 
                            
                                                ঢাকাঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করেছেন তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডেকেছেন, আসলে ভালো, না আসলে সেটা তার ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউনূসসহ ১৩ জনকে তলব করেছে দুদক। যদিও সকাল থেকেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এরপর বিকেলে দুদক চেয়ারম্যান অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি কমিশনের কাজ নয়। কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় মামলা হবে কী, হবে না। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে, এখন তদন্ত কর্মকর্তা ঠিক করবেন কাকে তিনি ডাকবেন। তিনি যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকেই ডাকবেন। এটা তার নিজস্ব বিষয়। তলবের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আমি জেনেছি। তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করেছেন তাই তাকে ডেকেছেন, আসলে ভালো, না আসলে সেটা তার ব্যাপার।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘তাকে হয়রানি কেন করা হবে? শ্রমিকদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে কারখানা পরিদপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক তদন্ত করেছে ও মামলা হয়েছে। এটাকে হয়রানি কেন বলছেন?’
অন্যদিকে সংস্থার উপ-পরিচালক ও মামলার বাদী গুলশান আনোয়ার প্রধান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তলবের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন তিনি ।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন দুদকের তলবের বিষয়টি গণমাধ্যমে ফাঁস করেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদসহ ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে ২৫.২২ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। আগামী ৫ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টায় উপর্যুক্ত বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্তকার্যে সহযোগিতা করতে আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে, গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সাথে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও হিসাব খোলা হয় একদিন পূর্বে ৮ মে। সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব।
এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২০২২ সালের ১০ মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে ২২ জুন অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে মোট ৩ কোটি টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের হিসাবে ৩ কোটি ও সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।
একইভাবে অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ ও অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।
দুদকের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। যা দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কারণে আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এমআইসি
-20251013141837.jpg) 
      -20251013095452.jpg) 
       
       
       
      -20250923081410.jpg) 
       
       
       
      -20250815155757.jpg)