Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সেনা হেফাজতে তিন জনের মৃত্যু, ফুঁসছে কাশ্মির


আগামী নিউজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম
সেনা হেফাজতে তিন জনের মৃত্যু, ফুঁসছে কাশ্মির

ভারতীয় সেনারা দক্ষিণ কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় একটি সাঁজোয়া যানের উপর পাহারা দিচ্ছে- ফাইল ফটো/ এএফপি

ঢাকাঃ ভারতের কাশ্মিরে পুঞ্চ জেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ৫ সেনা নিহত হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় ৮ জনকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পরে তাদের মধ্যে তিন জন মারা যান। এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফুঁসছে কাশ্মির।

আল জাজিরা ও টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের স্বজন ও গ্রামবাসীর দাবি, ওই ৩ জন ভারতীয় সেনাদের নির্যাতনের ফলেই মারা গেছেন।

খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পুঞ্চ জেলার রাজৌরি এলাকার ডেরা কি গালিতে অ্যামবুশ করে পাঁচ ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই ঘটনার পর টোপা মাস্তানদারা গ্রাম থেকে ৮ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে গত শুক্রবার ৩ জন মারা যায়। বাকিদের গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আর্মি হাসপাতালে।

নিহত ৩ জন হলেন- সাফির হোসাইন, শওকত হোসাইন এবং শাবির আহমেদ। গত শনিবার ওই ৩ জনের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ব্যক্তিদের নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তবে ভিডিওতে কোনো সেনার নাম পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। 

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, টোপা মাস্তানদারা গ্রামের সারপাঞ্চ মেহমুদ আহমেদ ভিডিওতে থাকা শওকত ও শাবির তার গ্রামের বাসিন্দা বলে শনাক্ত করেছেন। তবে কেন তাদের নির্যাতন করা হয়েছে তিনি তা জানেন না। ভিডিও থেকে দেখা গেছে, ওই তিনজন ভারতীয় সেনাদের পোশাক পরা ব্যক্তিদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইছেন। শওকতের চাচাও তাকে চিহ্নিত করেছেন। 

সেনা হেফাজতে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। রোববার সেনাবাহিনীর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘স্থানীয় কমান্ডারদের জবাবদিহি নির্ধারণের জন্য তিন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং শিগগিরই ব্যবস্থার মুখোমুখি করা হবে তাদের।’

অপরদিকে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় তারাও পৃথক তদন্ত চালু করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, সেনাবাহিনীও এই তদন্তে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে।

গত সাত মাসে অন্তত ২০ জন সেনার মৃত্য়ু হয়েছে কাশ্মিরের পুঞ্চ ও রাজৌরি সেক্টরে। তার মধ্য়ে কর্মকর্তা, স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডোরা রয়েছেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুনীল বার্তওয়াল বলেন, সেনাবাহিনীর উপর ওই আক্রমণের জন্য যেসব জঙ্গি দায়ী তাদের সন্ধানে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, তিন জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু কোন পরিস্থিতিতে ঘটেছিল সে ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এই তদন্তে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

রোববার ওই অঞ্চলের সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেন জম্মু ও কাশ্মির পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। ছিলেন ডিজি, এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা), এসএসপি, ডিভিশনাল কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনার। সকলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পরে ডিসি বলেন, ‘এই অঞ্চলে যাতে আর একটিও জঙ্গি হামলা না হয়, তা আমি নিশ্চিত করব। কথা দিচ্ছি। কোনোভাবেই আর আপনাদের নিরাপত্তাতে কোনও গাফিলতি থাকবে না। বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নজরদারি। নেওয়া হচ্ছে আরও কিছু ব্যবস্থাও।’

তবে প্রশাসনে কর্তাদের এমন কথায় মন গলছে না স্থানীয়দের। একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিসি সাহেব বললেন ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কী হয় দেখতে হবে। শুধু তাই-ই নয় আমাদের বাড়ির মানুষগুলোকে অকারণে যে সেনা মেরে ফেলল, তার তদন্ত কী হয়, তাও আমরা নজরে রাখব।’

রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত দাবি করেছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি মেহবুবা মুফতি প্রশ্ন করেছেন, ‘এটা কেমন নয়া কাশ্মীর, যেখানে সেনাসদস্য বা সাধারণ মানুষ নিরাপদ নয়?’

ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং অপনি পার্টিও শ্রীনগরে বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ করেছে।

সেনাসদস্যের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট। তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের একটি শাখা হিসেবে বর্ণনা করেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

এমআইসি/

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে