Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পতিতা মাদক সরবরাহে পাপিয়ার কাহিনী


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ১১:৫১ পিএম
পতিতা মাদক সরবরাহে পাপিয়ার কাহিনী

ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত কয়েকটি হোটেলে পতিতা ও মাদক সরবরাহ করতো পাপিয়া এবং তার প্রধান সহযোগী রিজেন্ট সাহেদ। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকটি দল তাকে খুঁজছে।

গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে সাহেদ পাপিয়ার সাথে নিয়মিত মিলিত হতেন। হোটেলটির সিসি টিভি ফুটেজে এমন কিছু তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা জল্পনা ও গুঞ্জন।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, পাপিয়া ওয়েস্টিন হোটেলে বসেই নেত্রী সেজে পতিতা ও মাদক ব্যবসা চালাতেন। এ সকল কর্মকান্ডে তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন রিজেন্ট সাহেদ। সম্প্রতি পাপিয়াকে আটক করে র‌্যাব।

র‌্যাবের হাতে পাপিয়ার বেশ কিছু গোপন ভিডিও পড়েছে। সেখানে রিজেন্ট সাহেদের কিছু ভিডিও রয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়েস্টিন ছাড়াও সাহেদের দখলে থাকা হোটেল মিলিনাতেও নিয়মিত যাতায়ত ছিলো পাপিয়ার। সেখানে পাপিয়ার মাধ্যমে সাহেদ পতিতা ও মাদকের বিশাল বানিজ্য চালাতেন।

হোটেল মিলিনার প্রকৃত মালিক আনোয়ার দাবী করেন, তার হোটেল অবৈধভাবে সাহেদ দখলে নেয়। তারপর থেকেই সেখানে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। মাদক আর পতিতা ব্যবসার মাধ্যমে সাহেদ গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। তার বর্তমানে সম্পদের পরিমাণ গোপন রাখলেও তা কয়েক হাজার কোটি টাকা।

হোটেল মিলিনার মালিক আনোয়ার জানান, সাহেদ গুলশানে হোটেল মিলিনা, ওয়েস্টিনসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে পাপিয়ার সাথে যাতায়ত করতেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েক বছরের সখ্যতা রয়েছে। তারা বিভিন্ন হোটেলে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের মাদক ও নারী সরবরাহ করতেন।

জানা গেছে, পাপিয়া ও সাহেদ তাদের ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বিস্তার ঘটান। তারা ক্ষমতাসীন দল ও সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রীদের সাথে বিভিন্নস্থানে ফটোসেশন করতেন। সেই ছবি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে অপব্যবহার করতেন। এ নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।

আরো জানা গেছে, সব পাঁচ তারকা হোটেলেই ছিল পাপিয়ার ও সাহেদের পতিতা ব্যবসা। আলোচিত এই নারী হচ্ছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ প্রচার করতেন সংরক্ষিত এমপি পদ পাচ্ছেন তিনি। কিন্তু তা না পেলেও থেমে ছিল না তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড।

তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবা (২২) সহ আরও দুজন বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে র‌্যাব। তবে পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে রিজেন্ট সাহেদ।

জানা গেছে, এই পাপিয়া হেন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে জড়িত নন। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। এরই মধ্যে পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন।

পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত একটি হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটে তার নামে পাওয়া গেছে। এই পাঁচ তারকা হোটেলে বিভিন্ন মেয়েকে পাপিয়া নিজেই নিয়ে যেতেন। তাদেরকে দিয়ে করাতেন অবৈধ দেহব্যবসা। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছুই কবুল করেছেন পাপিয়া।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল জানান, তার বার্ষিক আয় ১৯ লাখ টাকা হলেও পাপিয়া গত তিন মাসে শুধু একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন! এ ছাড়া তার নামে একটি হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সব সময় বুকড থাকত। ওই হোটেলেই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল সাতটি মেয়ে।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলার, বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়।

ঢাকায় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এর পর থেকে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। নরসিংদীর শালিদা এলাকায় আরএসএম কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।

নরসিংদীতে রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মীবাহিনী। নরসিংদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী যারা তার অনুসারী তারা ‘কিউ অ্যান্ড সি’ ট্যাটু ব্যবহার করেন। মাঝেমধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে। মাস্টারমাইন্ড সুমনের সন্ত্রাসের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।


আগামীনিউজ/সুমন/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে