Dr. Neem on Daraz
Victory Day

আজ গাজীপুর মুক্ত দিবস


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২১, ১১:০৯ এএম
আজ গাজীপুর মুক্ত দিবস

ফাইল ছবি

আজ ১৫ ডিসেম্বর, গাজীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে গাজীপুরকে মুক্ত ঘোষণা করেন।

ভৌগলিক কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল গাজীপুরে। নভেম্বরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্মুখী গেরিলা অভিযান জয়দেবপুর সেনানিবাস, সমরাস্ত্র কারখানা, রাজেন্দ্রপুর অর্ডন্যান্স ডিপোসহ পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে পরিকল্পিত আক্রমণ শুরু করে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত ও বিপর্যস্ত পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিয়ে সেনাঘাঁটিতে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক জানান, ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার জয়দেবপুর, যা বর্তমানের গাজীপুর। ঐ দিন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে জয়দেবপুরবাসী। সেদিন শহিদ হন নিয়ামত, হুরমত ও মনু খলিফা। আহত হন অনেকে। সারা দেশে সেদিন স্লোগান উঠেছিল, ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।

১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর গাজীপুর সেনানিবাসে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এতে হানাদার বাহিনী একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা গাজীপুর ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা ও রাজেন্দ্রপুর অর্ডন্যান্স ডিপো থেকে হানাদারেরা ঢাকার পথে চান্দনা চৌরাস্তায় জড়ো হতে থাকে। এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চল, অর্থাত্ ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল থেকে আসা ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও কাদেরিয়া বাহিনীর আক্রমণে হানাদারেরা নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে টিকতে না পেরে তারা ঢাকার দিকে পিছু হটতে থাকে। তারা টাঙ্গাইল সড়কযোগে পিছু হটে চান্দনা চৌরাস্তায় একত্রিত হতে থাকে। পিছু হটার সময় তারা কড্ডা ব্রিজ পুরো ধ্বংস করে দেয়। ফলে পিছু ধাওয়াকারী মিত্র ও কাদেরিয়া বাহিনী কোনাবাড়ী হয়ে কাশিমপুরে অবস্হান নেয়। চান্দনা চৌরাস্তায় জড়ো হওয়া হানাদার বাহিনীর বিরাট একটি সাঁজোয়বহর ঢাকার দিকে রওনা দেয়।

পথে ছয়দানা এলাকায় পৌঁছালে কাশিমপুর থেকে মিত্র ও কাদেরিয়া বাহিনী তাদের ওপর কামান ও মর্টারের শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একই সঙ্গে সড়কের দুই পাশে প্রবল গুলিবর্ষণে হানাদার বাহিনী একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ধ্বংস হয় ট্যাংক, কামান, মর্টার, যানবাহন ও গোলাবারুদ। হতাহত হয় অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকার কাছে এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। তাদের ওপর গোলাবর্ষণ ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ঐ দিনই গাজীপুর মুক্ত হয়। প্রতি বছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত ও শহিদদের স্মরণ করা হয়ে থাকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ছাত্তার মোল্লা বলেন, ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’  এটি আমাদের স্লোগান। এই স্লোগান নিয়ে ১৯ মার্চ গাজীপুর তৎকালীন জয়দেবপুরে শুরু হয়েছিল হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ। সেদিন শহীদ  হয়েছিল নিয়ামত, হুরমত ও মনু খলিফা।  আজও সেই স্মৃতিগুলো ভেসে আসে। ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তির আনন্দ।

আগামীনিউজ/নাসির

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে