Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‘কারখানা খোলা-বন্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিভ্রান্তিতে জনস্বাস্থ্য জিম্মি’


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২০, ০৮:৪১ পিএম
‘কারখানা খোলা-বন্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিভ্রান্তিতে জনস্বাস্থ্য জিম্মি’

ঢাকা: করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে  ১১ এপ্রিল (পরবর্তীতে বেড়ে ১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত সরকারি ছুটির ঘোষণার মধ্যেই তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা যেভাবে শ্রমিকদের অমানবিকভাবে তাঁদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার লঙ্ঘন করে চাপেরমুখে কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য করেছেন তার তীব্র সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রোববার (৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, মালিকপক্ষের জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী এই অবিবেচনা প্রসূত স্বার্থপর আচরণে লাখ লাখ শ্রমিক এবং কার্যত গোটা দেশই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে।

মালিকদের হুমকিতে ‘চাকরি বাঁচাতে’ দূর-দূরান্ত থেকে লাখ লাখ শ্রমিক যেভাবে পায়ে হেঁটে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন তাকে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে সরকার ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিল। আগামী দুই সপ্তাহ সময়কে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করায় সরকার কর্তৃক সবাইকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যখন সব ধরণের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে, উৎপাদিত পণ্যও রপ্তানীর সুযোগ নেই বললেই চলে, পণ্য বা উপাদান যেখানে পচনশীল কিংবা জরুরী প্রয়োজনীয় বিবেচিত হওয়ার সুযোগ নেই, সেই পরিস্থিতিতে কারখানা খুলে দেবার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মস্থলমুখী করে, তাদের এবং কার্যত পুরো দেশকে কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়াটা চরম স্বার্থপরতা ও ষড়যন্ত্রমূলক ছাড়া আর কী হতে পারে! এর দায় কারখানা মালিক থেকে শুরু করে মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই এড়াতে পারে না।

ড. জামান বলেন, “করোনা-উদ্ভূত ঝুঁকিকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম এই খাতের পাশে দাঁড়ালেন, রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতনভাতা অব্যাহত রাখার জন্য নামমাত্র সার্ভিস চার্জে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করলেন, তার প্রায় ৮৫ শতাংশ এ খাতের। 

তারপরও এ খাতের নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ব্যাপক বৃদ্ধি করে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী অবস্থান নিলেন। শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য করা হলো, তাঁরা অমানবিক পরিশ্রম করে পায়ে হেঁটে দূর-দূরান্ত থেকে ফিরলেন। তারপর তীব্র সমালোচনার মুখে প্রায় মধ্যরাতে মালিকদের সংগঠন বিভ্রান্ত আহ্বান জানালো কারখানা বন্ধ রাখার। এই যে শ্রমিকরা এত কষ্ট করে, এত ঝুঁকি নিয়ে ফিরলেন, তাঁরা মধ্য রাতে কোথায় যাবেন সেটা কি একবারও ভেবেছেন মালিকপক্ষ? এদিকে আজও বেশ কিছু কারখানা খোলা রাখার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর কতোটা অমানবিক হবেন তাঁরা? আমরা ধারণা করেছিলাম রানা প্লাজার মতো অমানবিকতার মুখোমুখী আর কখনও এদেশকে হতে হবেনা। কিন্তু তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা প্রমাণ করে দিলেন যে, তাঁদের নিজেদের স্বার্থের সামনে শুধু শ্রমিকই নয়, পুরো দেশের কল্যাণ ও নিরাপত্তার কোনো অর্থ বহন করে না। রানা প্লাজায় ঝুঁকি নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও কর্মীদের কাজে যোগদানে বাধ্য করা হয়েছিলো, আজ করোনা-কোভিডের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিশ্চিত জেনেও তৈরি পোশাক মালিক ও তাদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ একই কাজ করল!  

ড. জামান বলছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক পোশাকশিল্প মালিককে উদ্ধৃত করে খবর বেরিয়েছে যে, সরকারের ঘোষিত তহবিল, অনুদান না হয়ে সহজ শর্তে ঋণ হওয়ায়, মালিকপক্ষ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। শ্রমিকের জানমালের নিরাপত্তা তথা পুরো দেশকে এভাবে জিম্মি করে দরকষাকষির হাতিয়ার বানানোর এই ঘৃণ্য পদক্ষেপের যথেষ্ট সমালোচনা করার মতো ভাষাও খুঁজে পাচ্ছিনা। সংশ্লিষ্ট খাতের ও অন্যান্য মন্ত্রী এবং 
জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই পোশাকশিল্প মালিক হওয়ার পরও তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, সরকারের ভিতরে নানা স্বার্থান্বেষী মহল কী এই জাতীয় দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে প্রকারন্তরে সরকারকেই জিম্মি করে অতিরিক্ত সুবিধা আদায়ে সক্রিয় রয়েছে? তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনীত অনুরোধ, এই স্বার্থান্বেষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিন।


আগামী নিউজ/সুমন/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে