Dr. Neem on Daraz
Victory Day

দখল দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ইছামতি নদী


আগামী নিউজ | শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২১, ০৩:৫২ পিএম
দখল দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ইছামতি নদী

ছবি : আগামী নিউজ

ঢাকাঃ জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী, কচুরিপানা আর্বজনা সহ দখল দূষনে মরতে বসেছে। বর্তমান মৌসুমে নদীটির বুক জুড়ে দেখা যাচ্ছে কচুরিপানা ও বিভিন ধরনর আর্বজনা আর দখলে নদীর প্রবাহ পাল্টে গেছে। কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধে জলকপাট নির্মানের ফলে ইছামতী নদীর আসল চেহারা ফিরে পাবে। শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে তাতে সারা বছর নৌ চলাচল স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারবে। অপরদিক নদীটি দিয়ে এখনো মালবাহী নৌযান চলাচল করে। বান্দুরা, ধাপারী বাজার, কোমরগঞ্জ, বাগমারা, নবাবগঞ্জ, কলাকোপা, বাগমারা, বিভিন পণ্য ঢাকা থেকে নদী পথে আনা নেওয়া করা হয় প্রতিদিন। বর্তমানে কচুরিপানায় নদীটির বিভিন্ন অংশে আটক থাকার কারণে মালবাহী নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এই কারণে ব্যবসায়ীগণ নৌ পথে পন্য আনা নেওয়া সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

জানা যায়, নদীটির বিভিন্ন অংশে অপরিকল্পিতভাব বাধ দিয়ে নদীর গতি পথ বন্ধ করে দেওয়াসহ প্রভাবশালীদর দখল ও দূষণ নদীটি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই চলতে থাকলে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী অনান্য নদীর মতো, এক সময় ইছামতি ভূমি খেকুদের নিজস্ব সম্পদ পরিণত হতে পারে। হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী ইছামতী নদীর আসল চেহারা । হুমকির মুখে পড়বে নদীর গতিপথ। নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে এবং সারা বছর নৌ পথে চালাচলের জন্য ড্রেজিং করার বিকল্প নেই। আর নদীর সংযোগস্থলে সুইজগেটের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে ইছামতী নদীর স্বাভাবিক চেহারা ফিরে আসবে , সারা বছর নৌ পরিবহনের ব্যবস্থা হবে এবং সারা বছর জুড়ে নদীতে পানি থাকায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। এই এলাকার নদীর উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার জেলেদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থার পুনঃরুদ্ধার হবে। ফিরে পাবেন তাদের আয়ের উৎস। আর আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। ইছামতী নদী কে চলাচলের জন্য উপযুক্ত করার জন্য কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সচেতন মহল মনে করেন। তাদের দাবী নদী কমিশনসহ স্থানীয়  প্রশাসনের সময়োপযোগী দ্রুত নদী রক্ষায় প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এক সময় রাজধানী ঢাকার পাশেই কালিগঙ্গা নদীর পরই ইছামতির নদীতে দেশীয় মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণি বসবাস করতো। এই নদীতে মানুষের দখল দূষণ ও অত্যাচার নদীটিতে দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এছাড়া জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন হাট বাজার ও প্রতিষ্ঠানের মলমূত্র ও বর্জ্য নদীটির তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েক বার খনন করা হলেও আবার নদীটি তার পূর্বের রুপে ফিরে এসেছে। এ বিষয় স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তৎপরতা না থাকায় নদীটির বিভিন্ন অংশ দখল ও দূষণের কবলে পড়ে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই অঞ্চলের প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা জানা গেছে, এক সময় ইছামতির নৌপথ ব্যবহার করে, দোহার, নবাবগঞ্জ,  মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের মানুষ নৌকা ও লঞ্চযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতো। কালের বির্বতন ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক উন্নতির ফলে, মানুষ ধীর ধীর নৌপথ ছেড়ে সড়ক পথে যাতায়াত শুরু করে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির মানুষ, নদীটিকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ পরিনত করতে যার মতো করে ব্যবহার শুরু করছে। তাদের দাবি, নদীটি এখনো প্রাণ নিয়ে যেহেতু বেঁচে আছে । তাই নদীটি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষপ নেওয়া জরুরি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইছামতি নদীটি বাগমারা বাজার এলাকা শুরগঞ্জ, দীঘিরপাড়া, বক্সনগর, কলাকাপা পোদ্দার বাজার, বান্দুরা বাজার, কোমরগঞ্জ, চৌকিঘাটা, গাজীখালী, আগলা বাজার, টিকরপুর ছাতিয়া এলাকা, গালিমপুর ও গোবিন্দ পুর, কৈলাইল সাইলকা খয়াঘাট এলাকায়, শিকারীপাড়া, বারুয়াখালী, দাউদপুরসহ বেশ কিছুস্থানে ব্যাপকভাব কচুরিপানা আর্বজনারসহ দখল দূষণে কবলে পড়েছে। নদীটির এসব অংশ পানি এখন আর আগের মতো গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন স্থান শুকিয়ে গেছে। কোথাও আবার হাটু সমান পানি রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ইছামতির পানি শুণ্য স্থানগুলো দখল করার পায়তারা চলছে বিভিন্নভাবে।

সম্প্রতি উপজেলার আগলা টিকরপুর এলাকায় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে নদীতে নির্মিত নতুন ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে দেয় উপজেলা প্রশাসন।

নৌকা বাইচ ঐতিহ্য জাতীয় রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক রাশিম মোল্লা  বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদীতে কচুরিপানা আর্বজনা ও বিভিন্ন স্থানে দখলের কারণে নদীর পানির প্রবাহ কমে গেছে । ইছামতী নদীকে বাঁচাতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিস্কার করা । দখলীয় নদীর জায়গা উদ্ধার করা বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং শুরু করে নদীর পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে । সবচেয়ে  জরুরি সারা বছর নৌ চলাচল স্বাভাবিক করতে কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধের ইছামতী নদীর সংযোগস্থলে জলকপাট নির্মানের সময়ের দাবি । ইছামতী নদী বাঁচাতে এর কোন বিকল্প নেই।  

ইছামতি নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও দখল দূষণের বিষয় নবাবগঞ্জ উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুু বলেন, উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখল ও দূষণ বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া নদীটির পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে খনন কার্যক্রম চলমান ।

অপরদিক ইছামতি নদীর দখল ও দূষণের বিষয় নদী কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) কামরুন নাহার আহমদ বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সার্বক্ষনিক কাজ করে চলছে। এছাড়া দখল ও দূষণের বিষয় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে