ছবিঃ আগামী নিউজ
ঢাকাঃ ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহতায়ালা ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন।
তওহিদের পরে মোমেনদেরকে যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো- ঐক্যবদ্ধ থাকা।
ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন মোমেনের অপরিহার্য কর্তব্য।
ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনা করা ইসলামের নির্দেশনা।
এ সর্ম্পকে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, “হে মোমেনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে (ইসলাম) আঁকড়ে ধর (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’’। -সূরা আল ইমরান: ১০৩
ঐক্য সর্ম্পকে রাব্বুল আলামিন কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘’তোমরা সেসব লোকদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি”। -সূরা আল ইমরান: ১০৫
ঐক্য প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের আরও কিছু আয়াত হলো-
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং কখনো মুশরিকদের দলভূক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে, এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত”।-সূরা তাওবা: ৩১-৩২
“নিশ্চয়ই মোমেনগণ পরস্পর ভাই ভাই”।-সূরা হুজরাত: ১০
“এই যে তোমাদের জাতি, এতো একই জাতি, আর আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই দাসত্ব কর”।-সূরা তওবা: ৯২
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
“যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকর্ম করেছে পরম দয়াময় তাদের জন্য (পারস্পরিক) ঐক্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি করবেন”।-সুরা মারইয়াম : আয়াত ৯৬
ঐক্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারিমের এত নির্দেশনা থাকার পরও বর্তমানে মুসলিম সমাজের ঐক্যের অভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়। মুসলিম জাতি এক প্রাণ, এক দেহ- এই চেতনাবোধ দিনে দিনে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে। ইসলামে মোমেনদের পারস্পরিক সর্ম্পক ভ্রাতৃত্বের। এ সর্ম্পকের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ভের (তওহীদের) সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কেউ তার স্বীকৃতি দিবে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এই ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) জোর তাগিদ দিয়েছেন।
হজরত হারিছ আল আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘’আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে ওইগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংঘবদ্ধ, আমিরের নির্দেশ শ্রবণ, নির্দেশ পালন, হিজরত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে গেছে সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও? এর উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, সালাত কায়েম এবং রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও সে হবে জাহান্নামের জ্বালানী পাথর”। ’ –সুনানে তিরমিজি
হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘’যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে’’।-তিরমিজি
হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘’তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন কর, সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন-যাপন করো না, কারণ বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করলে শয়তানের কু-প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে’’।-আবু দাউদ ও ইবনে মাজা
হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘’মুমিনগণ অপর মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলে প্রবিষ্ট করেন’’।-সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘’যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু’’।-মুসলিম
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘’তিনজন লোক কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকলেও একজনকে আমির না বানিয়ে থাকা জায়েজ নয়”।-আহমদ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘’পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একটি অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে”।-সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘’মুমিনগণ একজন মানুষের মতো, যার চোখ আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আক্রান্ত হয়; আর তার মাথা আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আহত হয়”। -সহিহ মুসলিম
ঐক্য প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ মুসলিম মিল্লাত আজ শতধাবিভক্ত হয়ে কি জাহান্নামের জ্বালানি পাথর হতে চায়?(সংগৃহীত)
আল্লাহপাক সকলকে ঐক্যের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা অনুধাবন করে ‘তওহীদ’ এর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তওফিক দান করুন, আমিন।
আগামীনিউজ/এসএসআই