (খাল) বিভিন্ন পয়েন্টে মিলকারখানার বর্জ্যে ও স্থানীয় অসচেতন মানুষের ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করার কারণে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে।

বাড়ি-ঘরে পানি উঠে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর হাঁটু থেকে শুরু করে কোমড় পর্যন্ত পানি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে খাল খনন প্রকল্প বিফলে চলে যাচ্ছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্যান্য ছোট বড় ক্যানেলগুলোর (খাল) বিভিন্ন পয়েন্ট দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে করে ওইসব ক্যানেলগুলো (খাল) দিয়ে পানি যাতায়াত করতে পারছে না।

উপজেলা পরিষদ সূত্র জানায়, রূপগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে হাজারো মিল-কারখানা রয়েছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা লোকজন জমি ক্রয় করে গড়ে তুলেছেন শত শত নতুন ঘরবাড়ি। এসব মিল-কারখানার বর্জ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেল (খাল) ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কোন স্থানে ক্যানেল ভরাট করে পাকা আধা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। আর এ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসলেরও। কয়েক বছর ধরেই খালে ময়লা-আবর্জনা ও মিল-কারখানার বর্জ্য ফেলে পানি যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ও বৃষ্টির দিনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে লক্ষ্যাধিক মানুষ। মানুষ খালে ময়লা ফেলছে। ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন মিল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য। কচুরিপানায় ভরে গেছে খাল।

উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, প্রশাসনকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। যাতে খালগুলো দখল বা ভরাট না হয়ে যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শাহজাহান ভুইয়া বলেন, যারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে বা বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে খাল ভরাট করে পানি যাতায়াতে বাধার সৃষ্টি করছে এবং জবর দখল করে রেখেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, খুব দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যে পানি সরে যাবে। তখন আর দুর্ভোগ থাকবে না।

 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে