Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনায় স্বস্তির জায়গা ছাদ বাগান


আগামী নিউজ | ম.শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২০, ০৮:০৯ পিএম
করোনায় স্বস্তির জায়গা ছাদ বাগান

সংগৃহীত ছবি

করোনা প্রাদুর্ভাবে জনমনে ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। সাধারণ ছুটি, লক ডাউনের এসময়ে স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন ছাদ বাগানে।  ফলে পাল্টে যাচ্ছে ঢাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি। কমেছে বাতাসে কার্বণডাই অক্সাইডের পরিমাণ।  যার ছোয়া লেগেছে রাস্তায় থাকা গাছের সারি, বাসার টব তবে বিশেষকরে, এই কংক্রিটের শহরে যে সুপ্তভাবে সবুজের বিল্পব ঘটছে।কিন্তু এ অলস সময়ে মানূষ বসে নেই। কেউ বাড়ির ছাদে  করেছেন সবজি বাগান, কেউ ফুল বাগান,  কেউ মিশ্র ফলবাগান, আবার অনেকে ছাদকে সাজিয়েছেন  নানান বাহারি গাছের সমারহে। 

ফলে, ছাদ বাগানগুলো একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভুমিকা রাখছে তেমনি করোনাকালে অলস সময়ে ঢাকা শহরের বাড়ীওয়ালাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে।আগে মানুষকে ক্যাম্পেইন করে জাগাতে হতো কিন্ত এখন দিন বদলে গেছে। অনেকেই নিজে ইচ্ছে করেই ছাদ বাগানে মনোনিবেশ করছেন, দিচ্ছন বাড়তি সময়, করছেন বাড়তি যত্ন- আত্মী।প্রায় চব্বিশ বছর আগে শখের বসে শুরু করা ছাদ বগান সর্ম্পকে ঢাকার মীরপুরের বাসিন্দা রাজিব আহমেদ,  সেই দুই যুগের ছাদ বাগান আজ আমাদের দৈনিন্দন কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।

ছাদবাগানের কার্যকারিতা বা উপকারীতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন,  এটা এককথায় বলা খুব কঠিন। আমার দৃষ্টিতে ইট কাঠ পাথরের এই দূষিত মহানগরে এক খন্ড সবুজ ছাদ বিশাল মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। আমাদের পরিবারের সবার প্রিয় ঠিকানা হলো এই ছাদ। ছাদে থাকা গাছ গাছাড়ির জন্য নানা প্রজাতির পাখি, ফরিং, প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় যা অন্য ধরনের সৌন্দর্য ছাড়িয়ে দেয়। আর ছাদ বাগানে উৎপাদিত টাটকা ও বিষমুক্ত শাকসবজি, ফলমূল খাওয়ার আনন্দের কথা না হয় বাদই দিলাম।

নানা উদ্ভিদ প্রজাতির মিলনমেলা আমাদের ছাদ বাগান। তিনি বলেন, এখানে মূলত ফল ও সবজির গাছই বেশী, ফুল  চাষের চর্চা একেবারে সীমিত। এখানে প্রায় চল্লিশ প্রজাতির বা রকমের ফল ও সবজির গাছ আছে। যেমন পেয়ারা একটা প্রজাতি, কিন্তু গাছের সংখ্যা সাতটি , অনেক টা এই রকম। বলা যেতে পারে ফলজ সশ্য ভান্ডার।

যদি সুযোগ থাকে তবে অবশ্যই গাছ লাগাতে হবে উল্লেখ করেন এই ছাদ প্রেমী৷ তিনি বলেন, গাছ লাগানোর বিষয়টা হকে হতে পারে বাসার আশপাশে, রাস্তার ধারে। যদি সে সুযোগ না থাকে তবে ছাদে অথবা বারান্দায়! এক চিলতে সবুজ মনে কি যে আনন্দ  এনে দিতে পারে, তা যার আছে, সেই বুঝতে পারে...!মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রেজাউল শেখ বলেন, শখের বশেই বাসার ছাদে একটি বাগান তৈরি করি। বাগানে বেগুন, চিচিঙ্গা, করলা, মিষ্টিকুমড়াসহ নানা ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আর বিষমুক্ত এসব সবজি খেতেও ভাল লাগে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) প্রেসিডেন্ট আকতার মাহমুদ বলেন, একটি নগরে খালি জায়গার অভাবে গাছপালার সংখ্যা খুবই কম। পরিবেশগতভাবে ২৫ শতাংশ সবুজ থাকা দরকার হলেও আছে আমাদের এখানে অনেক কম আছে। পাশাপাশি ঢাকা শহরে যে জনসংখ্যার চাপ সেই চাপ উপেক্ষা করে একটি পরিবেশ বান্ধব বাস উপযোগী শহর করা চ্যালেঞ্জ। কিন্ত ছাদ বাগান আমাদের সেই উপযোগীতার চ্যালেঞ্জটাকে নিতে শিখেছে।তিনি আশা করেন, প্রতিটা বাড়ীর মালিক যদি নিজের প্রয়োজনে  ছাদবাগান করে তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয় তেমনি গাছ বেশি হলে অক্সিজেন ছাড়ার ফলে মিনি কারখানায় অক্সিজেন ফ্যাক্টরীতে পরিণত হবে।

ঢাকা শহরে প্রায় ৫ লাখের মত বিল্ডিং আছে। এই বিল্ডিংগুলোর ৩০ শতাংশতেও ছাদ বাগান করতে পারি তাহলে এই মহানগরীর জন্য বড় ধর‍নের পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বায়ুমান গবেষক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্টামফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি মনে করেন, ছাদ বাগান করলে তিন ভাগে আমাদের উপকার করে। প্রথমতঃ ছাদের যে তাপমাত্রাটা নিচে নামার কথা ছিল তা নামতে বাঁধা দেয় ফলে টপ ফ্লোরে যারা থাকেন তাদের স্বস্থি হয়। বিল্ডিংয়ের তাপমাত্রা কমায়।  

দ্বিতীয়তঃ এই গাছগুলো অক্সিজেন সরবরাহ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ফলে বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব কমাতে ভূমিকা রাখে। 

তৃতীয়তঃ এটি আমাদের বিষমুক্ত খাবার সরবরাহ করে, নিজেরদের মধ্য সম্প্রতি বাড়ায় ও শিশুদের মানুষিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। কারণ ছাদ বাগানে কাজ করার সময় শিশুদের সাথে করে নিয়ে গেলে তারা সবুজ প্রকৃতি সম্পকে জানতে পারে আর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স গেজেট থেকে দূরে থাকে।

আগামীনিউজ/এসএআই/জেএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে