Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নাম বললেই মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোড চলে যায় !


আগামী নিউজ | কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২০, ১২:৫৫ এএম
নাম বললেই মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোড চলে যায় !

ঢাকা: আত্মবিশ্বাস ও প্রবল স্মরণশক্তির মাধ্যমে জন্মান্ধ মিজানুর রহমান ফ্ল্যাক্সিলোড, বিকাশে টাকা লেনদেন করাসহ প্রায় ৫ হাজার মোবাইল ফোন নম্বর মুখস্থ বলতে পারে। ওই এলাকায় অধিকাংশ লোকজন জন্মান্ধ মিজানুরের কাছেই টাকা ফ্ল্যাক্সিলোড করে।

জন্ম থেকে দুই চোখই অন্ধ। তার নাম মিজানুর রহমান।বর্তমান বয়স ২৫ বছর। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল টাঙ্গারিপাড়া গ্রামের তার জন্ম।


বাবার নাম মোনতাজ আলী ও মায়ের নাম মোমেনা খাতুন। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। ছোট বোন মরিয়মের বিবাহ দেয়া হয়েছে।

মিজানুর চোখে না দেখেই ফ্ল্যাক্সিলোড, বিকাশে টাকা লেনদেন করতে দেখেন অনেকেই। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে অত্র এলাকার পরিচিত মানুষের সব মোবাইল নম্বর তার কাছে মুখস্থ। ফ্ল্যাক্সিলোড করতে গেলে নম্বর না বলে ব্যক্তির নাম বললেই টাকা চলে যায় মোবাইলে ফোনে।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ায় ইচ্ছা থাকার পরেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। এ দুঃখ তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। তাই বাধ্য হয়ে টাকা উপার্জনের পথে নামে। কিন্তু শুরুর দিকে তাকে নানা ধরনের অবহেলার শিকার হতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেধা ও স্মরণশক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে। এখন সে ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসা করে পরিবারের অর্থ সংকট অনেকটা কমিয়েছে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফ্ল্যাক্সিলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে অন্ধ মিজানের। দীর্ঘ দিন ধরে এ কাজ করলেও একবারও ভুল করেনি। মোবাইল নম্বর তার লিখে রাখার প্রয়োজন হয় না। পুরো দিনের হিসাব মুখস্থ থাকে তার।

চোখে না দেখে মোবাইল ফোনে টাকা লেনদেন করা হয় কিভাবে? এ বিষয় জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, কোন বাটনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের উপর হাত রেখে বলে দিতে পারি। ব্যবহার করতে করতে আমার সব জানা হয়ে গেছে। ফ্ল্যাক্সিলোড করার ক্ষেত্রে মোবাইলে কোন বাটুন টিপতে হবে, কোন অপশনে যেতে হবে-সেটাও আমার জানা হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমি ইউনম্যাক্স, ওয়ালটন ও নোকিয়া কোম্পানির সেট ব্যবহার করছি। এতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিকাশে (ব্র্যাক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং) বা রকেটে (ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিং) টাকা পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু ইনকামিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির হট লাইনে কথা বলে নিশ্চিত অথবা অন্য কারো সহযোগিতা নিতে হয়।

জন্মান্ধ এই যুবক বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন আমার অন্ধ দুই চোখের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো এবং অর্থ উপার্জন করে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণপোষণে সহযোগিতা করতে পারবো।

রৌমারী উপজেলার টাপুরচর বাজারে মিজানের দোকানে গিয়ে বিস্তারিত কথা হয় তার সঙ্গে।

তখন পার্শ্ববর্তী এক দোকানদার জিয়াদ আহমেদ বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতোই মিজান কাজ করছে। গ্রাহকদের সঙ্গে টাকা লেন-দেনে কোনো ঝামেলার ঘটনা আমি দেখিনি।

ওই দোকানের ঘর মালিক চাঁন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি যখন জানতে পারি অন্ধ মিজান টাকা ফ্ল্যাক্সিলোড দিতে পারে। যেহেতু তার কোনো সহায় সম্বল নেই, তখন এই বাজারে আমার একটা দোকানঘর তাকে ভাড়াবিহীন ব্যবসা করার জন্য দিয়েছি। সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততো দিন তার কাছে ঘরভাড়া বাবদ কোনো টাকা নিবো না।

মিজানের বাবা মোনতাজ আলী বলেন, সে জন্ম থেকেই অন্ধ। চিকিৎসার জন্য তাকে উলিপুর, রংপুর ও দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেছি। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার চোখের অপারেশন করতে চেয়েছিল, কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে মিজানের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, মেম্বারও চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকবার গিয়েছিলাম তারা আমার ছেলেটাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সাহায্য করেনি। বর্তমানে সে টাকা উপার্জন করে পরিবারকে সাহায্য করবো।

বন্দবেড় ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, এ বিষয় আমি জানি না, তবে খোঁজ খবর নিয়ে আমার পরিষদ থেকে যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করার দরকার আমি তা করবো।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার স্মৃতি বলেন, অন্ধ মিজানুরের বিষয় নিয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। সরেজমিনে গিয়ে অবশ্যই তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, মিজানুর আসলেই জন্মান্ধ, ইতিমধ্যে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে।


আগামীনিউজ/রাফি/নাঈম
 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে