সামনে হেমন্তের ধান কাটা ,তাই তৃপ্তির হাসি কৃষকদের মুখে । কিন্তু বিগত বছরে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর ব্যাথাতুর হৃদয় আর মহাজনের ধান পরিশোধের কথা আসতেই মন ভেঙে যায় । কেননা ফসল বড় অল্পই জোটে কৃষকের ভাগ্যে । অন্যদিকে রাখাল ছেলে গরুর পাল চড়াতে যায় সবুজ মাঠে । সেখানে তার তোলা বাশির সুরে ছুটে আসে মুগ্ধ বনহরিণী । কিন্তু বাশির সুুরের আকর্ষনাই যেন কাল হয় হরিণীর । বর্বর শিকারির তীরে প্রাণ যায় বনহরিণীর। এমনই সরল অথচ নিষ্ঠুর সমাপ্তির হৃদয়ছোয়া গল্পই 'মরণ বাশি'।
গত ২৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ স্নাতক সম্মান দ্বিতীয় পর্বের ব্যবহারিক কোর্সের অধীনে জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত 'রাখাল ছেলে' ছোটগল্প অবলম্বনে নাটক 'মরণ বাশি' মঞ্চায়িত হয়েছে। নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন মাহফুজুর রহমান রাকিব । নাটকে চিরাচরিত দ্রোহ ও প্রেমের স্বরূপ ফুটে উঠেছে ।
সমাজের বসবাসরত মানুষের দৈহিক গঠন অভিন্ন হলেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। নাটকে একদিকে রাখালরূপী মানুষ বনের পশু হরিণীকে ভালোবাসে কাছে টেনে নিয়েছে অন্যদিকে শিকারীরূপী মানুষের বর্বরতার শিকার হয়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছে সরলমনা হরিণী । অার এই হরিণীর করুণ মৃত্যু দর্শক মনে দাগ কেটেছে ।
গ্রাম বাংলার চির দুঃখী কৃষকের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটে নতুন ধান ঘরে তোলার সময় । কিন্তু পরক্ষণেই তাদের হাসি ম্লান হয়ে যায়- মহাজনের ধার দেনা ও চড়া সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে।
ধানের মাঠের পাশ দিয়েই গরুর পাল নিয়ে যায় তিনদিন ধরে না খাওয়া রাখাল বালক । রাখালের সব সুখ গরুগুলোর মুখে খাবার ও বাশির সুরেই মাঝেই লুকায়িত থাকে । সেই বাশির সুরে মুগ্ধ হয় কিচিরমিচির করতে থাকে পাখি থেকে বনের হরিণী পর্যন্ত । রাখাল বালকের সাথে হরিণীর সম্পর্ক কি শুধুই মুগ্ধতা নাকি ভালোবাসা ? তা কেউই নির্ণয় করতে পারে না ।
এদিকে
অবোধ হরিণীর মন বার বার শঙ্কিত হয় বর্বর মানুষদের হিংস্রতায় । তাইতো রাখাল ছেলেকেই হরিণী জিঙ্গেস করে -মানুষ কে? রাখাল ছেলের মুখেই উঠে আসে রোদে পুরে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলানো ভালো মানুষের কথা। অন্যদিকে , যারা কৃষকের ফসল কেড়ে নেয় তাদেরকে খারাপ মানুষ বলে আখ্যায়িত করে রাখাল বালক।
রাখাল হরিণীর সম্পর্কের শেষদৃশ্য মোটেই সুখকর হয়নি । হরিণীর সরল বিশ্বাস ও বুক ভেদ করে বর্বর শিকারির তীর ।
কৃষক, রাখাল, হরিণী যেন চিরায়ত গ্রামবাংলার আবহমান চিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে । মহাজনের দেনার দায়ে কৃষকের ফসল লুটের গল্প নিত্যদিনকার । কৃষকের চোখে ভেসে উঠে অভাবে অবহেলায় মারা যাওয়া প্রিয়জনের মুখচ্ছবি । অবশেষে দীর্ষদিনের জমানো ক্ষোভ বিদ্রোহী হয়ে প্রকাশ পায় মহাজনের বিরুদ্ধে।
এ নাটকের অভিনয়ে ছিলেন রনিচন্দ্র,রিদুল ,সজিব ,হিরা ,আয়াত ,বায়েজীদ ,সুমাইয়া,সারমিন ,এনি ,ফারজানা ,রনি ,সিগ্ধা ,ফাহিম,
জুঁই।
প্রসঙ্গত , প্রতিবছর জাবির বাংলা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কোর্সের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা ।তারই অংশ হিসেবে নাটক প্রদর্শিত হয় যা একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে ।নাটকের ভাষায় উঠে আসে রাষ্ট্র ও সমাজের আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে থাকা অন্যায় ,জুলুম ,অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা।
এসএস