Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কুয়াকাটায় কয়েক যুগ ধরে এক উঠানেই চলছে তিন ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা-ধর্মীয় উৎসব


আগামী নিউজ | উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
কুয়াকাটায় কয়েক যুগ ধরে এক উঠানেই চলছে তিন ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা-ধর্মীয় উৎসব

পটুয়াখালীঃ কুয়াকাটায় সহাবস্থানে থেকে অনন্য এক ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে কুয়াকাটা সাগর সৈকত মসজিদ, শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও সিমা বৌদ্ধ বিহার। এক উঠানের একপাশে মসজিদ-অন্যপাশে মন্দির, কয়েক কদম হাটলে আবার শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার। একপাশে ঢোলির ঢাক অন্য পাশে ভেসে আসে মোয়াজ্জিনের আজান। আবার সকাল-সন্ধ্যা বৌদ্ধ বিহারের ভান্তের বন্দনার আওয়াজ। মসজিদ ও মন্দিরের প্রবেশ পথ একটাই, মাঝে শুধু ইটের ছোট্ট একটি দেয়াল।এটি দিয়ে মুসলিমরা মসজিদে ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে। যুগযুগ ধরে পাশাপাশি থেকে চলছে তিন পক্ষের এ ধর্মীয় কার্যক্রম। কখনো কেউ কোনো কারনে বিরক্তিবোধ করেনি। এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ যেনো ধর্মীয় সম্প্রীতির এক বিরল দৃষ্টান্ত।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদে আজান হলে হিন্দু সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। আবার সময়-ক্ষন বুঝে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বন্দনায় মশগুল থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গা পূজাসহ বছরে কয়েকটি বড় উৎসব উৎযাপন করতে হয় এ মন্দিরে। প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী রাসমেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগমও হয় এ মন্দির প্রাঙ্গণে তবুও কোনদিন কারো ধর্মচর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কেউ কারো। কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা এমন সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বসবাস দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে এবং শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের ব্রম্মচারী শিশির মহারাজের কাছ থেকে  জানা গেছ,  কালীমন্দিরের প্রাঙ্গণে স্নানের কার্যক্রম চলে আসছে প্রায় দুইশত বছর আগ থেকে এবং শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে পূজা হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। অন্যপাশে শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার স্থাপিত হয় ১৭৮৪ সালে। ওই সময় থেকে একই
জায়গায় পাশাপাশি চলছে তিন ধর্মের তিন উপাসনালয়ের কার্যক্রম। আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের ঢাক-ঢোলসহ যাবতীয় বাদ্য বাজানো বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। আবার সকাল-সন্ধ্যা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ভুক্তরা তাদের বিহারে বন্দনা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি একই মাঠে মসজিদ-মন্দির। অন্যপাশে বৌদ্ধদের বৌদ্ধ বিহার। এতদ্বসত্ত্বেও নামাজ পড়তে কোনো অসুবিধা হয়না। ওদের ধর্ম ওরা পালন করে,আমাদের ধর্ম আমরা পালন করি। এখানে কোনো সমস্যা হয়না।

কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম মাওলঅনা মো. হারুনর রশিদ জানান, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই মসজিদে খেদমত করে আসছি। ধর্ম পালনে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। মসজিদ-মন্দির কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই সবকিছু হয়। কোনোদিন কোন বিষয় আমাদেও মধ্যে মত বিরোধ হয়নি।

শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের ব্রম্মচারী শিশির মহারাজ বলেন, প্রতি বছর রাস উৎসবকে সামনে রেখে এখানে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। মসজিদে আজানের সময় মন্দিরের সবধরনের ঢাক-ঢোল বাজানো বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। ধর্মীয় সম্প্রতি সদা সর্বদাই  বজায় রাখি।

শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধাক্ষ ইন্দ্রনীল ভিক্ষু জানায়, আমরা তিন সম্প্রদায় পরস্পর পরস্পরের প্রতি সদা-সর্বদা সম্মান জানাই। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি আশা করি কোনদিন ঘটবেনা।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, যুগযুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চলে আসছে। কোনদিন কারো প্রার্থনায় বাধার সৃষ্টি হয়নি, সম্প্রীতির এক বন্ধন চিরকাল অটুট থাকবে বলে তিনি জানান।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে