Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২২, ০৯:০৫ এএম
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

ঢাকাঃ ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যির মধ্যে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ শনিবার (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী।

আগামীকাল রোববার মহাসপ্তমী। সপ্তমী তিথীতে নবপত্রিকা স্নান ও সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে কলাবউ স্থাপন করা হবে। এইদিনেই প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃন্ময়ীতে। সোমবার মহা অষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবে। এইদিনই হবে সন্ধীপূজা। মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় দেবীর ৬ষ্ঠ রূপ ‘উমা’।

মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিতপূজা। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ১৬টি উপাদানে দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা।

সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। আকাশে-বাতাসে এখন শারদ উৎসবের বিন্দাস শিহরন। শিল্পী তার তুলির নিপুণ আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় উদ্ভাসিত করে তুলেছে মহিষমর্দিনীকে। কুমারটুলী থেকে প্রতিমার অধিষ্ঠান হয়েছে মণ্ডপে। বোধনে খুলে গেছে তার আয়ত চোখের পলক। অসুর বধে চক্র, গদা, তির, ধনুক, খড়্গ-কৃপাণ-ত্রিশূল হাতে মাতৃরূপেণ দেবী হেঁসে উঠেছেন। ধূপের ধোঁয়ায় আজ সায়ংকালে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর মন্দিরার চারদিক কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিতদের জলদকণ্ঠে :‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমঃ নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দুর্গা পিতৃগৃহে আসবেন গজে। বিশুদ্ধ হিন্দু পঞ্জিকামতে—ফল-শস্যপূর্ণা হবে বসুন্ধরা।

‘সুদর্শন’ পঞ্জিকামতে, বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর ৫ অক্টোবর বুধবার বিজয়া দশমীতে দেবী বিদায় নেবেন নৌকায়। হিন্দু শাস্ত্র মতে—দেবীর নৌকায় গমনের মধ্য দিয়ে ফল—অতিবর্ষণ-বন্যা। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মোড় থেকে মন্দির প্রাঙ্গণের দিকে এগিয়ে যেতে চোখে পড়ছে লাল-নীল আলোর চোখ ধাঁধানো খেলা। মন্দিরের প্রবেশ তোরণ থেকে মন্দির জুড়েই বর্ণিল আলোকের রূপবিন্যাস। দেশের প্রতিটি মন্দির আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত করে তোলা হয়েছে। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে পূজার বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।

হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা ৫০টি বেড়েছে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।

এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গণে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে