Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


আগামী নিউজ | সাহিত্য ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১, ১১:০৪ এএম
কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক-কে বলে তা বহুদূর- মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক-মানুষেতে সুরাসুর।’ অমর কবিতাটির লেখক কবি শেখ ফজলল করিম। বর্তমান বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত সকলেই ছোটবেলায় এই কবিতাটি নিশ্চিয় পড়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সেই কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।

এই সুফিসাধক কবি শেখ ফজলল করিম লালমনিরহাটের কাকিনায় ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। শত বছর আগে তার লেখা কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনীগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজগঠনমূলক তত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতিকথাচরিত গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

শেখ ফজলল করিম তৎকালীন রংপুর জেলা, যা বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম সাল ও তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মো. আব্দুল কুদ্দুস সম্পাদিত ‘শেখ ফজলল করিমের কবিতা’ বইয়ে কবির জন্ম তারিখ ১৮৮২ সালের ৯ এপ্রিল উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ কবির জন্ম তারিখ ১৮৮৩ সালের ১৩ এপ্রিল উল্লেখ করেছেন।

কবি শেখ ফজলল করিমের বাবা আমীর উল্লাহ্ সরদার কাকিনা মহারাজার বিশ্বস্ত রাজ কর্মচারী ছিলেন। তার মায়ের নাম কোকিলা বিবি।

শেখ ফজলল করিম ৪/৫ বছর বয়সে কাকিনা মিডল ইংলিশ স্কুলে, যা বর্তমানে কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়— সেখানে ভর্তি হন। ‘বঙ্গপুর দিক প্রকাশ’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হরশঙ্কর মৈত্রেয় কবির বাল্য শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৮৮৯ সালে মিডল ইংলিশ পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু নানা কারণে তিনি সেখানে বেশিদিন পড়তে পারেননি। বলতে গেলে তখন থেকে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটলে ১৮৯৬ সালে কবি শেখ ফজলল করিম পাশের গ্রামের বসিরন নেছা খাতুনকে মহিলাকে বিয়ে করেন। আর এভাবেই অল্প বয়সে কবি সাংসারিক জীবনে জড়িয়ে পড়েন।

১৯০১ সালে কবি শেখ ফজলল করিম ‘মেসার্স এমভি আপকার কোম্পানিতে’ ২০ টাকা বেতনে চাকরি করেন। ১৯০২ সালে ‘এক্সট্রা এসিস্টেন্ট ম্যানেজার’ হিসেবে পদোন্নতি পান। কিন্তু এর অল্প কিছুদিন পরে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

কবি শেখ ফজলল করিম খুব অল্প বয়স থেকে সাহিত্য সাধনায় নিমগ্ন হন। তিনি অল্প বয়সে ‘সরল পদ্য বিকাশ’ শিশুপাঠ্য কবিতার বই রচনা করেন। তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পাঠ এবং নানা প্রবন্ধ ও কবিতা লিখে সময় কাটাতেন। তিনি রাতে ঘুমটুকু বাদে সবটা সময় ইবাদত-বন্দেগি ও লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকতেন। সেই সময় তিনি কাকিনা থেকে ভালো মানের পত্রিকা প্রকাশের প্রত্যাশায় নিজের সঞ্চিত দেড় সহস্রাধিক টাকা ব্যয়ে কাকিনায় ‘সাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস্’ নামে ছাপাখানা স্থাপন করেন। সেখান থেকে ‘বাসনা’ নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। পত্রিকাটি ১৯০৮ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ওই ছাপাখানা থেকে ‘জমজম’, ‘কল্লোলিনী’ ও ‘রত্নপ্রদীপ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি ‘রংপুর সাহিত্য পরিষদ’-এর আজীবন সদস্য ছিলেন।

কবি শেখ ফজলল করিমের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ৩৯টি গদ্যগ্রন্থ ও ৬টি কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। তিনি বেশ কিছু জীবনীগ্রন্থ ও ইতিহাসগ্রন্থ রচনা করেছেন। তার অন্যতম গদ্যগ্রন্থগুলো হলো- ‘ছামৌতত্ত্ব’, ‘লাইলী-মজনু’, ‘পথ ও পাথেয়’, ‘চিন্তার চাষ’, ‘মাথার মনি’, ‘বেহেস্তের ফুল’ ইত্যাদি। কাব্যগ্রন্থসমূহ হলো— ‘তৃষ্ণা’, ‘পরিত্রাণ কাব্য’, ‘ভগ্নবীণা’, ‘ভক্তি পুষ্পাঞ্জলী’ ইত্যাদি। জীবনী গ্রন্থগুলো হলো— ‘হযরত রাব্বানী সাহেবের জীবনী’, ‘বিবি খোদেজার জীবনী’, ‘বিবি ফাতেমার জীবনী’, ‘বিবি রহিমা’, ‘বিবি আয়েশার জীবনী’, ‘হযরত আব্দুল কাদের (রহঃ)-এর জীবনী’, ‘আমার জীবন চরিত’ ইত্যাদি। ইতিহাস গ্রন্থগুলো হলো— ‘আফগানিস্তানের ইতিহাস’, ‘আল হারুণ’, ‘রাজা মহিমা রঞ্জনের পশ্চিম ভ্রমণ’ ইত্যাদি। এছাড়াও তাঁর কয়েকটি গদ্যনাটক, গীতিকাব্য, উপন্যাস, নাট্যকাব্য ও শোকগাঁথা রয়েছে।

কবি শেখ ফজলল করিম সেই সময় সমগ্র ভারতের বিভিন্ন বাংলা সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯২০ সালে ‘নীতিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ১৯২৩ সালে ‘নদীয়া সাহিত্য সভা’ প্রদত্ত ‘সাহিত্য বিশারদ’ উপাধি লাভ করেন। তাকে ‘কাব্যভূষণ’ উপাধিতেও ভূষিত করা হয়।

কবি শেখ ফজলল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কাকিনায় মারা যান। জন্মভিটা কাকিনায় তার সমাধি সৌধ রয়েছে। তার স্মৃতিকে অম্নান করে রাখার জন্য লালমনিরহাট পৌরসভা এলাকায় কালেক্টরেট মাঠের পূর্বপাশে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ ফজলল করিম শিশু নিকেতন ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। (কবির পরিবার, নিকত্মাীয়, বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে তথ্য সংগৃহীত)

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে