Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সৌদিতে আটক মতিয়ার ভিক্ষা করতেন দেশ-বিদেশে, গড়েছেন অনেক সম্পদ


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২, ১১:২৫ এএম
সৌদিতে আটক মতিয়ার ভিক্ষা করতেন দেশ-বিদেশে, গড়েছেন অনেক সম্পদ

মেহেরপুরঃ ছিলেন ডাকাত সর্দার। ডাকাতিতে ধরা পড়লে গণপিটুনির শিকার হন। ওই সময় দুই হাতের আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়। সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হলে দুই হাতের কবজি কেটে ফেলেন চিকিৎসক। পরে পেশা বদলে হয়ে যান ভিক্ষুক। ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও সৌদি আরব গিয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন। বিশেষ করে প্রতিবছর হজের মৌসুমে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। গত ১৫ বছর ভিক্ষা করে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। ভিক্ষার টাকায় নিজ গ্রামে কিনেছেন জমি। বর্তমানে ২০ বিঘা কৃষিজমির মালিক।

বলছিলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মতিয়ার রহমানের কথা। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় এবার সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা মতিয়ার রহমানকে গ্রামের সবাই ‘মন্টু ডাকাত’ বলে চেনেন। কারণ একসময় ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন। গণপিটুনির শিকার হয়ে হাতের কবজি হারানোর পর এলাকা ছেড়ে বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কম খরচে ভারত হয়ে হজে যাওয়া সহজ হওয়ায় প্রতিবছর হজে যান মতিয়ার। এ পর্যন্ত ১২-১৩ বার হজে গেছেন। প্রতিবছর ভিক্ষা করে দেশে ফিরে জমি কেনেন। মূলত হজ করতে নয়, ভিক্ষা করতেই যান। করোনার কারণে এবং সীমান্ত বন্ধ থাকায় গত দুই বছর হজে যাননি। এবার ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস (হজ লাইসেন্স নং-৭৩৭) এজেন্সির মাধ্যমে হজে গিয়েছিলেন।

জানা গেছে, মতিয়ার রহমান সৌদি আরবে যান ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেখানে ব্যাগেজ হারিয়ে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। এ ঘটনায় ২২ জুন তিনি সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন। আটকের পর জানা যায়, তাকে গাইড করার মতো কেউ ছিলেন না এবং তার বসবাসের বাড়ি বা হোটেলও ছিল না। এ ঘটনার পরে  পুলিশ তাকে মুচলেকায় ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে এ ঘটনা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মেহেরপুরসহ সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এ ঘটনায় গত ২৫ জুন ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন। সেখানে বলা হয়, আপনার এজেন্সির একজন হজযাত্রী মো. মতিয়ার রহমান মদিনা শরীফে ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনা জানার পর বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী থানায় মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। তবে কী জবাব দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।

সিন্দুরকোটা গ্রামের আফজল হোসেন, হারুন অর রশিদ, জামাল মিয়া ও জাকির হোসেনসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, ডাকাতিতে ধরা পড়ে দুই হাতের কবজি হারানোর পর ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। ‘মন্টু ডাকাত’ বলে ডাকলেও গ্রামের মানুষ এতদিন তাকে সহজ-সরল মনে করতেন। তবে গ্রামে ভিক্ষা করতেন না। হজের মৌসুমে প্রতিবছর সৌদি আরবে চলে যান। হজের মৌসুম শেষ হলে বেশিরভাগ সময় ভারতে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে খুব কম সময় থাকেন। এবার ধরা না পড়লে গ্রামের লোক জানতেন না তিনি ভিক্ষা করেন।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের লোকজনকে সংঘবদ্ধ করে সৌদিতে ভিক্ষা করেন মতিয়ার। হজের মৌসুম শেষ হলে দেশে ফিরে আসেন। তবে বেশিদিন গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে ভারতে বেশিরভাগ সময় কাটে তার।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি হজের অজুহাতে প্রতিবছর সৌদি গিয়ে ভিক্ষা করেন মতিয়ার। ভিক্ষা করে গ্রামের বাড়িতে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। আগে ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন। ডাকাতি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়লে গণপিটুনি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসা করিয়ে হাত কেটে ফেলেন। এলাকার মানুষ এখনও ডাকাত বলেই চেনেন। তবে সহজ-সরলের ভান করে চলতেন।’

ওই এলাকার ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফারুক হোসেন বলেন, ‘মানুষ হজ থেকে ফিরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাকে কোনোদিন গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে দেখিনি। গ্রামে বলে বেড়াতো বিভিন্ন এজেন্সি তাকে হজে নিয়ে যায়। হজ থেকে দেশে ফিরে প্রতিবছর জমি কেনেন। এবার পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জানলাম হজে গিয়ে ভিক্ষা করেন। আসলে মতিয়ার প্রতারক।’

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী বলেন, ‌‘স্বামী হজে গিয়ে কি করে আমি বলতে পারবো না। তবে হজে গিয়ে এ পর্যন্ত ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। কোথায় টাকা পেয়েছেন, তা আমি জানি না। রবিবার শুনেছি তাকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। এবার বাড়ি ফিরলে বাধা দেবো, যাতে আর হজে না যায়। তিন মেয়ে এক ছেলে আমাদের। সন্তানদের বিয়ে দিতে হবে, এলাকার মানুষজন খারাপ কথা বলতেছে। তার এমন কাজ করা ঠিক হয়নি।’

মেহেরপুর জেলা হাজি সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘এটা বাংলাদেশি হাজিদের জন্য লজ্জার। বিষয়টি হাজি সমিতি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাবো আমরা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর হাজিদের হজে পাঠানোর দাবি জানাই। হজে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’

গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মতিয়ারের ব্যাপারে শুনেছি। যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। মতিয়ারের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় দুটি মামলা ছিল যা থেকে আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি আমরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। 

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে