Dr. Neem on Daraz
Victory Day

গাজায় হত্যা চলছেই, টানেলে সাগরের পানি ঢুকাবে ইসরায়েল!


আগামী নিউজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩, ০৯:১৯ এএম
গাজায় হত্যা চলছেই, টানেলে সাগরের পানি ঢুকাবে ইসরায়েল!

একজন ইসরায়েলি সেনা গাজার একটি টানেলে হাঁটছে। ছবিটি ২২ নভেম্বর ২০২৩ এ তোলা- রয়টার্স

ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েই চলছে দখলদার ইসরায়েল। উত্তর গাজার পাশাপাশি এখন দক্ষিণ গাজায়ও নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল। বাড়ছে নারী ও শিশুর প্রাণহানি। এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, গাজায় হামাসের বিস্তৃত টানেলে সাগরের পানি ঢুকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির পর শুক্রবার থেকে ভয়াবহ আক্রমণ ফের শুরু করেছে ইসরায়েল। এবার পুরো গাজাকেই টার্গেট করছে ইসরায়েলি সেনা। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসসহ সব খানে বোমা হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে তারা। খবর আল জাজিরার

ইউনিসেফ বলছে, প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি করে বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। এতে গোটা গাজায় একটু জায়গাও নিরাপদ নেই। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত চার দিনের টানা বর্বর হামলায় হাসপাতালগুলোতে লাশের বন্যা হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গাজায় হামাসের কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে তারা গোটা গাজায় হামলা বিস্তৃত করেছে। আইডিএফের প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, সেনারা এখন হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ‘মুখোমুখি’ লড়াই করছে।

সোমবার সকালে গাজাবাসীকে গাজার কেন্দ্রস্থলের অন্তত ২০টি এলাকা থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নতুন আদেশ জারি করেছে ইসরায়েল। কিন্তু এর আগে উত্তর থেকে দক্ষিণের খান ইউনিসের এসব এলাকায় ঠাঁই নিয়েছিলেন তারা। এখন আবার অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশে আতঙ্কিত বাসিন্দারা।

 গত মাসে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের উত্তরে পাঁচটি বড় পাম্প একত্রিত করা হয়েছে। এসব পাম্প হাজার হাজার ঘনমিটার সমুদ্রের পানি টানেলে পাম্প করতে সক্ষম।
রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৩ জন। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ নারী ও শিশু।

এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা বলেছেন, দখলদার সেনাদের হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৩১৬ জন।

গত ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ সময় হামাস ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর মধ্যে যুদ্ধবিরতির সময় ১১০ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

নিহত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংখ্যার বিষয়ে আল-কেদরা বলেন, ‘ইসরায়েলের হামলায় মোট ২৮১ চিকিৎসক ও ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হন। তাদের আক্রমণে ৫৬টি স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো ও অ্যাম্বুলেন্স সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ২০টি হাসপাতাল ও ৪৬টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলি হামলায়।

গাজায় হামাসের ব্যবহৃত প্রায় ৮০০টি ‘টানেল’ পাওয়ার দাবি করেছে আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।

এদিকে এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাসের টানেল নেটওয়ার্কে সমুদ্রের পানি ঢুকানোর পরিকল্পনা করছে। গত মাসে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের উত্তরে পাঁচটি বড় পাম্প একত্রিত করা হয়েছে। এসব পাম্প হাজার হাজার ঘনমিটার সমুদ্রের পানি টানেলে পাম্প করতে সক্ষম।

এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্বেগ হলো সমুদ্রের পানি ভূগর্ভের পানিকে বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। ওই এলাকার ভূপৃষ্টের গতি প্রকৃতিও পাল্টে যেতে পারে। এর ফলে ওই এলাকায় কোনো ফসল নাও হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল মার্কিন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল যে, তারা গত মাসে এই বিকল্পটি বিবেচনা করছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা  পরিবেশগত কারণগুলো বিবেচনার আহ্বান জানান। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা এই পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে বাকিরা এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে যে, প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এছাড়া হামাস যোদ্ধা ও তাদের কাছে থাকা জিম্মিদের সরে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা করা হতে পারে। তবে সকল জিম্মি ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল অপেক্ষা করবে কি না সেটি স্পষ্ট নয়।

খবরে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার একটি প্রধান উদ্বেগ হলো সমুদ্রের পানি ভূগর্ভে পাম্প করার পরিবেশগত প্রভাব। সমুদ্রের পানি মাটিতে প্রবেশ করা উদ্বেগের, কারণ এটি মাটির গভীরে থাকা আধা-লবনাক্ত জলাশয়গুলোকে বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। এছাড়া এর ফলে ওই এলাকার ভূপৃষ্টের গতি প্রকৃতিও পাল্টে যেতে পারে।

সাগরের পানি টানেলে ঢুকালে সেটি গাজার মাটিকে লবণাক্ত করবে, ফলে ফসল ফলানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন যে, পরিকল্পনাটি সম্ভবত বিশ্বব্যাপী নিন্দা বয়ে আনবে। তবে তিনি দাবি করেন- এটি স্থায়ীভাবে টানেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার কয়েকটি উপায়ের মধ্যে একটি হতে পারে।

২০১৫ সালে মিশর সামুদ্রিক পানি হামাসের টানেলে ঢুকিয়েছিল। পরে রাফাহর কৃষকদের অভিযোগ ছিল যে, এর ফলে তাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। 

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সোমবার বলেছেন, হামাসের সমস্ত অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো গাজা শহর এবং গাজা উপত্যকার উত্তর অংশে হামলা চালাবে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হামাসের সমস্ত অবকাঠামো নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী গাজায় থাকবে।

এমআইসি

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে