নাটোরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
                        
                        
                            
                                 আগামী নিউজ | আব্দুল মজিদ, নাটোর জেলা প্রতিনিধি                                 প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২১,  ০১:২৬ পিএম                            
                            
                            
                        
                        
                        
                                                     
                            ছবিঃ আগামী নিউজ
                                                
                            
                            
                            
                            
                        
                        নাটোরঃ জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহার বিরুদ্ধে করোনা ভ্যাকসিনের কার্যক্রম পরিচালনা না করেও বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষনিক বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। 
 
তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা প্রতিরোধে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা ও অপারেশনাল কস্ট এর বরাদ্দকৃত অর্থের বাজেট ঘোষণা করেন। এমএনসিএন্ডএএইচ এর লাইন ডাইরেক্টর ডাক্তার মোহাম্মদ শামসুুল হক সে অনুযায়ী জেলার অন্যান্য উপজেলার ইউনিয়ন সংখ্যা অনুযায়ী বরাদ্দ ঘোষণার পাশাপাশি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৫টি ওয়ার্ডের জন্যও সর্বমোট প্রায় ১৭লক্ষ ৪৯হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
 
বিবরণীতে বলা হয়, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট ১২টি টিম টিকাদানকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে কাজ করবেন। প্রতি টিমে ২জন করে টিকাদানকারী মোট ২৪জন এবং ৪জন করে স্বেচ্ছাসেবী মোট ৪৮জন। এতে করে বারোটি টিমে সর্বমোট জনবল থাকার কথা ৭২জন।
 
খরচের বিবরণীতে সংশ্লিষ্ট সকলের আপ্যায়ন, ডিস্ট্রিবিউট পয়েন্ট পর্যন্ত ভ্যকসিন ও লজিস্টিক পরিবহন ব্যয়, ভিজিট ব্যয়, স্বাস্থ্য সামগ্রী ব্যয়, অনিয়মিত শ্রমিকদের খরচ এবং অংশ গ্রহনকারীদের সম্মানীভাতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সে অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত বাজেট বরাদ্দ পাঠালেও ভ্যকসিনের অভাবে জেলার কোথাও ইউনিয়ন পর্যায়ের এসকল টিকাদান ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়নি। ফলে জেলা থেকে শুধুমাত্র উপজেলা পর্যায়ে ভ্যকসিন আনা-নেয়া সহ অন্যান্য কিছু খরচ হলেও মোট বরাদ্দের একটা বড় অংশ জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সরকারকে ফেরত পাঠায়। কিন্তু বাগাতিপাড়া উপাজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা সকল কার্যক্রমের ভুয়া ভাউচার তৈরী করে সেগুলো স্বাস্থ্য বিভাগে অর্পণ পূর্বক বরাদ্দের সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
 
এব্যাপারে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা দাবি করেন, আমি নিয়ম মেনে সকল কাজ সম্পন্ন করে বিল উত্তোলন করেছি। আমার কাজের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ কেউ দিতে পারেনি। 
 
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দয়ারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়ন এলাকায় ভ্যকসিন ও প্রশিক্ষণের কোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। একই কথা বলেছেন ৩নং বাগাতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান।
 
ভ্যাকসিনের অভাবে ওই সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও টিকাদান না হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন জানান, কার্যক্রমগুলো না হওয়া বরাদ্দের একটা অংশ ফেরত পাঠিয়েছেন তারা।
 
সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান জানান, ওই সকল কার্যক্রম না হওয়ায় অন্যান্য উপজেলা থেকে সংশ্লিষ্ট টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে বাগাতিপাড়া উপাজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা কাজ না হওয়া বরাদ্দের টাকা ফেরত পাঠিয়েছেন কিনা তাৎক্ষনিক তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন জানান, যে বরাদ্দ হয়েছিলো তা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য। যেহেতু ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যক্রম হয়নি তাই তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো শুধুমাত্র যে টাকা খরচ হয়েছে তার বিল করে বাকী টাকা অধিদপ্তরে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু তিনি অন্য উপজেলা থেকে ওই বিল ভাউচার তৈরী করে বরাদ্দের সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছেন। 
 
বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল এর কাছে অনিয়মের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের বরাদ্দের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাকে কিছু জানাননি। তবে তার দপ্তরে এমন একটি অভিযোগ এসেছে, যা খুব দ্রুতই তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।