Dr. Neem on Daraz
Victory Day
১ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন

শ্রীপুরে উন্নত জাতের লিচু আবাদে ঝুঁকছেন চাষীরা


আগামী নিউজ | মোক্তার হোসেন, জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২২, ০৪:৩৫ পিএম
শ্রীপুরে উন্নত জাতের লিচু আবাদে ঝুঁকছেন চাষীরা

গাজীপুরঃ জ্যৈষ্ঠের শুরুতে গাজীপুরের শ্রীপুরে লিচু বাগানে লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পড়ে। 
চাষির মুখে ফোটে হাসি। লিচু পাড়া, বাছাই করা, ঝুড়িতে সাজানো, ট্রাকে তোলা সব মিলিয়ে চারদিকে যেন লাল রঙের এক উৎসব। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাজারে এসেছে টসটসে লিচু। তবে এবার লিচুর ফলন ভাল হয়েছে এবং দামও আশনুরূপ।

সম্প্রতি উপজেলার শ্রীপুর, মাওনা, মাষ্টারবাড়ী, লোহাই, কেওয়া, বারতোপা এবং জৈনাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কৃষক ও বাগানমালিকেরা লিচু নিয়ে আসছেন। কেউ পাইকারি এবং কেউ খুচরা বিক্রি করছেন। এসব হাটে খুচরা বাজারে স্থানীয়রা যেমন লিচু কিনছেন, তেমনি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে লিচু কিনে গাড়িতে বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন। ঘন সবুজ পাতা ঢেকে দিয়েছে ঘন গোলাপী রঙের লিচু। বাতাসে থোকায় থোকায় লিচু দোলছে গাছের বিভিন্ন ডালে। কোথাও আবার গাছ থেকে খাঁচা দিয়ে লিচু নামানো হচ্ছে। ৫০ ও ১’শ লিচু দিয়ে আঁটি বাঁধছেন বেপারীরা। এমন দৃশ্য এখন শ্রীপুরের বিভিন্ন লিচু বাগানে। বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হওয়ায় শ্রীপুরের এমন দৃশ্য চলবে আরও ১ মাস। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা এসেছেন লিচু কিনতে।

জেলার শ্রীপুরে দিন দিন উন্নত জাতের লিচুর আবাদ কবরছেন চাষীরা। গত দু’বছর করোনা মহামারীতে লিচু বিক্রি হয়েছে কম। এবারের ফলন ও বিক্রি কমপক্ষে এক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বেশিরভাগ চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলাম মৃধার দেশী জাতের লিচু 
গাছ রয়েছে দেড়’শ, কদমী জাতের ৬০, বোম্বে জাতের ১০ এবং ভেরারী জাতের কয়েকটি। তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে কদমী এবং বোম্বে জাতের লিচুর বাজার ভালো।

শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া গ্রামের লিচু চাষী নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশী এবং উন্নত জাতের লিচুর পরিচর্যা একই রকম। পাতি বা দেশী জাতের প্রতি লিচু গাছ থেকে দেড় টাকা বিক্রি করতে পারেন। উন্নত জাতের লিচু ৪ থেকে ৫টাকা পর্যন্ত গাছে রেখে বিক্রি করতে পারেন। দেশী বা পাতি লিচুর চেয়ে উন্নত জাতের লিচু চাষের প্রতি চাষীদের আহবান জানান তিনি।

নারায়নগঞ্জ থেকে আসা বেপারী আসাদুল ইসলাম বলেন, লিচু শ্রমিকের মজুরী আগের মতোই। করোনার মহামারীর তুলনায় এবার লিচুর বেচা বিক্রি ভালো। গত দুই বছর লিচু বাগান কিনলেও বিক্রি করতে পারেননি। ভোজ্য ও জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খরচ অন্য বছরের চেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।

রাজাবাড়ী ইউনিয়নের হালুকাইদ গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ আলী শেখ জানান, তার ২০ টি লিচু গাছ রয়েছে। গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারনে লিচুর ফলন ভাল হলেও বাজারে সময় মতো বিক্রি না করতে পারায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর তার বাগানে প্রতি গাছেই প্রচুর লিচুর ফলন হয়েছে। ইতোমধ্য ২০ গাছের মধ্য ১০ টি গাছে লিচু পাইকারদের কাছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাক বিক্রি করেছি। বাকি ১০ টি গাছের লিচু গাছ থেকে ভেঙ্গে নিজেই বাজারে এক'শ লিচু ২৫০ টাকা বিক্রি করতেছি। ফলন এবং বিক্রি ভাল হওয়ায় গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে।

উপজেলার পাবুরিয়াচালা গ্রামের লিচু বাগান মালিক চাষী আব্দুর রউফ জানান, এক বিঘা জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬ টি লিচু গাছে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করতেছি বাজারে লিচুর দাম ভাল থাকায় বিক্রি করে লাভ পাওয়া যাবে। তাছাড়া অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার লিচুর মধ্য পোকার আক্রমনও কম। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের লিচু চাষীরা এ বছর লাভের মুখ দেখতে পাবে।

ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, গত দুই বছরে করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তা এ বছর লিচু বিক্রি করে এক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। তিনি প্রায় ১৩ লাখ লিচু ক্রয় করেছেন। ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন তার বাগানে। বৃষ্টির কারণে পানি সেচ না দেওয়ায় খরচ কমেছে বলে জানান তিনি।

মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা গ্রামের চাষী এনামুল হক বলেন, এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে তার বাগানের লিচু অনেক ঝড়ে যাওয়ায় তাকে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে লিচু কিনতে আসেন ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, শ্রীপুরের কেওয়া বাজার এলাকার আশপাশের বাগান মালিকদের লিচু খুব সুস্বাদু। এজন্য ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেশি। তবে এখনো বোম্বাই জাতের লিচু হাটে আসেনি। আজ দেশি লিচু ৫০ হাজার কিনেছি। তুলনামূলক দামও এ হাটে কম।’

জৈনাবাজারের ইজারাদার আবুল হাশেম জানান, প্রায় সপ্তাহখানেক আগে থেকে হাটে লিচু উঠতে শুরু করেছে। এখনো এক মাসের বেশি হাট চলবে। এক সপ্তাহ পরেই বোম্বাই জাতের লিচু হাটে তুলবেন বিক্রেতারা।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, গাজীপুর জেলায় ১৫’শ হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর আবাদ হয়। মোট আবাদের প্রায় অর্ধেক হয় শ্রীপুর উপজেলায়।

শ্রীপুরের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস জানান, এবার শ্রীপুরে ৭’শ ৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু উৎপাদন হয়েছে ৩৬৫০ মেট্রিকটন। এর মধ্যে দেশী বা পাতি চায়না ৩৫০ হেক্টর, কদমী ৪০ হেক্টর, বোম্বে ১৫৫ হেক্টর, ভেরারী ১৫ হেক্টর ও বাকিগুলো দেশী বা পাতি জাতের লিচু। এ বছর শ্রীপুর উপজেলায় ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মোক্তার হোসেন/এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে