Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বিএনপির কোমর ভাঙ্গা, জামাতের হাটু: এবার কি করিবে সোনার চাঁন?


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১, ০৬:১৭ পিএম
বিএনপির কোমর ভাঙ্গা, জামাতের হাটু: এবার কি করিবে সোনার চাঁন?

ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ দেশের রাজনীতিতে নৈরাজ্য, হত্যা আর সন্ত্রাসের আমদানি ও চর্চা বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই করে আসছে। কিন্তু আজ জনগণ বিএনপির কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে। জামাতের হাটু।

এই কোমর ও হাটু ভাঙ্গা নিয়ে কতক্ষন আর ফালাফালি?

বিএনপি তথা জিয়াউর রহমান, খালেদা ও তার দুই কু-সন্তান এদেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। ছেলেদের মানুষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার সোনার ছেলেরা দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, চোরাকারবারি, বিদেশে দেশের টাকা পাচার, চাঁদাবাজীসহ সকল অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। এদেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কখনো খালেদা ও তার কু-পুত্রদের ভালোবাসা ছিলো না। 

২০০৮ সালে এদেশের মানুষ বিএনপি- জামাতের কাছ থেকে দেশ উদ্ধার করে নির্বাচনের মাধ্যমে। ক্ষমতা হারাবার পর পরই বিএনপি উম্মাদ হয়ে পড়ে ক্ষমতায় যাবার, ক্ষতায় যাবার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে সরকার ও জনগণকে নিয়ে।

যখনই কেউ বেসামরিক নাগরিকদের উপরে হামলা চালায়, তখন সে সংগঠন রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করার অধিকার হারায়-উভয়েই সন্ত্রাসী সংগঠন।’

পই-পই করে বলেও খালেদা জিয়া ও তার সহকর্মীদের বোঝানো গেল না, এ রকম সহিংস আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে নেই। তাও আবার ‘যুদ্ধাপরাধীদের দল’ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এবং তার বিপুল সহায়তায়। মাঝে তো অনেকে এমনও বলতে লাগলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন বিএনপির কেউ না কেউ; আর তা বাস্তবায়ন করছে বা এর সুযোগে সন্ত্রাস করছে জামাত-শিবির ক্যাডাররা। 

যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, ক্ষমতার আর এক কেন্দ্র বিন্দু ছিলো হাওয়া ভবন- যা পরিচালনা করতো খালেদা জিয়ার কু-পুত্র তারেক রহমান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা হইছে তা একবারে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়নি, এটি ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, সেদিন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জীবন নাশের উদ্দেশ্যে বাড়িঘরে আগুন দেয়, ধর্ষন করে, চিরদিনের জন্য আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংককে ধ্বংস করাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তথা জঙ্গিবাদ।

বঙ্গবন্ধু যখন ধংস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে দেশ নির্মাণের দিকে মনযোগ দিলেন ঠিক তখনই একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা ষড়যন্ত্র শুরু করলো। এই শক্তি কখনও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বারবার ষড়যন্ত্র করে গেছে। সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে যারই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে ১৫ আগস্ট ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলো ৭১ এর পরাজিত শক্তি তথা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

রাষ্টীয় পৃষ্টপোষকতায় সন্ত্রাস লালনের শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৭৯ সালে পার্লামেন্টে সেটাকে আইনে রুপান্তর করে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শুরুটা জিয়া পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান, যার প্রমান ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত তার স্ত্রী বেগম জিয়ার বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং ২০০১-২০০৬ ক্ষমতায় থাকাকালীন তার কু-পুত্র তারেক রহমানের জঙ্গিদের লাললনপালন ও আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রমানিত হয়।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা যে রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনে এবং তারেক রহমানের পরিচালনায় যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে এটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। বেগম খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় তখন জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের উত্থান হয়েছে, বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছে, ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে, ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলাও এই খালেদা জিয়ার আমলেই হয়েছে। সব দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যখনই জিয়া পরিবার ক্ষমতায় এসেছে তখনই রাষ্টীয় পৃষ্টপোষকতায় সন্ত্রাস লালন পালন হয়েছে।

প্রত্যন্ত মফস্বলেও এক পক্ষের লোক অপর পক্ষের কাউকে গিয়ে পিটিয়ে বা কুপিয়ে হত্যা করেছে। তা-ই শুধু নয়, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে পেট্রোল বোমা বা ককটেল ছুঁড়ে।

নিছক পেটের দায়ে বাস-ট্রাক নিয়ে পথে নামা লোকদের মধ্যে ৫৫ জনকে নাকি পুড়িয়ে মারা হয়েছে। জানি না এর মধ্যে নিরীহ বাসযাত্রীদের ধরা হয়েছে কিনা। কী অপরাধ ছিল তাদের? অবরোধের মধ্যে অফিস করতে যাওয়া? পাইকারি বাজারে পণ্যসামগ্রী আনতে যাওয়া? এটা তো তাদের সাংবিধানিক অধিকার। ক্ষমতাবান দলগুলোর হরতাল-অবরোধ অগ্রাহ্যের অধিকারও কি নেই মানুষের? সেজন্যই বলতে হয়, এতদিন যা হয়েছে, সেটা সহিংসতাও নয়– সন্ত্রাস এবং ফৌজদারি অপরাধ।

সন্দেহ নেই, হরতালকালে অতীতেও আগুন দেওয়া হয়েছে যানবাহনে। তাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে করুণ মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। বিবেকবান মানুষ মাত্রই এর নিন্দা করেছেন, দাবি করেছেন বিচার। বিচার হয়নি। তার দায় তো সরকারের। বিগত বিএনপি সরকারও কি এ দায় এড়াতে পারবে? সবচেয়ে বড় কথা, অতীতে কোথাও এমনটি ঘটেছিল বলে শতগুণে বর্ধিত করে সেটা ঘটাতে হবে এখন, নতুন পরিস্থিতিতে?

আর কিছু ঘটনা তো এদেশের আন্দোলনের ইতিহাসে এবারই প্রথম ঘটল। সিএনজিচালিত স্কুটারে আগুন দেওয়ার সময় চালককে বেরুতে না দেওয়া, তাকেও পুড়িয়ে মারা। ট্রাকে আগুন দেওয়ার সময় পলায়নরত চালক বা হেলপারকে ধরে এনে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। জানতে ইচ্ছা হয়, এ যুগে কোনো দেশেই কি দাবি আদায়ের চেষ্টায় এমনতরো ঘটনা ঘটিয়েছে আন্দোলনকারীরা? অন্ধের মতো সব ধরনের পণ্যবাহী যান চলাচলও তারা বন্ধ করে রেখেছিল দিনের পর দিন। এ অবস্থায় ট্রাকে আগুন দিয়ে অবোধ গবাদিপশু পর্যন্ত পুড়িয়ে মেরেছে তারা। এগুলো সন্ত্রাস না হলে সন্ত্রাস তাহলে কী? 

সমাজের বৃহত্তর অংশকে উপেক্ষা করে যারা বিভিন্ন কারণে সহিংসতা প্রচার করে বা সহিংস আক্রমণ চালায়, তারাই জঙ্গি। ধর্মের নামে, ধর্মের অপব্যবহার করে জঙ্গিরা বিশ্বব্যাপী নিরীহ মানুষের ওপর যে বর্বরতা চালাচ্ছে তা চরম নিন্দনীয়। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের জন্যও জঙ্গিবাদ একটি প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরশাসকরা বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিয়েছে, সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তিকে উসকানি দিয়েছে। যা আমাদের বহুকালের লালিত অসাম্প্রদায়িক ও সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে করেছে দুর্বল। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মেজর জিয়া ১৯৭২ সালের সংবিধানসহ রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং সামাজিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনে। যার ফলে জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতিতে সক্রিয় হয় এবং জঙ্গিবাদের সূচনা করে।

বিগত কয়েক দশকে আমরা দেখেছি কীভাবে বিএনপি, জামায়াত এবং এর অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মান্ধতাকে উসকানি দিয়েছে, ধর্মের নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে। সাম্প্রদায়িক আক্রমণের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি দেশকে একটি অকার্যকর জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনায় ছিল লিপ্ত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় এবং নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াতচক্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ আপামর জনগণের ওপর চালিয়েছে নির্মম আক্রমণ, পুড়িয়েছে মানুষ-যানবাহন। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদকে লালন করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তরুণ-তরুণীদের ব্যবহার করা হয়েছে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে। লক্ষণীয় যে, সম্প্রতি সংগঠিত জঙ্গি হামলাগুলোতে ধনী-শিক্ষিত পরিবারের ছেলেমেয়েদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এসব তরুণ বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ ইতিহাস, শতবর্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত নয় বলেই হিজবুত তাহরিরের মতো উগ্র জঙ্গি সংগঠনগুলো এদের সহজেই বিপথে চালিত করতে পারে।

আমরা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখেছি। ধর্মীয় উন্মাদনায় হলি আর্টিজানে নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, ব্লগার-লেখক-প্রকাশকদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ধর্মযাজকদের ওপর হয়েছে আক্রমণ। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে অসংখ্য জঙ্গি এবং জব্দ হয়েছে প্রচুর গোলাবারুদ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের প্রায় সবাই বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর পুলিশি অভিযানের সময় একজন কুখ্যাত জঙ্গির স্ত্রী নিজেকে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ সিলেটে পুলিশি অভিযানের সময় দুজন মহিলাকে কোমরে বোমা বাঁধা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়, যা প্রমাণ করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আমাদের নারীরাও জড়িয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী সংগঠন, যেমন- আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরির বা নব্য জেএমবি’র বাংলাদেশ প্রোফাইল পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিরা সক্রিয় আছে এবং তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগও রয়েছে। এসব জঙ্গি সংগঠন আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিশাল হুমকি।

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। সন্ত্রাস দমনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে সন্ত্রাস দমন আইন প্রণয়ন করে। বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য ২০১২ এবং ২০১৩ সালে এই আইনটির সংশোধন করা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধের জন্য প্রণয়ন করা হয় অর্থপাচার আইন ২০১২। এছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রণয়ন করা হয় পারস্পরিক ফৌজদারি সহায়তা আইন বা Mutual Legal Assistance in Criminal Matters Act ২০১২। জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সব ধর্মের সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের কোনও ধর্ম নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না।

ইসলাম ধর্মে ধর্ম নিয়ে জোর জবরদস্তি না করার কথা বলা হয়েছে, অন্য ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিম, প্রকৃত ধার্মিক কখনো নিরীহ মানুষদের হত্যা করতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখছি, সমগ্র বিশ্বে এমনকি আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছে, যা কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যুব সমাজকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আমাদের সমৃদ্ধি ও শান্তির পথে অন্তরায়।

ধর্মের অপব্যাখ্যা রোধে আলেম-ওলামাদের এগিয়ে আসতে হবে। এরই আলোকে প্রত্যেক ধর্মের ধর্মগুরুদের এগিয়ে আসতে হবে, তাদের একযোগে কাজ করতে হবে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানে এবং আমাদের যুব সমাজকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ভয়াবহতার কথা বোঝাতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ, তাদের ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ যেন কোনও ফয়দা না নিতে পারে তার জন্য আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সকল ধর্ম ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, সহিষ্ণুতার প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আলেম সমাজ, ধর্মীয় গুরু, নাগরিক সমাজ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যমগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বিভিন্ন ধর্মের-বর্ণের তরুণ-তরুণীদের বোঝাতে হবে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির গুরুত্ব এবং জঙ্গিবাদের কুফল। তরুণ সমাজ ও শিক্ষার্থীরা যেন কোনও প্রকার প্রলোভনে না পড়ে কিংবা বিপথে চলে না যায় সে ব্যাপারে শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজনে জঙ্গিবাদ রোধকল্পে শিক্ষক ও আলেম সমাজকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ, তারাই আমাদের তরুণ সমাজকে সুপথে পরিচালিত করতে বিশাল ভূমিকা রাখেন।

কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তরুণদের ভুল বুঝিয়ে কিংবা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসকে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের হাতিয়ার না বানাতে পারে তার জন্য প্রতিটি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ করে দিতে হবে। তরুণ সমাজকে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে একাত্ম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

জঙ্গিবাদকে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর নির্মূলে প্রস্তুত হতে হবে এবং সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় এটিকে দমন করতে হবে। আধুনিকায়নের যুগে অপরাধের ধরন পাল্টেছে, পাল্টেছে জঙ্গি আক্রমণের কৌশল, তাই এর মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনে আরও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে।

আমাদের বৃহত্তর নারীসমাজকে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পৃক্ত করতে হবে। জঙ্গিবাদের অর্থায়নের উৎস ও মদতদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিরাজমান আইনের সংশোধন করতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন ধর্মের অপব্যবহার করে বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে কোনও ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা জঙ্গিবাদকে উসকানি দিতে না পারে, তার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।

এই দেশ আমাদের সকলের প্রিয়, লাখো শহীদের রক্ত ও সম্মানের বিনিময়ে পাওয়া। এর সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়। মানবতার বিরুদ্ধে যে জঙ্গিবাদ- তা নিপাত যাক, এই হোক আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়। 

মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সাম্প্রদায়িক শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা নানাভাবে দেশের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে। জঙ্গিবাদ তাদেরই সৃষ্টি। এই অপশক্তিকে রুখতে হবে। 

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর খুনিদের ক্ষমতায় বসানো হলো। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু হলো। যারা বাংলাদেশ মেনে নিতে চায়নি, তারাই জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে।

পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। কিন্তু ইতিহাস আড়াল করা যায় না। দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে।

বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু বারবার কারাবরণ করেছেন। দেশের মানুষের জন্য কারাগারকে ভয় করেননি তিনি। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে স্বাধীনতাবিরোধীরা জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটাতে চায়। এ অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক

আগামীনিউজ/প্রআ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে