Dr. Neem on Daraz
Victory Day

প্রভাবশালীদের আস্কারায় হকারদের দখলে ফুটপাত


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০২:৪৭ পিএম

ঢাকাঃ করোনাকালীন মুহূর্তেও রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। ফুটপাতে হকারদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ছাড়াই ব্যবসা করছেন। রাজধানীর গুলিস্তান, নীলক্ষেত, ফার্মগেট, মহাখালী, উত্তরা, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিন ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের মধ্যেও জীবন বাঁচানোর তাগিতে কর্মজীবী মানুষ ছুঁটে চলছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। এতে দিনদিন রাস্তায় মানুষের সমাগত বাড়ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে রাজধানীতে রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত দখল করে পসরা বসিয়েছেন হকাররা। এতে চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে পথচারীদের। ইচ্ছে থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারছেন না পথচারীরা। ফলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সরেজিমন দেখা গেছে, শীতকে সামনে রেখে রাজধানীর গুলিস্তান, নীলক্ষেত, ফার্মগেট, মহাখালীসহ ব্যস্ততম এলাকাগুলোর রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত দখল করে পসরা বসিয়েছেন হকাররা। এমনভাবে ফুটপাত দখল নিয়েছেন, যেখানে পথচারীরা বাধ্য হয়ে ধীরগতিতে হাঁটছেন। ফলে একজন পথচারী অন্যজনের শরীরের সঙ্গে লাগছেন। এখানে স্বাস্থ্যবিধি কোন বলাই নেই। হকারদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোন সংস্থাকেই মাঠে দেখা যায়নি। ফুটপাত ছাড়াও কোথাও কোথাও আবার সড়ক দখল করে গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ছে, বাড়ছে যানজট। করোনার মাঝেই কোথাও আবার অবৈধ স্থাপনা করা হয়েছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী ও পুলিশের চাঁদাবাজি।

নামপ্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন হকার বলেন, করোনার মধ্যেও ফুটপাতে ব্যবসা করতে গিয়ে চাঁদা দিতে হচ্ছে। ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন দোকান প্রতি ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সংসার চালানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছি।

আজিমপুরের বাসিন্দা আবদুল বক্করসহ কয়েকজন বলেন, হকারদের কারণে ফুটপাতে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস একটি সংক্রমণ রোগ হওয়ায় বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অফিসের উদ্দেশে রওনা হই কিন্তু রাস্তায় চলাচল করতে গেলে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একজন পথচারী অন্যের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে চলাচল করছেন। কোন মানুষ ভুলবশত বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের না হলে অন্যজনের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এতে শুধু একজন মানুষ নিজের নয় পুরো পরিবারের হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন।

আউব আলী মোল্লা নামে আরেকজন পথচারী বলেন, করোনাভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা পরীক্ষা ছাড়া কখনই নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কোন মানুষের জ্বর হলে পরীক্ষা ছাড়াই তিনি যদি রাস্তায় বের হোন তখন অন্য পথচারীরা বুঝতে পারবেন না। মানুষটি করোনায় আক্রান্ত কিনা। করোনার মতো এমন মরণব্যাধি রোগেও ফুটপাত দখলে রেখেছেন হকার্স। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। ফুটপাত হকার মুক্ত থাকলে পথচারীরা কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারতেন।

