Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ঝিনাইদহের যে গ্রামে সব আছে, মানুষ নেই


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৩, ০২:১৯ পিএম
ঝিনাইদহের যে গ্রামে সব আছে, মানুষ নেই

ঝিনাইদহঃ গ্রামটির নাম মঙ্গলপুর। এক সময়ে যে গ্রামটি কোলাহলমুখর ছিল। গ্রামে যখন কলেরা মহামারী আকার ধারণ করে তখন অনেক মানুষ মারা যান। এরপর থেকেই গ্রামটি অমঙ্গল হিসেবে রটে যায় লোকমুখে। এখনও গ্রামজুড়ে আছে ধান, ফসলি জমিসহ পুকুর ভরা মাছ। শুধু মানুষেরই দেখা নেই সেখানে। এভাবে পার হয়ে গেছে শত বছর। 

সরকারি নথিতেও এই গ্রামের অস্তিত্ব আছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ গ্রামে এখনও রাতে মানুষ ঢোকে না কোন এক অজানা ভয়ে। এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৬৬ নম্বর মৌজায় অবস্থিত গ্রামটি। 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে এ গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামে ঢুকলেই গা ছমছম করে। নিস্তব্ধ—শুনশান চারিদিক। ভূতের ভয়ে দিনের বেলায়ও কেউ এই গ্রামের ত্রিসীমানায় ঢুকেন না। 

পাশের গ্রামের ইসলাম মিয়া জানান, এই গ্রামে একসময় অনেক মানুষ বসবাস করতো। যার অধিকাংশ মানুষ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু হঠাৎ গ্রামে মহামারী আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ মারা যায়। তখন সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে গ্রামে অমঙ্গল কিছুর প্রবেশ হয়েছে। গ্রামের মানুষ অন্যত্র যেতে শুরু করে। কেউ আবার ভারতে চলে যান। একবারেই শূন্য হয়ে যায় মঙ্গলপুরে মানুষের বসবাসের কোটা। এখন এই গ্রামে শুধুই করা হয় চাষাবাদ। অনেক মানুষ কৌতুহলবশত একনজর দেখতে আসে গ্রামটিতে। আবার বেলা থাকতেই বেরিয়ে পড়ে গ্রাম থেকে।

ইতিহাস অনুযায়ী জানা যায়, মঙ্গলপুর গ্রামে মঙ্গল পাঠান নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার নাম অনুসারেই গ্রামটির নামকরণ করা হয়। তিন একর জমির উপর এই প্রভাবশালী ব্যক্তির ছিলো বিশাল এক বাড়ি। বাড়ির চারদিকে তিনি উঁচু করে ৩০-৪০ ইঞ্চি চওড়া মাটির প্রাচীর ছিল। বিশাল এই বাড়ির প্রাচীর এতোটাই উঁচু ছিলো যে, বাইরে দাঁড়িয়ে বাড়ির ভেতরের কাউকে দেখা যেত না। মঙ্গল পাঠানের পরিবার ছিল আবার খুবই পর্দাশীল। বাড়ির মেয়েরা কখনো বাইরে বের হতো না। এমনকি বাইরের কোনো পুরুষের সঙ্গে দেখাও দিতেন না। মঙ্গল পাঠান একসময় সেখানেই মারা যান। তার কবর এখনও আছে মঙ্গলপুর গ্রামে। 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারের আল মামুন জানান, শুনেছি এমন এক গ্রাম আছে। আজকের এই আধুনিক যুগে এমন গ্রাম শুনে দেখতে আসলাম। অনেকে বলেন ভুতুড়ে গ্রাম বা ভুতের গ্রাম। গ্রামে ঢুকলেই গা ছমছম করে। কেউ বলে আশি বছর, আবার কেউ বলে শত বছর আগেই গ্রামটি জনশুন্য হয়ে পড়ে। 

কোটচাদপুর এলাঙ্গী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মিজানুর রহমান খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আসলেই তারা এমনই গল্প শুনেছেন। কোনো এক মহামারি গ্রামটিকে জনশুন্য করে দেয়। অনেকেই মারা যায়। কেউ আর থাকেনা সেখানে। এখন শুধুই চাষাবাদ হয়। প্রায় সবই খাসজমি। 

তিনি আরও বলেন, গ্রামের ভেতর মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানির অভাব মেটাতে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তায় সড়ক বাতি দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষের চলাচলে অসুবিধা না হয়। তারপরও মানুষের চলাচল খুবই কম। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সেখানে যায় না।

চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামের ঢোকার পথে মুল রাস্তার পাশে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে ৯টি পরিবার বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে