Dr. Neem on Daraz
Victory Day
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

বরিশালে চার উপজেলায় বেড়েছে বহিরাগত অস্ত্রধারীদের আনাগোনা


আগামী নিউজ | জহির খান, বরিশাল জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২১, ০৩:০২ পিএম
বরিশালে চার উপজেলায় বেড়েছে বহিরাগত অস্ত্রধারীদের আনাগোনা

ছবি : আগামী নিউজ

বরিশালঃ প্রথম ধাপে আগামী ২১ জুন জেলার দশটি উপজেলার মধ্যে একমাত্র আগৈলঝাড়া ব্যতিত নয়টি উপজেলার ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৪টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৩৬টির মধ্যে দুইটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকার প্রার্থীদের সমর্থন জানিয়েছেন। কোন ইউনিয়নে বিএনপিসহ অধিকাংশ বড় দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ৩৪টি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের ত্যাগী নেতারাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও এরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এসব ইউপিগুলোতে ভোট গ্রহণের দিন যত সন্নিকটে আসছে নির্বাচনী মাঠ ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তৃণমূল পর্যায়ের ভোটারদের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের চাঁপে তারা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। তারা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) মাঠে নামলেই হামলা চালিয়ে নির্বাচনী মাঠ অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকটি ইউনিয়নে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এককালের মুর্তিমান আতঙ্ক নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা সদস্যরা।

সূত্র মতে, গত ২ জুন নির্বাচন কমিশন নতুন করে আগামী ২১ জুন স্থগিত নির্বাচনের দিনক্ষন ধার্য করার পর সরগরম হয়ে ওঠে জেলার উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার নির্বাচনী মাঠ। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি স্থানীয় সরকারের চলমান ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার ঘোষণা দেওয়ায় এসব ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে জেলার উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত জল্লা ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে বাড়ছে উৎকন্ঠা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দু অধ্যুষিত ওই ইউপিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা বাহিনীর সদস্যরা। তারা এলাকায় নিয়মিত সশস্ত্র মহরা দিয়ে ও রাঁতের আধারে বোমা ফাটিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে। শেষ মুহূর্তে এসেও এই ইউপির হেভিওয়েট দুই নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন।

সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, হামলা ও ভোটারদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈ। তিনি জল্লা ইউপির কুড়লিয়া বাজারে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সাবেক সহ-সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) নৌকার প্রার্থী বেবী রানী হালদার আমার নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে এসে গণসংযোগের নামে ভোটারদের হুমকি-ধামকি দিয়েছে। এছাড়া ওই দিনই তার সমর্থকরা আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। তারা ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে যাতে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না যায়। আমার লোকজনদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। তার দাবি, সুষ্ঠু ভোট হলে বিজয়ী হবেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈর ছেলে অচিন্ত বাড়ৈ, সমর্থক নিরোধ জয়ধর, সুব্রত বৈদ্য জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দু অধ্যুষিত ওই ইউপির বিভিন্ন গ্রামে বহিরাগত অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রায় রাতেই কাঠালবাড়ি, বিলগাববাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটানোর খবর পাওয়া যায়। নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দিনে-রাতে সমান হারে এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতারা নৌকার প্রার্থীর বিভিন্ন সভায় প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন ভোটের দিন তাদের কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এনিয়ে ভোটের দিনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত ভোটাররা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী পুতুল জয়ধর ও রিতা জয়ধর অভিযোগ করে জানান, দুর্নীতিবাজ বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী বেবী রানী হালদারের শ্বশুড়ের লাইসেন্সকৃত শর্টগান নিয়ে ভাসুর ছেলে অলোক হালদার নির্বাচনের শুরু থেকেই বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে মারধরও করেছেন। এসব নিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরীসহ একাধিক অভিযোগ করলেও তারা কোনো গুরুত্ব দেননি। উল্টো হামলার শিকার ও অভিযোগকারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেবী রানী হালদার জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী যিনি এমন অভিযোগ করেছেন, তিনি তো দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন। তাই তিনি নানান কিছু বলছেন। তবে তার কোন অভিযোগ সত্য নয়, হামলার কোন ঘটনা আমার জানা নেই। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ যেমন বজায় রয়েছে তেমনি শেষ পর্যন্ত তা থাকবে বলে জানান তিনি।

জল্লা ইউপির একাধিক ভোটারা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ হলে আনারস মার্কা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। ফলে নৌকার প্রার্থী বেবী রানী হালদারের ভাড়াটিয়া লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈর কর্মীদের মাঠেই দাঁড়াতে দিতে চাইছেন না। এককালের সর্বহারা অধ্যুষিত জনপদ বলে খ্যাত উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই অশান্ত হয়ে উঠেছে এখানকার প্রতিটি জনপদ। তাছাড়া গত কয়েকদিন থেকে মধ্যরাতে ইউপির বিভিন্ন গ্রামে বোমার শব্দে সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাবুগঞ্জ- উপজেলার সাবেক আগরপুর বর্তমান জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে বেড়েছে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনা। অভিযোগ উঠেছে ইতোমধ্যে অস্ত্রধারীরা বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিয়েছে।

সবশেষ গত শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে ওই ইউপির নৌকার মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার তারিকুল ইসলাম তারেক এর নেতৃত্বে তার সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচার গাড়িতে দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি ও চাইনিজ কুঠার নিয়ে মহড়া দেয়। এ সময় তারা প্রতিদ্বন্দ্বি আনারস মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের আপন চাচাতো ভাই অধ্যাপক কামরুল আহসান হিমু খানের বেশ কয়েকজন সমর্থককে দেশীয় ওইসব অস্ত্র দেখিয়ে নির্বাচনী এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এর আগে গত ১০ জুন দিবাগত রাত ৮টার দিকে ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর শিলনদিয়া রাস্তার মাথা নামক এলাকায় বসে নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতিতে তার সমর্থক ও ভাড়াটিয়া লোকজনে হামলা চালিয়েছে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও একটি ভাঙচুর করা হয়। এতে সাধারণ ভোটাররাও বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা।

এছাড়া গত কয়েকদিন থেকে মধ্যরাতে ফাঁকা গুলির শব্দে ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁপটি মেরে থাকা তৎকালীন সময়ের দুর্র্ধষ সর্বহারা ক্যাডার ও পাশ্ববর্তী উপজেলার সন্ত্রাসীরা বিশেষ এক প্রার্থীর পক্ষালম্বন করে নির্বাচনের মাঠে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের টার্গেট নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন। এজন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও দেশে ফেরা এককালের সর্বহারা সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের পূর্বে হত্যাকান্ডের মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটাতেও প্রস্তুত রয়েছে।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান হিমু খান অভিযোগ করে বলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা মার্কার প্রার্থী তারিকুল ইসলাম তারেক তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছ থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে নৌকার সমর্থকরা প্রচারণা গাড়িতে (পিকআপ) ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সরিকল বাজার থেকে ইসলামপুর ও আগরপুর যাওয়ার পথে কয়েকটি স্থানের অর্ধশতাধিক ভোটারকে নানান ভয়ভীতি দেখায়। এর মধ্যে নতুনচর এলাকার খলিল শাহা (৬৫), আমির হোসেন (৩০); ইসলামপুর এলাকার আউয়াল সিকদার (২৮); ঠাকুরমল্লিক এলাকার আলী হোসেন (৩২) ও রাসেল হাওলাদার (৩১) সহ আরও বেশ কয়েকজনকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিন নৌকার প্রার্থী সরদার তারিকুল ইসলাম তারেকের পক্ষে তার ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন স্বপন নিজের লাইসেন্সকৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা সাধারণ ভোটারদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। একই সাথে ওই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে খালেদ হোসেন স্বপন আমার কর্মী-সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অবগত করে নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী তারিকুল ইসলাম তারেক জানান, নৌকার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার লোকজন এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন। মুলাদী- জেলার নদীবেষ্টিত মুলাদী উপজেলার চরকালেখা ও গাছুয়া ইউনিয়নেও সর্বহারা সন্ত্রাসীদের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। সাধারণ ভোটারদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। এই উপজেলার গাছুয়া ইউপিতে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে মৃধারহাট সড়কের ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অফিসের সামনে গাছুয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকার সমর্থকরা। ভাঙচুর করা হয়েছে ওই প্রার্থীকে বহনকারি গাড়ি।

স্বতন্ত্র চেয়রম্যান প্রার্থী মোকসেদ আলম মীর অভিযোগ করে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে মৃধারহাট সড়কের ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় চরপৈক্ষা গ্রামের করিম বেপারীর ছেলে বশির আহম্মেদের নেতৃত্বে ৩/৪টি মোটরসাইকেলে করে সন্ত্রাসীরা আমার প্রাইভেটকারে হামলা চালায়। তারা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে সরাসরি থানায় যাই এবং ওসিকে সব কিছু দেখাই।

তিনি আরও বলেন, হমলাকারী বশির বেপারী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জসিম বেপারীর আপন ছোট ভাই। মূলত জসিমের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী জসিম উদ্দীন বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি প্রচারণার জন্য ঘর থেকেই বের হইনি। তবে শুনেছি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোকসেদ আলম মীরের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তার দাবি, লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মালেক সিকদার বহিরাগত লোক এনে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেই বহিরাগতরা মোকসেদ মীরের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে।

অপরদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মালেক সিকদার নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, নৌকার লোকজন হামলা চালিয়ে এখন দোষ আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি মুলাদীর বাইরে ছিলাম। ফলে হামলার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এর আগে আমাকে মারধর করেছে। আমার বাড়িতে হামলা করেছে। সেই হামলার ঘটনায় থানায়ও অভিযোগ দেওয়া আছে। মূলত নির্বাচন চলে আসায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট দখলে নিতে চাইছেন তারা। বাকেরগঞ্জ- নির্বাচনের শুরু থেকেই এই উপজেলার কলসকাঠি, দাড়িয়াল ও গাড়–লিয়া ইউপিতে নৌকার মনোনিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একের পর এক আইন পরিপন্থী কর্মকান্ড এবং প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের মনোনিত প্রার্থী শহিদ হাওলাদার ও তার কর্মী-সমর্থকরা অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনকে নির্বাচনী মাঠে নামতেই দিচ্ছেন না। তারা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) মাঠে নামলেই হামলা চালিয়ে নির্বাচনী মাঠ অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে নৌকার প্রার্থীর নিকটাত্মীয় উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আহম্মেদ সবুজ হাওলাদার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এমনকি বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ.এন. জব্বার বাবুল এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমতিয়াজ আহম্মেদ মাসুদ হাওলাদারের কমপক্ষে ২২ জন কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে গুরুত্বর আহত হয়ে বেশ কয়েকজন হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমতিয়াজ আহম্মেদ মাসুদ হাওলাদার অভিযোগ করে জানান, গত কয়েকদিন ধরে নৌকার প্রার্থী শহিদ হাওলাদারের পক্ষে তার বড়ভাই হোসেন হাওলাদার, নিকটাত্মীয় জাপা নেতা বশির আহম্মেদ সবুজ, ভাতিজা টিপু হাওলাদার, ভাগিনা মিল্টন খান, সুজন খান, শাওন খানসহ বেশ কয়েকজন মিলে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে সাধারণ ভোটারদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। একই সাথে গত কয়েকদিনে আমার কর্মী সিদ্দিক বাজার এলাকার জুয়েল, কাটাদিয়া এলাকার লিমন, নজরুল ও মুন্সিরহাট এলাকার ঔষধ দোকানী বাশারসহ আরও বেশ কয়েকজন সমর্থককে পিটিয়ে গুরুত্বরভাবে আহত করেছে। এসব ঘটনায় তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগও করেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমতিয়াজ আহম্মেদ মাসুদ হাওলাদারের কর্মী শাওন হোসেন লিটন জানান, নৌকার প্রার্থী শহিদ হাওলাদার ও তার নিকটাত্মীয় সবুজ হাওলাদার প্রকাশ্যে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই সাথে পাশ্ববর্তী দুদল ইউপির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান উজ্জ্বল ও দূর্গাপাশা ইউপির বশার সিকদারসহ তাদের লোকজন নিয়ে দিন-রাত সমান তালে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। নৌকার প্রার্থী শহিদ হাওলাদারের টার্গেট নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে তিনি ভোট কারচুপি করবেন।

অন্যদিকে বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়ীয়া ইউনিয়নে মোট চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। তারা হলেন-নৌকার প্রার্থী বাহাউদ্দীন আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সচিব এআর খানের স্ত্রী নাদীরা রহমান, নসরুল আলম এবং জব্বার মোল্লা।

স্থানীয় ভোটাররা জানান, বাহাউদ্দীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও অন্য তিনজন স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন তারাও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। যেহেতু বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী নেই। তাই ভোটাররা সবাইকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন।

এসব বিষয়ে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, আগামী ২১ জুন ভোট সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য নির্বাচনী মাঠে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। তাছাড়া ভোটেরদিন প্রত্যেক এলাকায় পূর্বের তুলনায় বেশি সংখ্যক নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বহিরাগতদের অস্ত্রের মহড়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে