Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাস্কর্য নিরব ভূমিকা পালন করে: ভাস্কর্য শিল্পী অখিল পাল


আগামী নিউজ | নেত্রকোণা প্রতিনিধি   প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২, ০৭:৩৭ পিএম
মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাস্কর্য নিরব ভূমিকা পালন করে: ভাস্কর্য শিল্পী অখিল পাল

ভাস্কর্য শিল্পী অখিল পাল

নেত্রকোণাঃ বাংলাদেশের অনন্য খ্যাতিমান ভাস্কর্য শিল্পী অখিল পাল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদদের নিয়ে ভাস্কর্য মোদের গরব” তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য ভাস্কর্য গুলোর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ হাজীগঞ্জ মোড়ে বিজয়োল্লাস”, চাদঁপুর ফরিদগঞ্জ টিএনটি অফিসের সামনে অনুয়া স্মৃতিস্তম্ব”, নারয়ণগঞ্জ ২নং রেলগেইট মোড়ে ফিরে দেখা একাত্তর”, নারায়ণগঞ্জ মেট্রো সিনেমা হলের সামনে শ্রেষ্ঠ সন্তান”, নারায়ণগঞ্জ নিতাইগঞ্জে স্বাধীনতা চত্বর”, বনানীতে ক্রিকেট খেলোয়ারদের নিয়ে অদম্য বিজয়”, মার্কসবাদী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারকে নিয়ে জ্ঞানব্রতী যতিন সরকার”, নেত্রকোণা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে চেতনায় বঙ্গবন্ধু” বারহাট্রার কাশবন বিদ্যানিকেতনে আইজ্যাক নিউটন” ভাস্কর্য, দূর্গাপুর বিরিশিড়ি কাল্চারাল একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু” ভাস্কর্য, দূর্গাপুর জলসিঁড়ি পাঠাগারে জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এঁর ভাস্কর্য এবং কবি নির্মেলেন্দু গুণের আবক্ষ” ভাস্কর্য ইত্যাদি।

ভাস্কর্য শিল্পী অখিল পাল ১৯৭৪সালের ১৮অক্টোবর নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার লুনেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, পিতা- মৃত: নরেন্দ্র চন্দ্র পাল মাতা-মৃত: সুধারানী পাল বর্তমান নিবাস জেলা শহরের সাতপাই রামকৃঞ্চ মিশন রোড, নেত্রকোণা। তিনি ২০০৫ সনে জেলার বারহাট্রা উপজেলা শহরের গোপালপুর এলাকার মৃত: রনেন্দ্র পাল ও মীরারানী পাল দম্পতির কন্যা রিমা রানী পাল-এঁর সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন। সংসার জীবনে দুই সন্তানের জনক মেয়ে অরুন্দতি পাল ছেলে অনুব্রত পাল। 

ভাস্কর্য শিল্পী অখিল পাল জানান, মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাস্কর্য নিরব ভূমিকা পালন করে। আসলে ভাস্কর্য কি নিয়ে কাজ করে কিংবা কোন চিন্তা চেতনার মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণ হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে ভাস্কর্যের গুরুত্ব অর্থাৎ শিল্পীর কাজের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে ভাস্কর্যের ভূমিকা। দেশে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নাটকের মাধ্যমে ভাষাকে বিকৃতিভাবে উপস্থাপন করে নাটক তৈরি করছে তাদের প্রতিরোধ করা উচিৎ।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বাংলা বইয়ের পাঠ্য গল্প ছিল ভাষা আন্দোলন নিয়ে। ভাষা সৈনিক শহীদ জব্বার, শহীদ রফিক, শহীদ সালাম ও শহীদ বরকতের গল্প ছিল। সেই গল্প পড়ে অনুপ্রানিত হই ভাষ্কর্য তৈরীর। ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের বিষয়ে জানতে পায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকার বড় ভাইদের কাছে। ১৯৪৮ সালে ভাষা নিয়ে পাকিস্থানের সাথে বিবাদ তৈরি হয়। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল রাষ্ট্রভাষা উর্দু, বাঙালি চেয়েছিলো বাংলা ভাষা। সেই থেকে আন্দোলন। ১৯৫২ সালে চুড়ান্ত পর্যায়ের ভাষা আন্দোলনে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত শহীদ হন। এই শহীদের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনার তৈরি হয়। মানুষের সবচেয়ে বড় সত্য হলো তার নিজের মাতৃভাষা। মানুষের নিজের মাতৃভাষা যদি না থাকে তাহলে তার কোনো সত্য থাকে না। যারা মাতৃভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন তাদের জন্য ভাষা ফিরে পেয়েছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা এবং যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ ছিলো ভাষা আন্দোলন। বাংলাদেশের ইতিহাসকে আগামী প্রজন্ম কাছে উপহার দেয়ার জন্য, জাগ্রত করার জন্য মাতৃভাষার স্মৃতি বিজড়িত ভাষ্কর্য তৈরী।

ভাস্কর্য অখিল পাল আরও জানান, বাংলা একাডেমিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বই মেলা হয় উপ-মহাদেশে যতগুলো বই মেলা হয় তার মধ্য এটি একটি অন্যতম বই মেলা। মাস ব্যাপি এই বই মেলা। এখানে কবিতা উৎসব হয় সারাদেশের কবিগণ আসে এখানে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে আসে। আমাদের ভাষাটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ভাবলাম যাদের জন্য আমরা মাতৃভাষাটি পেয়েছি তাদের তুলে ধরলে আমাদের ইতিহাস আরো সুন্দর হয়। ভাষা শহীদদের আরো ভালোভাবে বিশ্ববাসী চিনবে।

ভাস্কর অখিল পাল বলেন-বর্তমান প্রজন্মের কাছে মোদের গরব” ভাস্কর্য কেন বা কি উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, তার কারণ আমরা যারা একুশে ফেব্রæয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেই সে বিষয়ে কিছু শিশু কিংবা কিছু মানুষ অজ্ঞাত রয়ে গেছে। মোদের গরব” ভাস্কর্যটি শুধু একটি ভাস্কর্য নয় একটি মিনার হতে পারে। এই ভাস্কর্যটি মিনারের মতো করা। একুশে ফেব্রুয়ারিতে এখানেও সরাসরি ফুল দিতে পারে। আগামী প্রজন্মের কাছে আমার কাজ যদি বিখ্যাত হয় তাহলে তাদের কাছে এই ধরনের ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ইতিহাস ধরে রাখার জন্য ভাস্কর্য অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা যারা ছবি শিল্পী আছি তাদের ছবি তুলে ধরার জন্য গ্যালারি প্রয়োজন। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে গণ মানুষের কাছে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ভাস্কর্য গুরুত্বপূর্ণ। ভাস্কর্য হচ্ছে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। যার মধ্যদিয়ে ইতিহাসকে গণমানুষের কাছে তুলে ধরা যায়। তিনি মনে করেন- বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের উপর অসংখ্য কাজ হয়েছে ফলে দেশে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সকলেই জানে। দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নব্বই এর আগে এত আলোচনা ছিল না। ইতিহাস মানুষকে জানানো মানুষকে জাগ্রত করাই আমার আগামী দিনের লক্ষ্য।

আমার কাজ যখন কোনো স্থানে স্থাপন করা হয়, গণ-মানুষ যখন সেগুলো দেখে এবং তাদের ভালো লাগে। তাদের এই ভালো লাগাটাই আমার আত্মতৃপ্তি। মানুষকে আমি কিছু দিতে পারলাম এটাই আমার তৃপ্তি।

একজন শিল্পী উদ্দেশ্য অর্থ উপাজন করা নয়। একজন শিল্পীর উদ্দেশ্য হলো ইতিহাস ধরে রাখা। একজন শিল্পী যখন কোনো কাজ করে। সমাজকে কিছু দিতে পারে। সমাজের মানুষের মাঝে ভালোলাগা তৈরি হয়, ইতিহাসকে ধরে রাখা যে চেষ্টা সেটাই হলো শিল্পীর আত্মতৃপ্তি।

বিগত দশ বছর ধরে আমি সবচেয়ে বেশি যার উপর গবেষণা করেছি সেটা হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ১৯৫২-১৯৭১সাল পর্যন্ত বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২০ সাল বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সাল স্বাধীনতার ৫০ বছর সারাদেশ দেখবে। যেহেতু বিগত দশ বছর ধরে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করেছি তাই সরকার যদি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সারা দেশে ভাস্কর্য নিমার্ণের সিন্ধান্ত নেয় এবং আমাকে সেই কাজে যুক্ত করেন তাহলে আমি সেই কাজ করবো। জীবনে আমি অনেক কিছুই করেছি। ভাস্কর্য শিল্পের কাজ বাদ দিয়ে অন্যকিছু আমার ভালো লাগে না। আমার টাকার হিসেব করতে ভালো লাগে না ভালো লাগে কাজ করতে। ইতিহাসে আমাদের দেশে অনেক গুণী মানুষ ছিল। তাদের আজও সামনে আনা হয়নি। ঢাকা শহরে যত গলি আছে প্রত্যেকটির একটি নাম আছে। প্রতিটি রোডের নাম আমরা জানি না। এইসব রোডের মাথায় একটি ভাস্কর্য থাকতো তাহলে সকলেই জানতো তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়তো, দেশের প্রতি টান থাকতো। আমাদের দেশের যারা বড় বড় ব্যক্তিত্ব ছিল তাদের প্রত্যেকের ভাস্কর্য তৈরি হওয়া উচিৎ।

ভাস্কর্য অখিল পাল বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, নেত্রকোণা জেলা শাখা কর্তৃক সম্মাননা পদক, নেত্রকোণা সরকারি কলেজ কর্তৃক অন্যুদান পদকে ভূষিত হোন।

আগামীনিউজ/এসএসআই

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে