ছবি: আগামী নিউজ
নাটোর: এলাকায় বসবাস শুরু প্রায় ৭শ বছর আগে। একজন থেকে ওই বংশে এখন শত শত মানুষ। কিন্তু এতদিন তাদের মধ্যে ছিল না কোন একতা। ছিল না পারস্পরিক লেন-দেন। ছিল না পরস্পরের প্রতি তেমন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা কিংবা স্নেহের সম্পর্ক। যেন একই গাছে জন্ম হলেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ঝরে পড়ছিল এক একটি পাতা। ছিন্ন হচ্ছিল গাছের সাথে সম্পর্ক।
বাতাসের তোড়ে যেন চলে যাচ্ছিল ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। সেখানেই আবার হচ্ছিল নতুন গাছ ও পাতা। আবার অনেকেই অনাদরে-অবহেলায় ধীরে ধীরে হচ্ছিল নিঃশেষ। বংশের মানুষগুলোর অনেকেই পথ হাড়িয়ে যেন ধীরে ধীরে অন্ধকারে দিকবিদিক ছুটছিল । এভাবেই কেটে গেছে প্রায়, ৭শ বছর। অবশেষে প্রকৃতির নিয়মেই এবার যেন সেই অবস্থার পরিবর্তন হল। জ্বলে উঠলো বংশের প্রদীপ। অন্ধকার দূর করে আলোকিত করলো পুরো বংশকে।
ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা এলাকার চকহরি রামপুর গ্রামে। বংশের প্রদীপ আখ্যা পাওয়া ওই ব্যাক্তির নাম রফিকুল ইসলাম প্রামাণিক।
সম্প্রতি তিনি নিজ বংশের মানুষদের একত্রিত করেন। আয়োজন করেন নিজ বংশীয় বৃদ্ধদের বরণ, আলোচনা শেষে নতুন প্রজন্মদের গড়ার প্রত্যয়ে বংশীয় কল্যাণ সংগঠন।
চকহরিরামপুর গ্রামের রুস্তম আলী প্রামাণিকের ছেলে রফিকুল ইসলাম প্রামাণিক। ঢাকার তীতুমীর কলেজ থেকে গণিতে মাস্টারর্স ডিগ্রী অর্জন করেন ২০০৫ সালে। এরপর কোন চাকুরী না করে বেছে নেন ব্যাবসা। বর্তমানে তিনি এলাকার বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
রফিকুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, ওই গ্রামে তাদের বংশের বসবাসের ইতিহাস প্রায় ৭শ বছরের। তবে সকলের নামের তালিকা সংগ্রহ না হলেও তিনি তার দাদার দাদার নাম পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বাড়ির পাশে নিজ আম বাগানে আপন বংশের ৩৬ পরিবারের ২১৫ জনকে একত্রিত করেন। তার ১০ চাচাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় তারই ভাতিজীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। আপন বংশের মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে গঠণ করা হয় 'নব প্রজন্ম প্রামাণিক' নামে কমিটি। তাকে সভাপতি ও চাচাতো ভাই রাজুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি ঘেষণা করা হয়। ঐক্যবদ্ধভাবে আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যেশ্য স্থির করে কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় রচনা করা হয় ১০ টি নীতিমালা।
এলাকায় কারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থান, ফান্ড গঠন করে ভবিষ্যত প্রজন্মের পড়ালেখার খরচ ও চাকুরী প্রার্থীদের সার্বিক সহায়তার পাশাপাশি বয়স্ক-রেগাক্রান্তদের সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা বিষয়ে বিস্তর আলোচনা শেষে গৃহিত হয় নানা পদক্ষেপ।
অনুষ্ঠান শেষে ফুল দিয়ে বরণ ও সম্মানীত হওয়া বৃদ্ধদের চোখে দেখা যায় আনন্দ অংশ্রু। আবেগে আপ্লুত হয়ে তারা বলতে থাকেন, প্রায় ৭শ বছর পর জ্বলে উঠলো প্রামাণিক বংশের প্রদীপ। ওই প্রদীপের অগ্রনী ভূমিকায় বংশের নানা সমস্যা হবে দূরীভুত। নতুন উদ্যম আর উৎসাহে এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম।
গ্রামের গন্ডি পার হয়ে ওই বংশের প্রদীপের আলোয় আলোকিত হবে দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিশ্ব দরবার-এমনি প্রত্যাশা করেন তারা।
আগামীনিউজ/ হাসান