Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‘বাংলাদেশে ২০টির বেশি টেলিভিশনের দরকার নেই’


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক ‌ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ০৫:৪৮ পিএম
‘বাংলাদেশে ২০টির বেশি টেলিভিশনের দরকার নেই’

একাত্তর টিভির কর্ণধার মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০টির বেশি টেলিভিশনের দরকার নাই। কিন্তু সরকার লাইসেন্স দিয়েছে ৪০টির। এতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এভাবে আমাদের শক্তি কমিয়ে ফেলা হচ্ছে।’

আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিসা) আয়োজিত ‘উগ্রবাদ রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’- শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘মূলধারার মিডিয়ায় ছাঁটাই চলছে। আবার সরকারের কাজ মিডিয়ার টুঁটি চেপে ধরা নয়, কিন্তু সত্য প্রচারেরও টুঁটি চেপে ধরা হয়। একটি নিউজ অন ইয়ার করা হলে সরকার থেকে বলা হচ্ছে, থামান। লাইনে লাইনে সংশোধন করতে হচ্ছে। আমাদের ওপর আস্থা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের সময় কোথাও ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়নি কেউ কি বলতে পারবে? কেন্দ্রে বিএনপি বা সরকারি দলের প্রতিপক্ষের এজেন্ট নেই, এটা লাইভ দেখাতে নিষেধ করা হলো, দেখানো যাবে না। কিন্তু আমরা যদি ওই এজেন্টকে খুঁজে বের করে দেখাই যে, সে বাসা থেকে বের হয়নি, কেন্দ্রে আসবে কীভাবে? এতে কি সরকার লাভবান হতো না? আজ আইপি-টিভি নিয়ন্ত্রণে নাই। অথচ আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে।’

জিটিভি ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘কোথাও জঙ্গি আটক বা গ্রেফতার হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জেহাদি বইসহ যোদ্ধা আটক হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করলে জঙ্গিবাদকে এক ধরনের উদ্বুদ্ধ করা হয়।’

সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মূলধারার মিডিয়াগুলো এখন আর ধর্ষণের শিকার নারীর ছবি প্রচার করে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিচয় ছাপা হয় না। এক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে।’

মাছরাঙ্গা টিভির হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, হলি আর্টিজানের সময় নিবরাসদের ৫ জনের হাসির ছবি অনেক মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে। সেটা ছাপা ঠিক হয়নি। একজন ওয়াজে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর সুনাম ও নারী নেতৃত্ববিরোধী কথা বলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেলেন।

এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে সরাসরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভূমিকা বাড়াতে হবে। পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার পর এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে পুলিশ কাউকে এমনকি এমপি-মন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিকেও ঢুকতে দেয়নি। আমাদেরও এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।’

এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম বলেন, ‘মিডিয়ার নিজেদের পক্ষ থেকে বেশি কিছু করার থাকে না। কারণ আমরা নানা সংকটে থাকি। সিটিটিসি যদি মিডিয়ার জন্য গাইডলাইন তৈরি করে তাহলে ভাল হতো।’

ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে গণমাধ্যমের স্থায়ী বোঝাপড়া থাকবে। জঙ্গিবাদ গবেষণা রাষ্ট্রীয় গবেষণার চেয়ে অগ্রসরমান, সেভাবেই তারা সামনে এগিয়ে যায়। বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুলে এখনো জঙ্গি রিক্রুট হচ্ছে। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও জঙ্গি রিক্রুট হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যেন ধর্মপ্রচার বন্ধ না হয়। গণমাধ্যমের চেয়েও বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।’

একুশে টিভির মোস্তফা মহসিন আব্বাস বলেন, ‘আমরা কোনো টেররকে হিরো বানাবো না? আমাদের বেসরকারি টেলিভিশন শিল্পের বয়স মাত্র ২০ বছর। এটা খুবই কম সময়। আমাদের এই শিল্পের নীতি নির্ধারণ নিয়ে এখনো পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।’

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য অনেক ঝুঁকির দিকে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা উন্নতির দিকে। ২০১৭ সালের গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্সে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ঝুঁকির তালিকায় ১৯ নম্বরে ছিল, ২০১৮ সালে কমে ২৫ নম্বরে আসে এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৩১ ধাপে উন্নীত হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান এই ঝুঁকির তালিকায় ১০-এর ভেতরে রয়েছে। পশ্চিমা অনেক দেশের চেয়ে আমাদের ঝুঁকি কম।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সহিংস উগ্রবাদ দমনে সুনির্দিষ্ট কোনো স্ট্রাটেজি নাই। এটা করতে সময় লাগে। তবে আমরা কাউন্টার ভায়োলেন্স এক্সট্রিমিজম (সিভিই) করতে যাচ্ছি। দু’ভাবে আমরা কাজটা করছি, প্রথমত জেনারেল অ্যাপ্রোচ এবং দ্বিতীয়ত ভালনারেবল অ্যাপ্রোচ। সেজন্য আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলছি। ১৫-৩০ বছরের ছেলেরা সবচেয়ে বেশি উগ্রবাদে জড়াচ্ছে। এসব ভালনারেবল গ্রুপকে মোটিভেট করতে তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করছি। একই সঙ্গে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরের লোক মনে করে- বাংলাদেশের রাস্তায় বের হলে জঙ্গিরা চাপাতি দিয়ে কোপানো শুরু করে। বাস্তব অবস্থাটা গণমাধ্যমকেই প্রচার করতে হবে। যারা অভিযান চালাবে তাদের স্বচ্ছতা থাকতে হবে। মিডিয়া হাউজের সোশ্যাল রেসপন্স রয়েছে। এটা বাড়াতেই সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে আজকের এই আয়োজন।’

আগামীনিউজ/কামরুল/নুসরাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে