ছবি; সংগৃহীত
ঢাকাঃ আজ থেকে পূর্বাবস্থায় ফিরেছে অধিকাংশ গণপরিবহন। বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়া কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলতে দেখা গেছে। এর ফলে করোনার সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আজ মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুরসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে প্রথম দিনের কথা বলে কিছু কিছু পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। অনেক গণপরিবহনে দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মানতে অনিহা। এছাড়া বেশিরভাগ লোকাল বাসে স্প্রে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা ছিলো না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তায় বাসের সংখ্যা বেড়েছে। যাত্রীর সংখ্যাও বেশি। অনেক বাসের সব আসন পূরণ হতে দেখা যায়নি। আবার অনেক বাস অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে। বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। যাত্রাবাড়ীতে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বাসে যাত্রী সংখ্যা খুব বেশি না হলেও বেড়েছে। দু-একদিন না গেলে গণপরিবহনে যাত্রী কতটুকু বেড়েছে তা বোঝা যাবে না।
গুলিস্তান থেকে আসা আনিসুল হক বলেন, কথা ছিলো যত আসন তত যাত্রী নেবেন। কিন্তু লোকাল বাসগুলোর দরজার কাছে অনেক যাত্রীকে দেখেছি দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া বাসগুলোর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতাও রয়েছে যাত্রী তোলা আর ওভারটেক করার ব্যাপারে। যদি সব বাস একটি মালিক সমিতির অধীনে আনা হতো তাহলে ভালো হতো।
টেম্পু সার্ভিসের নিয়মিত যাত্রী কামরুন আকতার জানান, করোনার পর চালকের সামনে একজন এবং ভেতরে ১২ জনের জায়গায় ৬ জন যাত্রী নেয়া হতো। আজ সব আসনে যাত্রী ছিল। এমনকি দুই-একজন পেছনে দাঁড়িয়েও ছিল।
বিহঙ্গ পরিবহনের চালক সামছুদ্দিন বলেন, ‘আমরা আগের ভাড়াই আদায় করছি। কিন্তু কিছু কিছু যাত্রী সেই ভাড়াও দিতে চায় না। যে কারণে কারও কারও সঙ্গে ঝামেলা হয়। এছাড়া সিটের বাইরে কোনো যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। তারা জরিমানা করে দিচ্ছে।’
এদিকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে তা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, জনজীবনে করোনার প্রভাব এখন শেষ হয়ে গেছে এমন ভাবা যাচ্ছে না। আমরা জানি না কবে করোনার প্রভাব থেকে আমরা পুরোপুরি মুক্ত হবো। এ পরিস্থিতিতের মধ্যে গণপরিবহন পুনরায় আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়ার ফলে দু’জন করে বসে সংক্রামণ বাড়বে বলে আমরা ধারণা করছি। এখনও সময় রয়েছে গণপরিবহনে স্বাস্থবিধি যাতে ভালোভাবে মানা হয় তা নিশ্চিত করার।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যাত্রাবাড়ি জোন থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে পারে, তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিলে আমরা তা দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট টিমকে অবহিত করছি এবং তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্তদের জরিমানা করাসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা সব মালিককে চিঠি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কোনো বাসে দাঁড়িয়ে বা বর্ধিত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যদি কেউ এমন করে থাকে বা কোনো যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ আসে সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবহনের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।’
বিআরটিএ’র উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভাড়া মনিটরিংসহ পরিবহনের অন্যান্য অনিয়ম দেখতে নগরজুড়ে আমাদের বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। তারা এসব বিষয় দেখভাল করছেন। কেউ আইন ভঙ্গ বা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আগামীনিউজ/এএইচ