করোনাকালীন সময়ে ফুটপাতে হকারদের পসরা বসানোর বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. ফজলুর রহমান আজ (বৃহস্পতিবার) আগামী নিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের সব দেশের সরকারকে জীবন-জীবিকার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়। তিনি বলেন, বিশেষ করে এই শীতকে সামনে রেখে  নিম্নবৃত্ত মানুষ ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে উপকৃত হয়। ফুটপাতে বেচাকেনা যেমন বিবেচনায় রাখতে হবে তেমনি এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ভিড় করা যাবে না। ঢাকার দুই সিটির মেয়র বিবেচনায় নিতে পারেন যেন, ফুটপাতে ভিড় না হয়। ফুটপাত থেকে হকারদের বিদায় করে দিলে দরিদ্র মানুষদের কষ্ট হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কিভাবে বেচাকেনা করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলে মনে করছেন এ বিশেষজ্ঞ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী আগামী আজ (বৃহস্পতিবার) নিউজকে বলেন , করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর পরই কিছুদিন দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও বর্তমানে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত সবার কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ এটি মানতে চাচ্ছে না, মানতে আগ্রহী না অথবা মানতে পাচ্ছে না। বিশেষ করে, রাজধানীর রাস্তার দু’পাশে যেভাবে হকারদের রাজত্ব সত্যি তো সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা যায় না। ঈদের আগে হকারদের উচ্ছেদ করা যদি কঠিন হয় তাহলে রাস্তার একপাশে বসুক। যেমন অফিস ছুটির সময়ে হকারদের ফুটপাতে বসতে দেয়া যাবে না। অফিস ছুটির পড়ে বসুক। এ বিষয়ে নীতিনির্ধাকরা কর্ণপাত করছেন না। করোনাকালীন যত জনঘনত্ব কমানো যায় স্বাস্থ্যের জন্য ততই ভালো। পুরো ঢাকা ফুটপাতের মার্কেট হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক, সেকেন্দার হায়াৎ আজ (বৃহস্পতিবার) আগামী নিউজকে বলেন, জীবন বাঁচানোর তাগিতে ঝুঁকি নিয়ে হকারদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। সেখানে সব হকারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে ফুটপাত দখল করে হকারদের বসার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. রাসেল সাবরিন আজ (বৃহস্পতিবার) আগামী নিউজকে বলেন, করোনা মুহূর্তে সিটি করপোরেশন ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রেখেছে। কয়েকদিনের মধ্যে ফের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক আজ (বৃহস্পতিবার) আগামী নিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান করছে না। বর্তমানে জনঘনত্ব কিংবা হকারদের দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তাদের হাতে মূলত স্বাস্থ্যবিধির দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে হকারদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেই এ মুহূর্তে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান মামুন আজ (বৃহস্পতিবার) আগামী নিউজকে বলেন, হকারদের উচ্ছেদের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে নগরবাসীর স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি শুধু সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব নয়। সিটি করপোরেশন নিয়মিত নগরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে।

এদিকে রাজধানীতে করোনার মধ্যেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাবার দোকান। এই খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে জনসাধারণ। দীর্ঘদিন থেকে এমন পরিবেশে খাবার বিক্রি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বা অভিযান দেখা যায় না।

কাকরাইলে রাজস্ব ভবনের সামনেও বেশ কিছু খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে, এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার ফুটপাথে খোলা আকাশের নিচে, ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে কেউ কোনোরকম ঘর তুলে অপরিচ্ছন্নভাবে নানারকম খাবার বিক্রি করছে। এসব তালিকায় আছে ভাত, মাছ-মাংস, সিঙ্গারা, রুটি, বার্গার, শিককাবাব, হালিম, ফুচকাসহ নানা ধরনের খাবার। এসব খাবার খেয়ে শ্রমজীবীসহ সাধারণ মানুষ পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছেন। করোনার প্রকোপে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও লকডাউন তুলে নেওয়ার পর আবারও চালু হয়েছে এই হোটেলগুলো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের হোটেলগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র। রাস্তার পাশে বানানো হচ্ছে রুটি। পাশেই বিভিন্ন পাত্রে খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে ভাত-তরকারি। পানির ড্রামও আছে মুখ খোলা অবস্থায়। সামাজিক দূরত্ব না মেনেই খেতে বসছেন ক্রেতারা। একই চিত্র দেখা যায় কমলাপুর রেল স্টেশনে। ব্যস্ত রাস্তার ধারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করছে ভাজাপোড়া। সেখানেও খোলা অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে বার্গার, নুডলস, হালিমসহ বিভিন্ন খাবার।

রাস্তার পাশের হোটেল ব্যবসায়ী রুস্তম আলী আগামী নিউজকে বলেন, খাবারের পরিবেশ নিয়ে কেউ কোনো দিন কথা বলেনি। খাবার ঢেকে রাখার দাবি করে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদের পর তা আর হয়নি।’ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘আমরা এসব হোটেলের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে হোটেল ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সচেতন করেছি। তবে সচেতন করার দুই-তিন দিন পর থেকে তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু করোনার কারণে কাজ করতে পারিনি। তবে শিগগিরই হোটেলগুলোর খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হবে।’

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে

জাতীয় বিভাগের আরো খবর