Dr. Neem on Daraz
Victory Day
রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়া নির্মাণ বন্ধে

প্রধানমন্ত্রীকে মানবাধিকারের চিঠি


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২০, ০৯:৫০ পিএম
প্রধানমন্ত্রীকে মানবাধিকারের চিঠি

ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলিতে যোগাযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও চলমান কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫০ টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার খোলা চিঠি

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য কর্মরত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন সহ ৫০ টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করা এবং চলমান মোবাইল ইন্টারনেট বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এবং শরণার্থী, মানবিক সহায়তা কর্মী ও বাংলাদেশর সাধারণ জনগণের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্যে অবাধ আদান প্রদানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছে। এই মহামারির বিস্তারকালে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের কেবল হালনাগাদ ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নির্দেশিকা দ্রুত গ্রহণ এবং আদান-প্রদানেই সক্ষম করবে না,  কমিউনিটি লিডারদের সাথে সমন্বয়েও সহায়তা করবে। মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠি এবং মানবিক সহায়তাকর্মীরা যাতে একইভাবে মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবায় অবাধে প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শরণার্থীদের যোগাযোগ ও তথ্যে অবাধ অভিগমন ও প্রবেশ  করার ক্ষমতা সীমিত করেছে। ইন্টারনেটে বিধিনিষেধের কারণে পুরোপুরি সচেতনতা ছড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে সেখানে কোভিড-১৯ মহামারিটি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।    

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সিম কার্ড সংগ্রহে বাধা দিয়ে আসছে এবং টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলিতে ইন্টারনেট কভারেজ সীমিত করার নির্দেশ জারি রেখেছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারের মতে, কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বরের পর থেকে শরণার্থীদের কাছ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি সিম কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে এবং শরণার্থীরা জানিয়েছেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোন ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে।  

যারা কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলি অনুভব করছেন তাদের প্রতি সরকারের নির্দেশনা হল, তারা যাতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনে যোগাযোগ করেন। সরকারের এই পরামর্শের আলোকেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া উচিত।

কেননা, ফোন বা সিম কার্ড ছাড়া এই নির্দেশনা মেনে চলা অসম্ভব।  এছাড়াও মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবায় অবাধ প্রবেশ না থাকলে মানবিক সহায়তা কর্মী ও অন্যরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরী তথ্য ব্যক্তিগতভাবে সরবরাহ করতে বাধ্য হবেন, যা তাদের কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে এবং প্রতিকার ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে ধীর করবে।

গত ১৯ মার্চ জাতিসংঘ, অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) এবং অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) প্রভৃতি সংগঠনের বিশেষজ্ঞরা সব সরকারকে কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে  ‘দ্রুততম ও সর্বোচ্চ বিস্তার সম্ভব ইন্টারনেট সেবায় তাৎক্ষণিক প্রবেশ নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।  তারা এটিও উল্লেখ করেছেন যে, ‘বিশেষত জরুরী সময়ে, যখন তথ্যে অবাধ প্রবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তখন জনশৃঙ্খলা বা জাতিয় নিরাপত্তাকে ঢাল বানিয়ে ইন্টারনেট পরিসেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরোপিত ব্যাপক বিধিনিষেধকে ন্যায়সঙ্গত বলে মানা যায় না।’

এই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সঠিক ও সময়োপযোগী তথ্য প্রচারে এবং শিবিরগুলিতে ও সংলগ্ন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি প্রশমনে মানবিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রোহিঙ্গা নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলোর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করা। যাতে অহেতুক আমলাতান্ত্রিক বাধার সম্মুখীন না হয়েই অধিকসংখ্যক মানবিক স্বাস্থ্যসেবাকর্মী নিরাপদে বাংলাদেশে ও শিবিরগুলোতে প্রবেশ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ভ্রমণ বিধিনিষেধকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করা উচিত।  

সংগঠন গুলি এই চিঠিতে শরণার্থী শিবিরগুলির চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিষয়েও তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের আচরণ প্রতিবিম্বিত করার ঝুঁকি নিয়েছে, যারা কিনা বর্তমানে রাখাইন রাজ্যের পাঁচটি শহরতলীতে ২০টিরও বেশি অন্তরীণ শিবিরে ১ লাখ ২৫ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গাকে বন্দী করে রেখেছে।  এর পরিবর্তে বাংলাদেশের উচিত চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্যসহ স্বাস্থ্য সেবায় যথাযথ অভিগমন নিশ্চিত করা।  প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি, নারী এবং শিশুরাসহ শরণার্থী শিবিরগুলোতে যারা সবচেয়ে বেশি দুর্বল তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমষ্টিগতভাবে এখনো দুর্বল। এই সময়ে শিবিরগুলিতে মানবিক সেবা কার্যক্রমে অভিগমন বজায় রাখা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারী, পুরুষ এবং যুবসমাজকে এই মুহূর্তে তাদের কমিউনিটিকে সহায়তা করার মতো উপযুক্ত করে তোলাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাসেবীরাই এই সঙ্কটে প্রথম সাড়াপ্রদানকারী হবেন এবং তাদের অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্যের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যে প্রবেশিধকার ও চলাচলের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য অনুরোধ করেছে।  সময় মত কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে শরণার্থী ও নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করার জন্যও তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।   

আগামী নিউজ/সুমন/ ডলি/ নাঈম/ তাওসিফ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে