Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বেশিরভাগের শরীরের বিভিন্ন অংশ উড়ে গেছে


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩, ১০:০৯ পিএম
বেশিরভাগের শরীরের বিভিন্ন অংশ উড়ে গেছে

চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের নিয়ে আসা হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক আসছে অ্যাম্বুলেন্স। আহতদের বেশিরভাগের শরীরের বিভিন্ন অংশ উড়ে গেছে।

হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আগে থেকে স্বজনদের অনেকে এসে জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের কান্না ও চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ। এর মধ্যে অগ্নিদগ্ধ মো, আরাফাতের ভাই ফরহাদ বলেন, ‘আমার ভাই পুড়ে গেছে। বাঁচবে কি না আল্লাহই জানেন।’

ফরহাদ বলেন, আমার ভাই ট্রাকচালক, তিনি ওই প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহন করে বাজারের বিভিন্ন ডিপোতে সরবরাহ করেন। ঘটনার সময় তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে এসেছিলেন। তিনি ভেতরে ছিলেন। আল্লাহর কাছে দু‘হাত তুলে প্রার্থনা করছি, যেন আমার ভাইকে বাঁচিয়ে রাখেন। 

ফাহমিদা আক্তার নামে এক নারী শনিবার সন্ধ্যায় চমেক হাসপাতালের বারান্দায় চিৎকার করে কান্না করছিলেন। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের নাম শাহরিয়ার। কারখানা থেকে আমাদের জানিয়েছে সে আগুনে পুড়ে গেছে। তাই চমেক হাসপাতালে এসেছি। ভাই বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে এখনো জানি না। হাসপাতালে আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। 

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ট্রাকচালিয়ে আমাদের সংসার চালান। ভাই ছাড়া সংসারে  উপার্জনের আর কেউ নেই। ভাই না বাঁচলে আমরাও বাঁচব না।’       

অগ্নিদগ্ধ মো. জসিমের মা আছমা খাতুন বলেন, আমার ছেলে বিকেলে ওই কারখানায় গেছে। এরপর কে জানি ফোন থেকে বলেছে- জসিম আগুনে পুড়েছে। আমাদের চমেক হাসপাতালে আসতে বলেছে। তাই এসেছি। হাসপাতালে ছেলেকে পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ দিয়েছে। আমার ছেলেকে যেন আল্লাহই বাঁচায় সে জন্য দোয়া করবেন বলে দু’চোখের পানি ছেড়ে দেন এই মা। 

এদিকে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, আমি নিজে জরুরি বিভাগে চলে এসেছি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন। তারা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে আমরা ওষুধ, স্যালাইন ও ইনজেকশন দিচ্ছি। 

শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসূলপুর এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট’ নামে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, কুমিরা ও সীতাকুণ্ড স্টেশনের ৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জনের মতো। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, শামছুল আলম, ফরিদ, রতন লখরেট, মো. শহীদ ও মো. কাদের। অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ

আহতদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, মো. নূর হোসেন (৩০),  মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) ও মো. জাহিদ হাসান (২৬), মো. আলমগি হোসেন (৩৪) ও মো. সেলিম (৩৬)।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে একই ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে খবর পেয়ে আগুন নেভাতে একে একে ছুটে যায় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট। পরে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও যোগ দেয় আরও কয়েকটি ইউনিট। সবমিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে নিরলস পরিশ্রম করে।

কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় ওই সময় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা। আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রশাসন প্রথমে ৪৯ জন নিহতের তথ্য দিলেও পরে জানানো হয় এই সংখ্যাটা ৪১। তবে পরবর্তী সময়ে ঘটনাস্থল থেকে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার ছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও কয়েকজন মারা যান। এতে সেই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ জনে।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে