Dr. Neem on Daraz
Victory Day

লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৭৮


আগামী নিউজ | সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:০০ এএম
লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৭৮

মন সহজে কি সই হবা।
ডাবার পর মুগুর প’লে
তুমি সেইদিন গা টের পাবা;
চিরদিন ইচ্ছা মনে
আইল ডিঙ্গায়ে ঘাস খাবা॥
বাহার তো গেল চলে
পথে যাও ঠেলা পেড়ে
কোন দিনে পাতাল ধাবা
তবু তোমায় যায় না দেখি
তেড়া চলন বললোভা
সুখের আশ থাকলে মনে
দুঃখের ভার নিদানে
অবশ্যই মাথায় নিবা
সুখ চেয়ে সোয়াস্তি ভাল
শেষ কালে পস্তাবা॥
ইল্লতে স্বভাব হলে
পানিতে কি যায় রে ধুলে
খাজলতি কিসে ধুবা
লালন বলে হিসাবকালে
সকল ফিকির হারাবা॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা: প্রতিটি ব্যক্তিসত্তা তার সারাজীবন ভরে জ্ঞানের অভাবে বস্তু চিন্তায় মগ্ন থাকে। বস্তু চিন্তার মধ্যে সর্বক্ষণ নিজেকে মগ্ন রাখে। বস্তুর মধ্যে সে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। যৌবনকালে সারাটা মনজুড়ে থাকে নারী-পুরুষের মিলনের আশায়। তার এই মোহময় চিন্তা-ভাবনা এমনভাবে মনে গেড়ে যায় যে যখন তার যৌবন শেষ হয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় চলে এসেছে। পথ চলে ঠেলা পেড়ে। তখনো তেড়া চোখ দেখতে থাকে। তার দেহ সায় না দিলেও মনের মধ্যে যে ভাব রয়ে গেছে সেই ভাব তার মনকে পুলকিত করে। আমৃত্যু মনের এই ভাব শেষ হয় না।

মনের মধ্যে যে বস্তু ভাব চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে তাকে সহজে মোছা যায় না। বৃদ্ধ বয়সেও সে ভাব জাগ্রত হয়ে উঠে। কিন্তু যে ভাব গাঢ়ভাবে মনের মধ্যে চিরস্থায়ীভাবে গেড়ে বসে নাই সেই অভ্যাসটা চেষ্টা করলে মুছে ফেলা যায়।লালন বলে, বিভিন্ন সময় মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি অনেক ফন্দি-ফিকির করে। এই বিভিন্ন রকমের চাতুরীপনা শেষ কালে আর টিকে না। সব ফন্দি-ফিকির শেষ হয় এবং ব্যক্তির ভব জীবন সাঙ্গ হয়।

ব্যক্তি সুখের আশা মনে পোষণ করে এবং বস্তুময় সুখের আশা তার উপর বস্তুর প্রতি মায়া মোহ তৈরি করে। এই সুখ বস্তুগত। তাই যখন নিজের মধ্যে সুখের আশা করে তখন সেই আশা তাকে বস্তুময় করে তোলে। এই বস্তুময় আশা তাকে নেদানকালে অবশ্যই দুঃখে ফেলে দেয়। কোনো অবস্থায় সে দুঃখ থেকে মুক্তি পায় না।

তাই লালন সুখ ছেড়ে স্বস্তি ভালো হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন। বস্তুময় অবস্থা সুখের অবস্থা। যখন বস্তু চিন্তার ঊর্ধ্বে ওঠা যায় তখন তার মধ্যে বস্তুর ভার লাঘব হয়। বস্তুময় অবস্থা তাকে বস্তু ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল। বস্তু চিন্তা এখন তাকে সুখ থেকে স্বস্তিতে উপনীত করেছে। সুখ দেহগত ও বস্তুময় অবস্থা। এটাও এক জাতীয় দুঃখ। তাই বলা যায় সুখ একটা সূক্ষ্ম দুঃখ। তাই সুখ-দুখের ঊর্ধ্বে উঠে স্বস্তিতে অবস্থান করা একটা প্রকৃত জ্ঞানময় অবস্থান।

২৩-০৮-২০১৬ 

রাতঃ ৯:৩০

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে