Dr. Neem on Daraz
Victory Day
সারাদেশে নিরুদ্দেশ ৫৫ জন

দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, ‘পরিবার জানে সন্তান বিদেশে’


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২২, ০২:৪১ পিএম
দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, ‘পরিবার জানে সন্তান বিদেশে’

ঢাকাঃ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। এরা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। তবে এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানে যে, তাদের সন্তান চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। তারা আবার নিয়মিত পরিবারকে অর্থও দেন। মূলত এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা দেশের দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। 

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই দফায় নিরুদ্দেশ হওয়া ৬ তরুণসহ মোট ১২ জনকে আটকের পর র‌্যাব বলছে, অন্তত ৫৫ জন কথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৮ জন পার্বত্য চট্টগ্রাম দুর্গম এলাকায় অবস্থান করছেন। তাদের অনেককে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

বাড়ি ছেড়ে যাওয়াদের সংগঠনের দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহসহ মোট ৫ জনকে রোববার (৯ অক্টোবর) রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এমনটিই জানা গেছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন,  ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের অধিক তরুণের তথ্য পেয়েছি, যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছে। এরা সর্বশেষ দুই বছর আগ থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া শুরু করেছে। সর্বশেষ দেড়মাস আগে কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিরুদ্দেশ হয়।’

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘নিরুদ্দেশ তরুণদের নাম-ঠিকানা আমরা পেয়েছি। এদের মধ্যে ৩৮ জন স্বেচ্ছায় হিজরতে রয়েছে। তাদের বিস্তারিত তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের বিষয় আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোন জেলায় কতজন নিরুদ্দেশ সেই তালিকাও আমরা পেয়েছি। নিরুদ্দেশ তরুণদের কারও কারও পরিবার জানে, সন্তান বিদেশে গেছে। মাঝেমধ্যে অর্থও পাঠায়। আসলে সে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে।’ এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেশের পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

জঙ্গি সংগঠনটি বিভিন্ন ধরনের চাঁদা আদায় করে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। কিছু বিচ্ছিন্ন সংগঠনও তাদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।

গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে এক ইমামসহ সাত জন নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। 

গত ৬ সেপ্টেম্বর চার তরুণকে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আট তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামে এক তরুণ রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নিলয়ের কাছে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তিন জন ও নিরুদ্দেশ চার তরুণসহ মোট সাত জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

শনিবার (৯ অক্টোবর) র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে কুমিল্লার শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২) ও নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. হোসাইন (২২), ঢাকার সূত্রাপুরের রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) এবং নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি ওরফে জায়দ চৌধুরীকে (১৯) আটক করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় ৫টি উগ্রবাদী বই, প্রায় তিনশ লিফলেট ও ৫টি ব্যাগ।

গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কোবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন।

পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষংছড়িতে হাবিবুল্লাহ প্রায় দুই বছর ধরে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। এছাড়াও তিনি অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেছেন বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রঙ মিস্ত্রী। সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। দীর্ঘ এক বছর যাবত সে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। 

গ্রেফতারকৃত রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করতো। সে গ্রেফতারকৃত হোসাইন এর মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হয়। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে প্রায় দুই মাস আগে নিরুদ্দেশ হয় বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হয়। সে নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয় বলে জানায়। 

নিখোঁজদের কেউ দেশ ছেড়েছে, তারা কীভাবেই টাকা পাঠাতেন পরিবারে? জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৩৮ জনের কাউকে এখনো আটক করতে পারিনি। দুই দফায় ৬ তরুণসহ আটক ১২ জন এই তালিকার বাইরে। তাদের ৩৮ জনের কাউকে আটক করা গেলে বোঝা যাবে কেউ দেশ ত্যাগ করেছে কি না। নিখোঁজদের কেউ কেউ পরিবারে টাকা দিচ্ছেন, পরিবার জানে তারা বিদেশে। তবে তারা দেশে থেকেই অল্প কিছু টাকা পরিবারে পাঠাচ্ছেন। ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা।

কমান্ডার মঈন বলেন, এটা অবশ্যই এলার্মিং যে নিরুদ্দেশ হয়ে ঘর ছাড়া। আমরা চেষ্টা করছি জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জনগণ কখনোই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি।

নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিরুদ্দেশ ৩৮ জনের তালিকা
নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিরুদ্দেশ ৩৮ জনের তালিকা

কোন জেলায় কতজন নিখোঁজ

নারায়ণগঞ্জে ৪ জন, নেত্রকোনায় একজন, নোয়াখালীতে একজন, পটুয়াখালীতে ছয় জন, ফরিদপুরে দুই জন, বরিশালে তিন জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, ময়মনসিংহে এক জন, মাদারীপুরে দুই জন, সিলেট সাত জন, সুনামগঞ্জে একজন, কুমিল্লায় ১৫ জন, খুলনা একজন, চাঁদপুর একজন, ঝালকাঠি দুই জন, ঝিনাইদহ একজন, টাঙ্গাইল একজন এবং ঢাকায় চার জন।

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে