Dr. Neem on Daraz
Victory Day

একটু পরপর আইসা দোকান তুইলা দেয়


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ কায়সার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০, ০৩:১১ পিএম
একটু পরপর আইসা দোকান তুইলা দেয়

ঢাকাঃ একদিকে পুলিশের যন্ত্রণা, আরেক দিকে নাই বেচাবিক্রি; একটু পরপর আইসা দোকান তুইলা দেয়, আবার আইসা বসি, এইরকম আর কয়দিন কে জানে?

দোহান সাজাই বসি আছি, চাইর ঘণ্টা ধইরা এক টেহাও বেচতে পারি নো। করোনা শুরু হইবার পর চার মাস গেরামে ছিলাম। কুরবানির ঈদের থেইকা সব দিনই বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। করোনার আগে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টেহার বেচা হইত। এখন বেচি এক-দেড় হাজার টেহা। এই টেহায় ঘর ভাড়া, খাওয়া-খরচ- নিজেরই চলে না। বাড়িত স্ত্রী-সন্তানের জন্য এখন আর টেহা পাডাইতাম পারি না।' রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তার পাশের পঞ্চাশোর্ধ্ব হকার শওকত মিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই তার দুঃখের কথা শোনালেন।


'সকাল থেইকা দোহান সাজাই বসি আছি, চাইর ঘণ্টা ধইরা এক টেহাও বেচতে পারি নো। করোনা শুরু হইবার পর চার মাস গেরামে ছিলাম। কুরবানির ঈদের থেইকা সব দিনই বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। করোনার আগে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টেহার বেচা হইত। এখন বেচি এক-দেড় হাজার টেহা। এই টেহায় ঘর ভাড়া, খাওয়া-খরচ- নিজেরই চলে না। বাড়িত স্ত্রী-সন্তানের জন্য এখন আর টেহা পাডাইতাম পারি না।' রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তার পাশের পঞ্চাশোর্ধ্ব হকার শওকত মিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই তার দুঃখের কথা শোনালেন।

সরেজমিন রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে হকারদের একই দুরবস্থা। ফুটপাতে, ভ্যানে করে পোশাক, ইলেকট্রনিক পণ্য, ইমিটেশন জুয়েলারি, ক্রোকারিজ, শরবতসহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন হকাররা। তবে নেই আগের মতো ক্রেতা। ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, হকারদের চালচলনেও এসেছে বৈচিত্র্য। বিভিন্ন বেশভূষায়, রং-ঢঙের মূল উদ্দেশ্যই হলো ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পণ্য বিক্রি করা।

কাউকে কাউকে গাড়ির চাকার মতোই শহরে অলিগলিতে ঘুরে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।

তবে তাদের কারও মনেই প্রশান্তির ছাপ নেই। কয়েকজন হকার জানান, করোনাকালে লকডাউনের সময় কর্মহীন হয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। সে সময় তারা সরকারি কোনো সাহায্যও পাননি। রাস্তায় থালা-বাটি নিয়ে অবস্থান করেও চাল-ডাল কিছু পাওয়া যায়নি।

আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তান ও ফার্মগেটে মানুষের চলাফেরা আগের মতোই স্বাভাবিক। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। হকারদেরও হাঁকডাক আগের মতো। কিন্তু নেই তেমন বেচাবিক্রি। ফুটপাতের অন্তত ২০ জন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউন শিথিলের পর তারা সবাই দোকান মেলেছেন, তবে বিক্রি আগের মতো নেই।

রাজধানীর গুলিস্তানে ভ্যানে করে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করছিলেন সালাউদ্দিন মিয়া। লকডাউনের শুরুতে তিনি গ্রামের বাড়ি বরিশালে চলে যান। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার। এত দিনের সব জমানো টাকা দিয়ে কষ্ট করে চলেছেন দুই মাস। পাননি করোনাকালীন কোনো সহায়তা। তার পর থেকেই ঋণ-ধার করে চলছেন। ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত ঋণ করেন ৪০ হাজার টাকা। ভেবেছিলেন, ঢাকায় এসে আবার ব্যবসা জমজমাট হলে ঋণ শোধ করতে পারবেন। কিন্তু আগের মতো আর নেই ব্যবসা। এখন নিজেই চলতে পারছেন না, বাড়িতে টাকা পাঠাবেন কী করে! কবে ঋণ শোধ করবেন, তাও জানেন না।

গুলিস্তানের ফুটপাতে প্যান্ট কিনতে আসা নির্মাণ শ্রমিক সোহেল বলেন, লকডাউনে কোনো কাজ ছিল না। ফুটপাতের দোকানপাটও বন্ধ ছিল। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যারা কাজ না করলে খাবার জোটে না, তাদের তো বড় দোকানে গিয়ে কিছু কেনার সামর্থ্য নেই। তাই অনেক দিন কোনো কাপড়চোপড় কিনতে পারিনি। ঢাকায় আসার পর বেতন পেয়ে বাড়িতে দিয়ে নিজের কাপড় কেনার জন্য সামান্য কিছু টাকা রেখেছি। তাই দিয়েই জামাকাপড় কিনতে এসেছি।

পল্টনে ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রি করেন রোকেয়া বেগম। স্বামী অসুস্থ থাকায় তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। করোনাকালে তার এই খাবার দোকান বন্ধ ছিল চার মাস। দুই সন্তান আর স্বামী নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। রাস্তায় ছিল না মানুষ, ছিল না তার বেচাকেনা। ঈদ-পরবর্তী সময়ে রোকেয়া আবার ব্যবসা শুরু করলেও প্রথম কিছুদিন গুনতে হয়েছে লোকসান। তবে এখন কিছুটা ভালো।
রোকেয়া বেগমের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে প্রতিদিন দুপুরের খাবার খান রিকশাচালক মো. তুহিন। তিনি বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ। আগের মতো রোজগার নাই। হোটেলে খেতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়। রোকেয়া আপার দোকান লকডাউনে অনেক দিন বন্ধ ছিল। তখন অন্য জায়গায় খেতে যেতাম। এখন আবার দোকান খোলায় আমাদের জন্য ভালো হইছে। এখানে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ভালো খাওয়া যায়।'

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, কমরেড সেকেন্দার হায়াৎ “আগামী নিউজকে” বলেন, করোনার ভয়াবহতা কমলেও হকারদের নিত্যদিনের রোজগার আগের মতো নেই। এখন হকাররা কোনোরকমে টিকে আছেন। তিনি বলেন, 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করে হকারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কথা বলেছি। এ ক্ষেত্রে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন। করোনার প্রভাব আরও কমলে এ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

আগামীনিউজ/এমকে

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে