Dr. Neem on Daraz
Victory Day

তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন ?


আগামী নিউজ | আয়শা আক্তার আশা প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০, ০৩:৩৪ পিএম
তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন ?

ফাইল ছবি

ঢাকাঃ বাংলাদেশে ১৯৮০ এর দশকের শেষ সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একটানা ক্রমশ আলোচিত ও সমালোচিত যদি কারো নাম বলতে বলা হয় তিনি নি:সন্দেহে তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশে, বিশেষত মধ্য এবং উচ্চবিত্তদের মাঝে তসলিমা-নিরপেক্ষ কোনও ব্যক্তি আছেন কিনা। তবে, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগের কাছেই তিনি নন্দিত নন, বরং নিন্দিত।

তসলিমার শুরুটা হয়েছিল সেই আশির দশকে, মফস্বলের একজন কবি হিসাবে। মফস্বলের কতজনই তো কবিতা লিখেন, কতজনই তো কবি হতে চান। আশির দশকটাই যেন ছিল কবি হবার তাড়নার যুগ, যেন কবি হতে পারলেই জাতে ওঠা যায়।

তসলিমা নাসরিনের কবিতা যখন ঢাকার কাগজগুলোতে টুকটাক প্রকাশিত হচ্ছিল এবং তা যখন দু’চারজন বড় কবির নজরে এসেছিল তখন তারা একে নিজেদের উন্নাসিক মানসিকতার জন্য আর দশজন ‘মফস্বল কবির’ মতো  তসলিমারও জাতে উঠবার প্রচেষ্টার বাইরে কিছু ভাবতে পারেননি।

সহসাই কবিতার পাশাপাশি তসলিমা লেখা শুরু করলেন কলাম। তবে এই কলামেও যখন তিনি তেমন সাড়া পেলেন না তখন নিজেকে এক ধরনের লাইমলাইটে নিয়ে আসবার কৌশল হিসাবে ইসলামের এমন সমস্ত বিষয়য়ের দিকে ইঙ্গিত করতে শুরু করেন, যা অচিরেই জনগোষ্ঠীর একটা বৃহৎ অংশকে তার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত করে তোলে। পাশাপাশি, তিনি এটাও মনে করেন যে নারী আন্দোলনের বিষয়টাকে চাঙ্গা রাখতে হলে তাঁকে সবসময়ই লাইম লাইটে থাকতে হবে, সেটা ইতি বা নেতি যেকোনওভাবেই হোক।

নারীবাদ আন্দোলনটা হতে হবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এই সমাজ ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সমতার সমাজ তৈরিতে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। এই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে নারীবাদ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকা প্রতিটি মানুষের। কিন্তু তসলিমা নাসরিনের লড়াইটা ঘুরে ফিরে পুরুষের বিরুদ্ধে গিয়েই দাঁড়াচ্ছে! যা অনেকটাই ব্যক্তি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই দেশে কেবল পুরুষরাই নারী স্বাধীনতার অন্তরায় নয়; পাশাপাশি নারীরাও আছেন। এরা পুরুষতন্ত্রের ধারক বাহক।

শুধুমাত্র পুরুষের বিরুদ্ধে লড়াই করলেই নারীবাদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ভাঙতে হবে পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা। আঘাত হানতে হবে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার প্রতি। পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা যে সঠিক নয়; সেটি ভুল প্রমাণ করে সকলের মাঝে সাম্যতার ঢেউ তুলতে হবে। অন্যথায় নারীবাদ আন্দোলন তথা সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার যে আশা আমরা করছি, সেটি অধরাই থেকে যাবে। কিন্তু বরাবরই তিনি নারী আন্দোলনের কথা বলে একদিকে পুরুষের বিরুদ্ধে নারীদের ক্ষোভের সৃষ্টি তৈরি অন্যদিকে ইসলাম বিদ্বেষী লেখা বা কথা বলে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেছেন। 

রাজধানীর পল্টনে ছেলের সাথে এক মায়ের ক্রিকেট খেলার কয়েকটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু মা আর সন্তানের খেলার ওই মুহূর্তটিকে ছাপিয়ে আলোচনা শুরু হয় ওই নারীর পোশাক নিয়ে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা কিশোরের বোলিংয়ে ব্যাট করছেন বোরকাপরা এক নারী। ওই নারীকে আউট করতে পেরে উল্লাসে আত্মহারা সেই কিশোর। কিশোরের আনন্দে সঙ্গী হতে তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছেন বোরকাপরা সেই নারী। এটা শুধু দেশীয় গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ থাকেনি। এটা কে পুরুষের বিরুদ্ধে নারীকে উষ্কে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ধর্মীয় ভাবে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তসলিমা নাসরিন। যেন নারীরা বোরকা পড়তে পারবে না কিংবা বাঙ্গালী নারী হয়ে কিভাবে বোরকা পড়ে ছেলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে।

বাংলাদেশী নারীদের বোরকা পড়া নিয়ে তসলিমার সমোলোচা নয় শুধু গত ফেব্রুয়ারীতে ভারতের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের কন্যা খাতিজা রহমান খাতিজা রহমানের বোরকা পরা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে বাকযুদ্ধের সূচনা করেছেন তসলিমা নাসরিন। তবে এবার এই আক্রমণের মুখে খাতিজা আর নিশ্চুপ থাকেননি, নিজেই শক্ত ভাষায় তসলিমা নাসরিনের আক্রমণের জবাব দিয়েছেন।

খাতিজার বোরকা এবং নেকাবে আবৃত মুখের ছবি টুইট করে তসলিমা লিখেছিলেন, "এ আর রহমানের সঙ্গীত আমি খুবই পছন্দ করি। কিন্তু যখনই আমি তার কন্যাকে দেখি, আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। একটি সংস্কৃতিবান পরিবারের শিক্ষিত নারীও যে এরকম মগজ ধোলাইর শিকার হতে পারে, সেটি খুবই পীড়াদায়ক।" তসলিমা নাসরিনের এই টুইট সাংঘাতিকভাবে ক্ষুব্ধ করে খাতিজা রহমানকে। তিনি এর উত্তরে ইনস্টাগ্রামে একের পর পোস্টে শক্ত ভাষায় তসলিমার আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছেন।

তসলিমা নাসরিন শুরু থেকেই ইসলাম বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করতেন। ইসলাম যেন তার শত্রু। ইসলাম আর নারীকে পুরুষের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে আলোচনায় থাকায় যেন তার একমাত্র অবলম্বন। 

বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক আহমেদ ছফা তসলিমা সর্ম্পকে লিখেছিলেন, "তসলিমা হল বাংলাদেশের দিকে ভারতের ছুড়ে দেয়া একটি স্যাটেলাইট, যার কাজ বাংলাদেশকে কালোভাবে চিত্রিত করা। "

তসলিমা তার বিভিন্ন লেখনিতে ইসলামের অপব্যাখা এবং মুসলিমদের জঘন্য হায়নার মত দেখানোর চেষ্টা করতেন এবং এখনো করার চেষ্টা করেন। এর জন্য তিনি ভারতের RSS ও হিন্দুত্ত্ববাদীদের কাছে খুবই জয়প্রিয়।

যে কারণে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হন এই বিতর্কিত নারী লেখিকাঃ

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামি ধর্মীয় আইন শরিয়া অবলুপ্তির মাধ্যমে কুরআন সংশোধনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর ফলে ইসলামি মৌলবাদীরা তার ফাঁসির দাবি জানাতে শুরু করে। তিন লাখ মৌলবাদী একটি জমায়েতে তাকে ইসলামের অবমাননাকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দালালরূপে অভিহিত করে।দেশ জুড়ে তার শাস্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে জনগণের ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয় এবং জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেসময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম সহ বিভিন্ন জনের আশ্রয়ে তিনি দুই মাস লুকিয়ে থাকার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার জামিন মঞ্জুর করা হয় এবং তসলিমা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনে ও ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানিতে বসবাস করেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুইডেন ফিরে গেলে রাজনৈতিক নির্বাসিত হিসেবে জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি লাভ করেন। এই সময় তিনি সুইডেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন ও সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই সময় তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশে ফেরার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হলে তিনি জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি ত্যাগ করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পান ও বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রুজু হলে তিনি পুনরায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

তসলিমা নাসরিনের এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে গণমাধ্যম কি দায় এড়াতে পারে?
এদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ কায়েম করা্র উদ্দেশ্যে বারংবার ব্যবহৃত হয়েছে সংবাদমাধ্যম। সে বিষয়ে আজ আর আলোচনা করব না। আজ আলোচনা করব একজন বিতর্কিত এবং নির্বাসিত লেখকের বিতর্তিক সব লেখা কিভাবে প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়। সংবাদ মাধ্যম একটি জাতির দর্পন। জনতার সুখ দুঃখের সঙ্গী। অথচ তসলিমা নাসরীনের মত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখা এদেশের মূল ধারার কিছু পত্র পত্রিকা বহুলভাবে প্রচার করছে। হ্যাঁ, এটা বলতে পারেন পত্রিকায় ছাপা না হলে কি তার লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসবে না, নিশ্চয়ই আসবে কিন্তু আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে এটা গণমাধ্যম কিভাবে ছাপা হয়। তাহলে কি এর  দায়ভার সেই পত্র পত্রিকা এড়িয়ে যেতে পারে? 
একজন নারী হিসেবে পুরুষতন্ত্রের বিপক্ষে আমি কিন্তু পুরুষের বিপক্ষে নয়। ধর্মীয় বিশ্বাস আমার আছে, কিন্তু অন্য ধর্ম নিয়ে কটূক্তি, অন্য ধর্মকে আঘাত করা এটা অপরাধ। তসলিমা নাসরিনের মত সমালোচিতরা উদ্দেশ্যে কায়েনের জন্য এসব কর্মকাণ্ড চালান, ধর্মীয় স্বাধীনতা কিংবা নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এরা নয়। এদেরকে রুখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একজন নারী হিসেবে আমার অনুরোধ বিষয়টি তিনি ভেবে দেখবেন। 

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে