Dr. Neem on Daraz
Victory Day

তীব্র গরমে নষ্ট বোরো ধান


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৪:২৫ পিএম
তীব্র গরমে নষ্ট বোরো ধান

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রচণ্ড গরমে নষ্ট হয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। কিশোরগঞ্জেই ২৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত কৃষকের। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন তারা। অবশ্য কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়াসহ পরামর্শ দেওয়ার কথা জানায় কৃষি বিভাগ। বাগেরহাট হঠাৎ ঝড় ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খরা ও গরম বা তাসে ধান চিটা হয়ে গেছে।

বাতাসের তোড়ে কিছু ক্ষেতের ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। সম্প্রতি হঠাৎ গরম ঝড়ো হওয়ায় কৃষকদের ক্ষেতের ধান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পাশাপাশি অনাবৃষ্টিতে ধানের ফলন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় নয় উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অনাবৃষ্টি ও গরম ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৪২ হেক্টর জমির ধান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিতলমারী উপজেলায়। এ এলাকায় ২০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যথাসময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাত না হলে ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে। জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফলন্ত ধানের এমন ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা।

করোনা পরিস্থিতি তে আত্মীয়স্বজন ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বড় একটি অংশ। এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব না হলে জীবিকার জোগান দেয়া দূরের কথা ঋণ পরিশোধ করাই কঠিন হয়ে পড়বে এসব কৃষকের জন্য। কৃষি বিভাগ বলছে, ফের বড় ধরনের ঝড় না হলে এবং খরা কমলে কৃষকরা ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন । তাদের সংকট মোকাবেলায় সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কিশোরগঞ্জ একদিন আগেও মাঠের সবুজ ধানের সতেজতা দেখে বাড়ি গেছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা হাওরের কৃষক আলাউদ্দিন। কিন্তু গত ৭ এপ্রিল সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন, সবুজ স্বপ্ন ধূসরে রূপ নিয়েছে। শুধু আলাউদ্দিনই নয়, তার মতো আরো অনেক কৃষকেরই জমির ধান তীব্র গরম আবহাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণের টাকায় ফসল বুনে এখন লোকসানে তারা। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ১৩টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা কৃষি কর্মকর্তা মো. ছাইফুল আলমের।

নেত্রকোনা নেত্রকোনাতেও ঝড় ও গরম আবহাওয়ায় কয়েকটি হাওরের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা জানান, প্রচণ্ড গরমে মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী, বারহাট্টাসহ কয়েকটি এলাকার সবুজ ধান পুড়ে গেছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় এক লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমির ধান। সুনামগঞ্জ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৮ এপ্রিল রাতে উপজেলার জালধরা, কালিজানি, মেধাসহ বেশ কয়েকটি হাওরে এই শিলাবৃষ্টি হয়। এতে বাদশাগঞ্জ ও পাইকুরাটি, ধর্মপাশা ও সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচ হাজার কৃষকের জমির ধান শিলাবৃষ্টিতে জমিতে পড়ে গেছে। ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে পাট ও পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে।’ বাদশাগঞ্জ ইউনিয়নের গাভী গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘এক রাতের ৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টি আমাদের জমির পাকা ধান ঝরিয়ে ফেলেছে।

আমার মতো শত শত কৃষকের জমি শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টি কৃষকদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। জমির পাকা ধান এখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।’বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন না হলেও সাধারণ মানুষের কাছে বেশি পরিচিত নয়। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নেত্রকোনার তিনটি উপজেলা পরিদর্শন করেছেন ৬ এপ্রিল। এই দলে রয়েছেন ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নজমুল বারী, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিক ইকবাল খান এবং উদ্ভিদ শরীরতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান। নাজমুল বারী বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাড়া অথবা কমা—দুই কারণে হিটশক বা হিট ইনজুরি হয়ে থাকে। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে হিটশকের মাত্রা ধরা হয়।

আক্রান্ত এলাকাগুলোতে মার্চের শেষ দিক থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে।’তিনি বলেন, ধানের ফ্লাওয়ারিং স্টেজে (ফলনের প্রাথমিক পর্যায়) এটা ক্ষতি খুব বেশি করে। এ সময়কে সবচেয়ে ভার্নারেবল অবস্থা ধরি আমরা। আর এ দফায় গরম বাতাস এমন সময় হয়েছে, যখন ওইসব এলাকায় ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছিল। তাই ওইসব ধানের শীষ থেকে পানি বেরিয়ে গেছে। শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘হাওর এলাকায় পানি থাকলে এবং সূর্যের তাপ থাকলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে এবং বাতাসের গতি না থাকলে আমরা হয়তো ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করলাম, কিন্তু তাপমাত্রার অনুভব ৪০ ডিগ্রি সেলিসয়াসের বেশিও হতে পারে।

‘বাতাসে যদি জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭০ শতাংশের বেশি থাকে এবং বাতাসের গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারের কম থাকে, তখন আমরা যে তাপমাত্রা পরিমাপ করি না কেন, এর চেয়ে অনুভব তাপমাত্রা অনেক বেশি হবে। তখন মনে হয় গায়ে লু-হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। হাওর এলাকায় সেটা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি ফসলের জন্য ক্ষতিকর’—বলেন আবুল কালাম মল্লিক। আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, মনে হচ্ছে তাপমাত্রাটা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। ধান ফুল থেকে পুষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়ায় যে তাপমাত্রার দরকার ছিল, তার চেয়ে সেখানে বেশি ছিল বলে মনে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এটি একটি প্রভাব।’

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে