Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মুশফিক-লিটনের কাঁধেই ঢাকা টেস্টের ভাগ্য


আগামী নিউজ | ক্রীড়া ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২২, ০৮:৫৮ এএম
মুশফিক-লিটনের কাঁধেই ঢাকা টেস্টের ভাগ্য

ঢাকাঃ প্রথম ইনিংসেও ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ২৪ রানে হারিয়েছিল ৫ উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস। এই দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩৬৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় টাইগাররা।

এবারও দৃশ্যপট প্রায় একইরকম। ২৩ রান তুলতেই ৪ ব্যাটার সাজঘরে। উইকেটে আছেন সেই মুশফিক-লিটন। তাদের কাঁধে গুরুদায়িত্ব। এবার কাজটা আরও কঠিন।

৪ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। মুশফিক ১৪ আর লিটন ১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে আছেন। চোখ রাঙাচ্ছে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা। এখনও ১০৭ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। আজ ম্যাচের শেষ দিনে এই ১০৭ রান করে তবেই শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য ছুড়ে দিতে পারবে স্বাগতিকরা।

সবার আগে তাই দরকার ইনিংস পরাজয় এড়ানো। মুশফিক-লিটন কি আরেকটি বড় জুটি গড়তে পারবেন? যদি তাদের কেউ একজন দ্রুত আউট হয়ে যান, তবে কী হবে?

আশার কথা হলো, প্রথম ইনিংসের বিপর্যয়ের চেয়ে একটু ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা, যেখানে ছিলেন সাকিব আল হাসানও।

এবার সাকিবের উইকেটটি হাতে আছে। প্রথম ইনিংসে শূন্যতে আউট হওয়া মোসাদ্দেক হোসেনও নিশ্চয়ই এতদিন পর টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তনের সুযোগটা হেলায় নষ্ট করতে চাইবেন না। তাই বাংলাদেশের সুযোগ আছে ইনিংস পরাজয় এড়িয়ে শ্রীলঙ্কাকে কঠিন একটা লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়ার। সেক্ষেত্রে ড্র হওয়ার ভালো একটা সুযোগ থাকবে। তবে মিরপুরে পঞ্চম দিনের উইকেট, কেমন আচরণ করে সেটার ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।

পাঁচ উইকেট পাওয়ায় সাকিব আল হাসানকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পাওয়া গেল। তাঁর মাইলফলক পাওয়ার টেস্টে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। টানা তিন দিন ভালো খেলার পর ম্যাচ থেকে এভাবে পিছিয়ে পড়া সত্যিই দুঃখজনক। বেশি হৃদয়বিদারক প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও টপ অর্ডার ব্যাটারদের চরম ব্যর্থ হওয়া। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। যেন ড্রেসিংরুমে ফেরার প্রতিযোগিতা হচ্ছিল ২২ গজে। এটা কি টানা ১৬৫.১ ওভার ফিল্ডিংয়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, না ক্লান্ত শরীর জুড়াতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ফেরার গোপন লড়াই? তাই যদি না হবে, তবে ফোকাস এত নড়বড়ে কেন? সাকিবের কাছে এর ব্যাখ্যা হলো- টানা ফিল্ডিং করার ক্লান্তিতে ফোকাস নড়ে যাওয়া, টপ অর্ডার ব্যাটারদের মানসিক দৃঢ়তার অভাব, যেটা অনেক দিন ধরেই দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

এক দিন আগেই লিটন বলেছেন, মিরপুরে এবারের উইকেট কিছুটা ভালো। স্কোর বোর্ডের দিকে তাকালে মনেও হবে তাই। ব্যাটার ও বোলারদের জন্য সমান সুবিধা ছিল। স্বাগতিক টপ অর্ডার ব্যাটাররা উইকেট উপহার দেওয়ার পরও মুশফিক ও লিটন জুটি গড়ে স্বস্তি দেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করে ৩৬৫ রান, শ্রীলঙ্কা ৫০৬ রান। দুই ইনিংসে দু'জন বোলার পাঁচ উইকেট করে পান। লঙ্কান পেসার কাসুন রাজিথা, বাংলাদেশের সাকিব পাঁচ উইকেট নেন। ওদিকে আসিথা ফার্নান্দোর চার উইকেট, এদিকে এবাদত হোসেনের। মুশফিক-লিটনের সেঞ্চুরির জবাবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ আর দিনেশ চান্দিমাল শতক হাঁকান। এর পরও শ্রীলঙ্কার ইনিংস পাঁচশ ছাড়ায় টপ অর্ডারে করুনারত্নে ৮০, ওসাদা ফার্নান্দো ৫৭ এবং মিডল অর্ডারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৮ রান করে দেওয়ায়। এ জায়গাতেই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

এই সিরিজ দিয়ে একটা জিনিস পরিস্কার হলো, পেস বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে অনেক এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। চট্টগ্রামে স্বাগতিক পেসাররা যেখানে একটিও উইকেট নিতে পারেননি, সেখানে রাজিথা চার উইকেট নিয়ে ঢাকা টেস্টে খেলা নিশ্চিত করেন। মিরপুরে প্রথম দিন সকালেও ঝলক দেখান তিনি। লাইন-লেন্থ ধরে বল করে ইনিংসে নেন পাঁচ উইকেট। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে পেস বোলিংয়ে এবাদতের একার লড়াই ছিল। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে দারুণ কিছু স্পেল করেন তিনি। প্রথম ব্রেক থ্রুটাও এসেছে তাঁর হাত ধরে। উইকেট শিকারে সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছিলেন তিনি। শীতে খেলা হলেও যেখানে পেসারদের দিয়ে ২০ থেকে ২২ ওভারের বেশি বল করান না অধিনায়ক। খালেদ আহমেদ ফেল করায় এবাদতকে সেখানে ৩৮ ওভার বল করতে হয়। ডানহাতি এ পেসারের চেয়ে মাত্র দুই ওভার বেশি করেন সাকিব।

পেস বিভাগের দুর্বলতার সঙ্গে একজন বোলার কম নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক হোসেনকে স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে নেওয়া হলেও তার কাছ থেকে তেমন কোনো সার্ভিস এখন পর্যন্ত পায়নি দল। ব্যাটিংয়ে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর ১২ ওভার বোলিং করে ৩৮ রান খরচে উইকেটশূন্য। যদিও সাকিব বলছেন, দেশে টেস্ট খেলার মতো বিকল্প অফস্পিনার না থাকায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই মোসাদ্দেককে নেওয়া। স্বাগতিক বোলিং ব্যর্থতা কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কা প্রথম থেকেই প্রভাববিস্তারী ব্যাটিং করে। তৃতীয় দিনের অপরাজিত জুটি ম্যাথুজ ও চান্দিমাল ১৯৯ রানে বিচ্ছিন্ন হন। চট্টগ্রাম টেস্টে ১৯৯ রান করা ম্যাথুজ ১৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। টেস্টে এটি তার ১৩তম সেঞ্চুরি। চান্দিমাল ১২তম সেঞ্চুরি শেষ করেন ১২৪ রানে। বোলিংয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বেশ মিল। সফরকারীদের দুই পেসার নেন ৯ উইকেট। একটি রানআউট। স্বাগতিকদের দুই বোলার পান ৯ উইকেট, একটি রানআউট। পার্থক্য হলো সাকিব বাঁহাতি স্পিনার যিনি কিনা টেস্টে ১৯ বারের মতো পাঁচ উইকেট পেলেন। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাইলফলক পাওয়া তার। নিউজিল্যান্ডে ছয় উইকেট পাওয়া এবাদতের চার উইকেট নিজের দ্বিতীয় সেরা। ম্যাচ বাঁচাতে না পারলে মূল্যহীন হয়ে পড়বে এসব রেকর্ড। তাই আরেকবার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে জেগে উঠতে হবে মিডল অর্ডার এবং টেল এন্ডারদের।

এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে