Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভারত থেকে নিত্য পণ্যের আমদানি বন্ধ, লাগামহীনভাবে বাড়ছে দাম


আগামী নিউজ | বেনাপোল প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ০৪:৫৫ পিএম
ভারত থেকে নিত্য পণ্যের আমদানি বন্ধ, লাগামহীনভাবে বাড়ছে দাম

যশোরঃ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আর কঠিন শর্ত আরোপে কয়েক মাস ধরে যশোরের বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে চাল, গম ও পেঁয়াজের মত জরুরি তিনটি খাদ্য পণ্য। যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে চিনি আমদানি। এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি কমায় দেশের বাজারে তৈরি হয়েছে সংকট, লাগামহীনভাবে বাড়ছে দাম।
চলতি বছরের ২০ জুলাই সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। পরে ১৯ আগস্ট দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানিতেও ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ২৬ আগস্ট থেকে প্রতি মেট্রিক টনে রপ্তানি মূল্য বাড়ায় ১৫০ থেকে ৩৫০ ডলারে।
যেকোনো দিন চিনি রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে দেশটি। চলমান এসব প্রতিবন্ধকতায় আমদানিকারকরা চাহিদা মত জরুরি খাদ্য পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। সরবরাহ ঘাটতি আর সিন্ডিকেটের কারণে বর্তমানে বাজারে দ্বিগুন বেড়েছে এসব পণ্যের দাম।
বেনাপোল বন্দর এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে স্বর্না চাল ৪৫ টাকা, মিনিকেট ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা, কাজল লতা ৫০ টাকা, বাসমতি ৬৫ টাকা, আতপ ও মোটা চাল ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ ক্রেতারা জানায়, ভারত থেকে নিত্য পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে নিত্য পণ্যের দাম হাতের নাগালের বাইরে। চিনি, পেঁয়াজ ও গমের দাম দ্বিগুন বেড়েছে। এভাবে আর চলা যায় না।
এ অবস্থা উত্তরণে গত বছরের ২২ থেকে ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডাল আমদানিতে বার্ষিক কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ। কোটা পাওয়া গেলে যখন-তখন বাংলাদেশে এসব পণ্য রফতানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়বে না। এতে দ্রব্য মূল্যের দাম অনেকটা সহনশীল পর্যায় ও খাদ্য সংকট কমে আসবে মনে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ চুক্তি দীর্ঘ সময়ের পরও বাস্তবায়ন না হওয়ায় জরুরি পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬৯ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন চাল, ৮৫ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন গম, ১৫ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ও মাত্র  ২৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে চাল, চিনি, পেঁয়াজ ও গম আমদানি হচ্ছে না।
দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় মাত্র ২৭ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা মেটাতে ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, দেশে গমের উৎপাদন ১১ টন আর চাহিদা ৫ টন। চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয় ৪০ টনের মত। ৭ মাস আগের ২৮ টাকার গম এখন দাম বেড়ে কেজি ৫৭ টাকা। এছাড়া চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের বিপরীতে  উৎপাদন মাত্র ১ লাখ টন। ৮০ টাকার চিনি এখন বেড়ে ১৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দীর্ঘদিন এভাবে খাদ্য দ্রব্যের আমদানি বন্ধ থাকলে আগামী বছর বাজারে দাম আরও বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারি কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে সাত মাস ধরে চাল, গম ও চিনি আমদানি হচ্ছে না। পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ বললেই চলে। ৮ মাস আগে একবার চিনি আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকে আর আসেনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, বার্ষিক কোটা চুক্তিতে ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন ও আঁদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে পাশ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটানকে কোটা সুবিধায় পণ্য আমদানিতে সুযোগ দিয়েছে ভারত। ভারতের সাথে নিত্য পণ্যের কোটা চুক্তি বাস্তবায়ন বর্তমানে আমাদের দেশে যেকোনো খাদ্য সংকট মেটাতে পারে। তারা আমাদের দীর্ঘ দিনের বন্ধু দেশ। আশা করছি বাণিজ্য সহজ করতে তারা পাশে থাকবে। 


মনির হোসেন/এমআইসি

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে