Dr. Neem on Daraz
Victory Day
বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার

নীলফামারীর বার সভাপতির হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩, ১১:২১ এএম
নীলফামারীর বার সভাপতির হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা

ফাইল ছবি

ঢাকাঃ আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অপেশাদারিত্বমূলক দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ব্যাখ্যা দিতে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলম হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার লিখিত আবেদন করেছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন আমরা হাতে পেয়েছি।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

এর আগে, গত ২৫ জানুয়ারি অভিযুক্তদের তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাদের তলব করা হয়। ওইদিন আদালত বলেছিলেন ৮ ফেব্রুয়ারি সশরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে তাদেরকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

একই সঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ তারা উপস্থিত হলেন।

গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো পত্রে বলা হয়— গত ২৮ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির দিন ছিল। আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভুক্তভোগী মোছা. মারুফাকে পরীক্ষা অঙ্কে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। অপর আসামিদের জামিন আবেদন ও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করে জেল-হাজতে পাঠানো নির্দেশ দেই।

ওই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের সহযোগী আইনজীবীরা মারমুখী আচরণ করেন। এ ছাড়া আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে গালাগাল করেন এবং হামলার চেষ্টা করেন। হুমকি দিয়ে তারা বলেন— ‘জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নেই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক। কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো, আইন-কানুন জানো না। নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর। এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টাপাল্টা আদেশ দাও।’

এ পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোন ধরনের তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করার সময়েও ওই আইনজীবীরা আমাকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ ঘটনায় আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসেবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। পাশাপশি এ ঘটনার কারণে আমিসহ এ জেলার বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের সদয় মর্জি হয়।

গত ২৯ ডিসেম্বর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন।

এরপর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আদেশের জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে।

খুলনা, পিরোজপুর ও সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যদের তলব করেছেন আদালত।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে