Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান নাহিদ


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩, ১২:২০ পিএম
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান নাহিদ

ঝিনাইদহঃ প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো প্রতিবন্ধকতাই যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার অনন্য উদাহরণ নাহিদ হাসান। অন্য স্বাভাবিক মানুষের থেকে কিছুটা আলাদা, তার উচ্চতা ৪ ফুট। আকারে ছোট শিশুর মতো হলেও বর্তমানে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। লক্ষ্য, প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়া।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামে ২০০২ সালের মার্চ মাসে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাহিদ হাসান। তার বাবা আরিফ মালিথা একজন কৃষক ও মা পারভীনা বেগম গৃহিণী। নাহিদের বড় বোন রোকসানা খাতুন নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। পরে অভাবের কারণে তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তার ছোট বোন আফসানা খাতুন পাশের গ্রামের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।

নাহিদ হাসান হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪.০০ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এখন অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়।

সরেজমিনে নাহিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরম স্নেহে মা পারভীনা বেগম মাথা আঁচড়ে দিচ্ছেন তার। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন শিশুদের সঙ্গে। অনেকেই ভালোবেসে তাকে ডাকেন ক্যাপ্টেন বলে। এলাকার মানুষ তাকে শান্ত ও ভদ্র ছেলে হিসেবেই জানেন।

নাহিদের মা পারভীনা বেগম বলেন, এখনো অনেক মানুষ নানা ধরনের কথা বলেন। বলে ও কিছু করতে পারবে না। এসব কথা শুনলে বুক ফেটে কান্না পায়। ইচ্ছা আছে নাহিদকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। যেন সমাজের কেউ আর ওকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে না পারে।

নাহিদ হাসানের বাবা আরিফ মালিথা বলেন, নিজের বাড়ির ২০ শতক জমি ছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। বড় মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারিনি। ইচ্ছা আছে নাহিদকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা আর ওর ইচ্ছা পূরণ করার।

নাহিদ হাসান বলেন, আমার ইচ্ছা আছে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। এই লক্ষ্যে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। এজন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবো। স্বপ্ন আছে ইংরেজী অথবা আইন বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করার। আমি ছোট মানুষের মতো ভেবে এখন আর খারাপ লাগে না। যদি আমার ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারি সেটাই বড় হবে আমার কাছে। কারণ মানুষের মনুষত্ব ও যোগ্যতাটাই বড় পরিচয়।

প্রতিবেশী জহুরুল ইসলাম জানান, নাহিদের বয়স অনুসারে সে বেড়ে ওঠেনি। ছোট মানুষের মতোই রয়েছে। তার লেখাপড়ার যে গতি সেটা দেখে খুবই ভালো লাগে। ও বড় হোক, ভালো কিছু করুক সেটাই আমরা চাই।

নাহিদের শিক্ষক জোড়াদহ কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, নাহিদের মতো ভদ্র ছেলে আসলেই খুব কম পাওয়া যায়। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ। কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে আমরা ওর বেতন, পরীক্ষার ফি সবই মৌকুফ করে দিয়েছিলাম।

স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, আমাদের নাহিদের জীবনটা গল্পের মতো। নির্বাচনের সময় যখনই এখানে এসেছি তখন ছোট মানুষ ভেবে কোলে করেই বসতাম। এর বেশ কিছুদিন পরই জানলাম সে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। তখনই আমার ধারণা পরিবর্তন হয়ে গেল। এ ধরনের মানুষের মনে অনেক ক্ষোভ বা দুর্বলতা থাকে, কিন্তু নাহিদের ভেতরে তেমনটি কখনো দেখিনি। তার লেখাপড়ার পথে কোনো সমস্যা হলে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।

বুইউ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে