Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কুষ্টিয়ায় শুরু হচ্ছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম
কুষ্টিয়ায় শুরু হচ্ছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ আধ্যাতিক সাধক ফকির লালন সাইয়ের এই বাণীকে সামনে রেখে দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে শুরু হচ্ছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই উৎসবের উদ্ধোধন করা হবে। চলবে আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত।

বাউল সম্রাট লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দৌলপূর্র্ণিমা রাতে বাউলদের নিয়ে সাধু সঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এই উৎসব চালিয়ে আসছে তার অনুসারীরা।

মূলত দৌলের তিথি অনুযায়ী বাউল সাধু ভক্তানুরাগীদের মূল আনুষ্ঠানিকতা অধিবাস শুরু হবে ৬ মার্চ রাতে। কিন্তু পবিত্র শবে বরাতের কথা চিন্তা করে এবারের অনুষ্ঠান দুই দিন এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আলোচনা অনুষ্ঠান দুইদিন আগে শুরু হলেও বাউল সাধু ভক্তানুরাগীদের মূল আনুষ্ঠানিকতা অধিবাস শুরু হবে ৬ মার্চ রাতেই। পরদিন ভোরে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূণ্যসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হবে সাধুদের কার্যক্রম। 

স্মরণোৎসব উপলক্ষে শুক্রবার (৩ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এসময় জেলা পুলিশ সুপার খাইরুল আলম এবং লালন একাডেমির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বেশ কয়েক দিন আগের থেকেই অনেক সাধু-বাউল আসতে শুরু করেছেন সাঁইজির ধামে। গুরু-শিষ্যের মিলনের এই ক্ষণ যতোটা দীর্ঘ করা যায় সেই লক্ষ্যে প্রতিবছরই অনুষ্ঠান শুরুর আগেই চলে আসেন তারা। এখানেই আত্মার শান্তি খোঁজেন সাধু-বাউলরা। দুইশ বছর ধরে দোলপূর্ণিমা তিথিতে এই সাধুসঙ্গ চলে আসছে।

জানতে চাইলে লালন মাজারের প্রধান খাদেম মোহাম্মদ আলী বলেন, সাঁইজির দোলপূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষে কয়েকদিন আগের থেকে তার ভক্ত অনুসারীরা এখানে আসতে শুরু করেছে। পবিত্র শবে বরাতের জন্য অনুষ্ঠান দুইদিন এগিয়ে আনা হলেও এতে সাধুদের মনে কোনো দাগ কাটেনি। কারণ তারা সাঁইজির দর্শন করতে পারলেই তুষ্ট থাকে। তাদের অন্য কোনো চাওয়া পাওয়া থাকে না।

স্মরনোউৎসব উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এই লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনব্যাপী লালন সংগীতানুষ্ঠান এবং গ্রামীণ লালন মেলা। ইতোমধ্যেই ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর পাড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। পাশেই বিশাল মাঠজুড়ে চলছে বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ও আসবাবপত্রের দোকান। 

শনিবার সন্ধ্যায় এই স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি থেকে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণার কথা রয়েছে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এবার শবে বরাতের কারণে দুদিন এগিয়ে আনা হয়েছে অনুষ্ঠানমালা। ঐতিহাসিক এই লালন উৎসব নির্বিঘ্ন করতে ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আখড়াবাড়ি চত্বরে কালী নদীর তীরে মাঠে বসেছে লালন মেলা। লালন উৎসব শেষ হবে আগামী ৬ মার্চ রাতে।

এসময় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, লালন এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিদিন লাখো দেশি-বিদেশি লালন অনুসারীদের সমাগম ঘটে ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে। তাই এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো ছেঁউড়িয়া এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আছে ওয়াচ টাওয়ার এবং মেটাল ডিটেকটর গেট। বিদেশি অতিথিদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে প্রতিবারের তুলনায় এবারের দোলপূর্ণিমায় লালন স্মরণোৎসবে আগের চেয়ে বেশি লোকসমাগম হবে, এমনটি ধরেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন লালন একাডেমি।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে